শুনবেন এক প্রতারণার কাহিনী ?সরকারি প্রতারণা

শুনবেন এক প্রতারণার কাহিনী ?

সরকারি প্রতারণা ।

নির্বাচন এলেই সরকারের মনে পড়ে এ রাজ্যে প্রচুর বেকার আছে, শিক্ষিত বেকার আছে এবং তাদের পেট আছে, পরিবার আছে ।

২০১৯ সালে ঠিক লোকসভা নির্বাচনের আগের ঘটনা বলি । মুখ্যমন্ত্রী নিজে যে দফতর চালান সেই স্বাস্থ্য দফতর ওয়েস্ট বেঙ্গল হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে ১৪ই ফেব্রুয়ারি,২০১৯ ঘটা করে বিজ্ঞাপন দিয়ে ঘোষণা করে রাজ্যে ৮১৯ জন ফেসিলিটি ম্যানেজার নেওয়া হবে বিভিন্ন হাসপাতালে ( বিজ্ঞাপন নং R/F. mgr/62.1/2019 ) ।

ফেসিলিটি ম্যানেজার মানে ওয়ার্ড মাস্টার । ঘটা করে মমতার স্বাস্থ্য দফতর নামকরণ করেছেন ফেসিলিটি ম্যানেজার । এই বিজ্ঞাপন প্রকাশের আগে মমতা নবান্ন থেকে এই ঘোষণাটি করেন এবার লোক নেওয়া হবে হাসপাতালে । আর ঠিক তারপর বাংলার ঢোল বাজানো এই সময়, বর্তমান, আনন্দবাজার ঢালাও প্রচার দেয় হাসপাতালে এই কর্মসংস্থানের ।

প্রচুর উদ্দীপনাও হয় শিক্ষিত ছেলেদের মধ্যে । এই বাজারে ৮১৯ জনের চাকরি ! তাও আবার সরকারি চাকরি ! নবান্ন থেকে দিদি বলেছেন । দেখে কে !

মাইনে কত ? বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয় ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা ।

শিক্ষাগত যোগ্যতা কি – গ্রাজুয়েট হলেই চলবে ।

বয়স কত ? – বিজ্ঞাপনে জানানো হল ১ লা জানুয়ারি ২০১৯ এর মধ্যে ৩৯ বছর হলেই চলবে ।

কথা মত বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হল ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ । ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চাকরি প্রার্থীদের জমা দিতে বলা হল আবেদন শুধু অনলাইনে । স্বাস্থ্য দফতরের খবর – প্রায় সোয়া তিন লক্ষ শিক্ষিত বেকারদের আবেদন জমা পড়েছিল দফতরে । এই বেকারত্বের যুগে যেটা খুব স্বাভাবিক ।

সেদিন বিজ্ঞাপনে কি লেখা ছিল ভালো করে পড়ে দেখুন ।

Candidates must submit online the application fee amounting to Rs. 160/- only through GRPS (Govt Receipt Portal System)Govt of West Bengal under the Head of Account ‘0051-00-104-002-16’

পরের প্যারায় লেখা ছিল No application shall be considered unless accompanied with the requisite application fee.

সোয়া তিন লাখ আবেদনকারীর কাছ থেকে মাথা পিছু ১৬০ টাকা নেওয়ার ফলে সরকারের ঘরে ওঠার কথা কত ? হিসেব বলছে প্রায় সোয়া ৫ কোটি । শিক্ষিত বেকারদের কাছ থেকে সরকার আদায় করল এই টাকা ।

২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন এল, চলেও গেল ।

এরপর আবেদনকারীদের ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন শুরু হল, শেষও হল । ২০১৯ ঘুরে ২০২০ এল । উচ্চমাধ্যমিক এবং স্নাতক স্তরের নম্বরের ভিত্তিতে সোয়া তিন লাখের মধ্যে ১৬ হাজার ৩৮০ জনকে বাছাই করে বলা হল এবার তাদের লিখিত পরীক্ষা কিম্বা মৌখিক পরীক্ষা হবে । এবং তারপর ৮১৯ জন ফেসিলিটি ম্যানেজার তার মধ্যে থেকেই শেষে নিয়োগ হবে ।

সেই পরীক্ষা, সেই নিয়োগ আজও হয়নি । মধ্যিখান থেকে ২০১৯,২০২০ চলে গেছে । ২০২১ও প্রায় শেষ হতে চলল । তিন তিনটে বছর, প্রায় ৩০ টা মাস চলে গেল । একজনও আজ পর্যন্ত চাকরি পেলেন না হাসপাতালে ।

অনেকগুলো প্রশ্ন মনে এল, যার উত্তর খুঁজছি ।

১). ২০১৯ এর শুরুতেই যদি ৮১৯ জন ওয়ার্ড মাস্টারের পদ ফাঁকা থাকে এবং সেখানে তিন বছর ধরে নিয়োগ না হয়ে থাকে তাহলে সেই গুরুত্বপূর্ন কাজগুলো এখন চালাচ্ছে কে ?

২). এই তিনবছরের আরও অনেকে অবসর নিয়েছেন । তাহলে সেখানেই বা কারা চালাচ্ছেন ?

৩). মাথা পিছু ১৬০ টাকা করে সোয়া তিন লাখ পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরকার যে সোয়া ৫ কোটি টাকা ঘরে তুললো সেটি দিয়েই বা কি কাজ হল ?

৪). মাসে ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা মাইনে হবে বলে প্রচার করে, কাউকে চাকরি না দিয়ে ঠিক কাদের ঠকাল স্বাস্থ্য দফতর ?

৫). যে প্রাথমিক ভাবে ১৬ হাজার ৩০০ জনকে নম্বরের ভিত্তিতে বাছাই করে রাখা হয়েছে সেই তাঁদের নাম আর উচ্চ মাধ্যমিক, গ্র্যাজুয়েশনের নম্বর প্রকাশ্যে আনতে পারবে স্বাস্থ্য দফতর ?

৬). আড়াই বছরে ৮১৯ জনকে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার যে স্বাস্থ্য দফতর নিয়োগ করতে পারলো না তারাই আবার ৬৩১৯ জন নার্স নিয়োগের প্রচার শুরু করেছে কোন মুখে ?

শিক্ষিত বেকারদের সঙ্গে চাকরি নিয়ে রসিকতা করাটা কি অভ্যাস করে ফেলেছে সরকার ?
মমতা, মুখ্যমন্ত্রী পি জি তে বসবেন সপ্তাহে এক দিন তিন ঘণ্টা, এই সংবাদ কোন কাগজ কতটা উচ্ছাস নিয়ে লিখবে তার কম্পিটিশন চলছে । ওদিকে বিজ্ঞাপন দিয়েও তিন বছরে কেন নিয়োগ হয়নি, এই প্রশ্ন করবে কোন সংবাদপত্র ? কেন সোয়া তিন লাখ শিক্ষিত বেকার যুবক প্রতারিত হল একটা সরকারের কাছে কেউ প্রশ্ন করবে ?

কেন সংবাদপত্র মানুষের কেনা এবার বন্ধ করা উচিত সেটা তারা নিজেরাই জানান দিচ্ছেন না কি ।
কি বলেন পাঠক ?

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.