প্রেম শরীর লোভ পাপ বাস্তব অবাস্তব ; এ এক মরীচিকার জগত!

প্রেম স্বভাবতই অন্ধ তাই উচ্চশিক্ষিত সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাবুলিওয়ালা জানবাজ খানের শারীরিক আকর্ষণে পতঙ্গের মতো পুড়ে গিয়েছিল! বয়সটাই তেমন যখন যুক্তি বিবেচনার উর্ধে রোম্যান্টিসিজম আর শরীর প্রাধান্য পায়। আমরা অহরহ এমন প্রেম ও তার পরিণতি দেখতে পাই।
প্রসঙ্গ ক্রমে আমার মায়ের এক ছাত্রীর সদ্য কলেজে ওঠা দিদিটি প্রেমে পড়েছিল পাড়ার এক জেরক্স এর দোকানের এইট পাশ কর্মচারীর। বাড়িতে জানাজানি হবার পর তাকে মামার বাড়ি বর্ধমানে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং সম্বন্ধ দেখা শুরু হয়। দোকানের মালিককে বলে ছেলেটিকে ধমক ধামক দেওয়া হয়। প্রায় মাস সাতেক পরে তার বিয়ে পাকা হবার পর তাকে নিয়ে আসা হয়। মেয়েটি যে ভুল করেছিল স্বীকার করে এবং বাড়ির বিশ্বাস অর্জন করার কিছুদিনের মধ্যেই বাড়ি ছেড়ে পালায়। ছেলেটিকে বিয়ে করে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায়য় এক গন্ড গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে চলে যায়। এক বছর বাদে তার একটি মেয়ে হবার পর সে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে যোগাযোগ করে কান্নাকাটি করে, কন্যা সন্তানকে ঘরে তুলবেনা বর শ্বশুরবাড়ি। বাচ্চাটিকে যেন তার মা নিয়ে গিয়ে মানুষ করে।
মেয়েটির মা মেয়েটিকে সন্তানসহ চলে আসার কথা বললে সে রাজী হয়নি। তার বক্তব্য, আমি খুব সুখি ওর সঙ্গে, আমি ওকে ছাড়তে পারবোনা।
প্রসঙ্গত, মেয়েটির শরীর একেবারে ভেঙে গেছিল। সারা গায়ে খোস পাঁচড়া…! তার মা তাকে দেখে শিউরে উঠেছিলেন। মেয়েটি জানায় পুকুরের জলে স্নান করতে হয় তাকে। এই জল থেকেই বারেবারে তার চর্মরোগ হয়।
মেয়েটি গ্রামেই ফিরে যায় সন্তানকে মায়ের হাতে তুলে দিয়ে।
যৌনতা যে এক্ষেত্রে বড় আকর্ষণ অস্বীকার করার উপায় নেই। মেয়েটির কলেজ জীবন সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার দিন শেষ। তারা দুই বোনই গোখেল মেমোরিয়াল স্কুলের ছাত্রী। মেয়েটি গোখেলেই ভর্তি হয়েছিল কলেজে। কিন্তু সে পর্বের সমাপ্তি সেইখানেই।
ভালোবাসা আসলে আমাদের বাস্তব ধারণা থেকে অনেকটা সরিয়ে নিয়ে এক সিনেমাটিক জগতে নিয়ে ফেলে।
সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিয়ের পর আফগানিস্তানে যায় এবং তার বই পড়ে মোটামুটি সকলেই জানি আফগানদের আর্থ সামাজিক পারিবারিক কাঠামোটি কতখানি অন্ধকারে ঢাকা। মেয়েরা সেখানে যৌন দাসী সেবাদাসী ছাড়া আর কিছুই নয়। এক বিছানায় তিন চারটি বিবি নিয়ে স্বামী রাত্রিবাস করে যে সমাজে তা কতখানি অশিক্ষা আর নোংরামিতে পূর্ণ সে বলাই বাহুল্য। লেখাপড়ার আলো ঢোকেনি সে সমাজে। খাওয়া আর যৌনতাই জীবন। মেয়েরা অত্যাচারকেই স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছে। এভাবেই বছরের পর চলে। কাবুলিওয়ালা স্বামীরা ভারতে ও অন্য দেশে রোজগারের জন্য বেরিয়ে পড়লে পরিবারের অন্য পুরুষদের ভোগ্য হয় ঘরে থাকা নারী। এটাই নিয়ম। সেই পরিবারে সুস্মিতা দীর্ঘ কয়েকবছর কাটিয়ে বারবার পালাতে চেয়েও ধরা পড়েছিল। শেষবার পালিয়ে আসে। জানবাজের সঙ্গে আবার সংসার করে। কিন্তু এই প্রজাতির রক্তে প্রতিশোধ স্পৃহা। জানবাজ আবার তাকে বুঝিয়ে দেশে নিয়ে যায়। এবং সুস্মিতা আর ফেরেনি! ফিরতে পারেনি। পরিবারের হাতেই খুন হয়ে যায়।। পরিবার থেকে বলা হয় তালিবানরা তাদের ওপরেও অকথ্য অত্যাচার করে সুস্মিতাকে মেরে ফেলেছে!
কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সুস্মিতা ফেসবুকের মাধ্যমে দিল্লীর এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল এবং তার পালানোর সব ব্যবস্থা তৈরি ছিল। ওই ব্যক্তি এয়ারপোর্টে তাকে নিতে আসবে বলেও কথা হয়। কিন্তু এই চ্যাট গুলো তার আফগান দেওর দেখে ফেলে! তার পরিণতি হয়েছিল মর্মান্তিক।
কলকাতার এমন কত মেয়ে যে আফগান পাঠানদের সুদর্শন চেহারায় মুগ্ধ হয়ে আফগানিস্তানে পচে গলে মরছে তা সুস্মিতার লেখায় পাই।
আজ আরেকটি ঘটনা আবার সামনে এসেছে।
বেহালার মেয়ে সঙ্ঘমিত্রা সারান প্রদেশে আটকে আছে পুত্র সহ! হ্যাঁ সুস্মিতার মতো প্রেমের টানে দুর্গম পাহাড়ি আফিগানিস্তানে চলে গেছিল সে স্বামীর সঙ্গে! বিয়ের চার বছরের মাথায় প্রভূত অত্যাচার শেষে স্বামী পালিয়েছে। সঙ্ঘমিত্রা এখন ছেলে আরবাজকে নিয়ে একা ভীত সন্ত্রস্ত দিন কাটাচ্ছে। তার বাড়ির চারপাশে তালিবানি জঙ্গীরা টহল দিচ্ছে। তারা তার কিশোর পুত্রকে জঙ্গী গোষ্ঠীতে নিয়ে নিতে চায়! সে জানেওনা আর দেশে ফিরতে পারবে কিনা কোনোদিন। তার বৃদ্ধ বাবামাকে ঈশ্বরের শরণাপন্ন হতে বলেছে সে শুধু!

