নিমতার তমাল এর বক্তব্য দেখে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো

নিমতার তমাল এর বক্তব্য দেখে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো। আমার চাকরি জীবনের প্রথম দিকের কথা ১৯৮৯ এর। আমরা যে ঘরটাতে থাকতাম সেখানে থাকবার জন্য এলেন যিনি SUCI এর মেম্বার ছিলেন এবং তার জন্য জেল ও খেটেছেন। এতটাই এক্টিভ মেম্বার ছিলেন যে চাকরি বাকরি করেননি, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতেন তারপর যখন ৩৫ পেরিয়ে গেছে, বাড়ির থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দিল্লি পাঠিয়েছে চাকরি করতে। সেটাও এক পরিবারের মাধ্যমে যাদের একটি মেয়ে আছে যার বিয়ে হচ্ছেনা, চোখে হাই পাওয়ারের চশমার জন্য, শর্ত ছিলো যে ওনারা চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন, যদি উনি চাকরি তে স্থায়ী হন তো উনি ওই মেয়েকে বিয়ে করবেন। তো তিনি এলেন, এসে বেশ সুগন্ধ যুক্ত নারকেল তেল মেখে স্নান করে লুঙ্গি পড়ে আমাদের তাঁদের সংগ্রামী জীবনের কথা শোনাতে লাগলেন। তার পর উনি চাকরিতে ঢুকলেন। ঢুকেই খাবি খেতে লাগলেন কারণ সংগ্রাম করা আর চাকরি করা এক না। সাধারণ জিনিস উনি বুঝতে পারেননা, যেটা ওনার কাছে অসাধারণ লাগে সেটাই বাকিদের কাছে অতি সাধারণ ব্যাপার। সুপারভাইসর একদিন বলেই বসলো ‘তু ইতনাদিন কিয়া ক্যা ?’ উনি আবেগপ্রবণ হয়ে ইনকিলাব জিন্দাবাদ বলে ফেলছিলেন একটু হলেই, চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে আর বলেন নি। যাই হোক, প্রথম মাসের মাইনে হাতে পেয়েই ওনার মনে হলো যে উনি এখন অন্য লেভেলে উঠে গেছেন কাজেই ওই মেয়েকে বিয়ে করা যাবেনা। যারা চাকরি দিলো, তারা যথেষ্ট মনঃক্ষুণ্ণ হলেও উনি পাত্তা দিলেন না। এরকম করে বেশ কয়েক বছর কাটলো, তারপর উনি ঠিক করলেন বিয়ে করবেন।
এবার শুরু হলো আসল খেলা। হঠাৎ করে ওনার মনে হলো যে ওনাকে ‘মানুষ’ করতে ওনার বাবা মায়ের অনেক খরচ হয়েছে, মেয়ে পক্ষের উচিত সেই খরচ বহন করা কারণ মেয়েকে তো ‘মানুষ’ করতে হয়নি, আর তাছাড়া উনি দয়া করে একটি মেয়ের ভরণ পোষণের ভার নিচ্ছেন, সারা জীবন বসে খাওয়াতে হবে, তো এই একটাই সময় কিছু হাতিয়ে নেওয়ার সেটা উনি ছাড়বেন কেন ? আমি বললাম যে আপনি না SUCI করতেন, আপনার কাছে অনেক বড়ো বড়ো বুলি শুনেছি, আপনার কাছ থেকে তো এটা আশা করিনি। তো উনি বললেন যে ‘আমাকে বড়ো করতে আমার বাবার খরচ হয়নি ?’ আমি বললাম ‘আপনার হবু বৌ কে বড়ো করতে তার বাবার খরচ হয়নি ?’ উনি বুঝলেন এখানে বলে লাভ নেই তাই চুপ করে গেলেন।
যথা সময়ে ওনার বিয়ে হলো এবং বৌদি কে নিয়ে উনি এলেন আমাদের সঙ্গে দেখা করাতে। আমরা এমনিতেই ওনার পেছনে লাগতাম, এবার বললাম যে বিয়েতে তো খাওয়ালেন না, অন্ততঃ সিঙ্গারা খাওয়ান। উনি গেলেন সিঙ্গারা আনতে, আমি বৌদিকে জিজ্ঞেস করলাম দাদা কত নিলেন ? উনি বললেন ‘৫০,০০০ ক্যাশ, তার সঙ্গে গয়না, আসবাব পত্র। ফুলশয্যার রাতেও বলছিলো তোমার দাদাকে বলো একটা প্রেসার কুকার দিতে, দাদাকে বলাতে দাদা বলেছে সেটা ওই ৫০,০০০ থেকে কিনে নিতে।’
সেদিনের পর থেকে আর কোনো কিছুতেই অবাক হইনা।

অঞ্জন দত্তগুপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.