আমরা আসলে শিক্ষা নিইনা। সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের পরিণতি দেখেও অন্ধ হয়ে যায় প্রেম! বয়সটাই বোধহয় শরীরের কাছে অবাস্তব রোম্যান্টিসিজমের কাছে হার মানার বয়স নাহলে শিক্ষা রুচি কালচারের বিস্তর ব্যবধানের পরেও কেন প্রেমে পড়ে মানুষ! তার দুচোখে তখন মায়া অঞ্জনি! সে ভাবে ওর ভুল হয়েছে, আমার প্রেমিক মজনু,আমি প্রেমে ডুবে যাবো… এক অলীক স্বপ্নের জগতে ভাসতে ভাসতে একদিন কঠিন বাস্তবের মাটিতে যখন আছড়ে পড়ে তখন শরীর মন ভেঙে শত টুকরো!

(হ্যাঁ এই জানবাজকে আমি দেখেছিলাম একবার। আমাদের এক বন্ধু পরমা ঘটকদের বন্ধু মহলে তার যাতায়াত ছিল। সুস্মিতার মৃত্যুর পর সে নাকি নাকে কান্না কেঁদেছিল কয়েকদিন তারপর দেশে ফিরে যায়) ।
প্রেম শরীর লোভ পাপ বাস্তব অবাস্তব ; এ এক মরীচিকার জগত!

প্রার্থনা করি সঙ্ঘমিত্রা দেশে ফিরে আসুক কিশোর পুত্রকে নিয়ে অক্ষত অবস্থায়।

কাবেরী রায়চৌধুরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.