ভূতুড়ে ব্যাপার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। আগে সেন্ট্রাল প্যাথোলজি ল্যাবরেটরিতে রোগীর নমুনা জমা পড়ত প্রায় ৭০০। চাপের মুখে ঘাম ছুটত ল্যাবোরেটরির কর্মীদের। পরিষেবায় গাফিলতির অভিযোগে বিক্ষোভ হয়েছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে। তবে ইদানীং তাতে বদল এসেছে। অনলাইনে জমা পড়া রোগীর রিপোর্ট বর্তমানে ৩০০। কয়েকশো রোগীর নমুনা কার্যত উধাও।
ব্যাপারটা ঠিক কী? হাসপাতাল সূত্রে খবর, অনলাইনে রক্ত বা অন্য কোনও নমুনার রিপোর্ট জমা দেওয়ার পদ্ধতি চালু হওয়ার পর ধরা পড়েছে আসল কারচুপি। আগে দালাল মারফৎ বাইরের কোনও ল্যাবোরেটরির খরচ সাপেক্ষ পরীক্ষা মেডিক্যালের ল্যাবোরেটরিতে করিয়ে নেওয়া হতো। ফলে রিপোর্টও জমা পড়ত অসংখ্য। তার জন্য রিকিউজিশন স্লিপ লাগতো।
একদিকে বেআইনি নমুনার বাড়বাড়ন্ত, অন্যদিকে পরিষেবায় গাফিলতির অভিযোগও জমা পড়ছিল অজস্র। রোগীদের দাবি ছিল, লাইন দিয়ে দীর্ঘ সময় রিপোর্ট তুলতে হয় রোগী বা তাঁর পরিবারের লোকজনদের। তার উপর ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত গড়িমসি তো রয়েছেই। বহু কঠিন অসুখের রিপোর্ট দীর্ঘ দিন আটকে থাকায় চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয় অনেকের। লাইন দিয়েও রিপোর্ট হাতে না পেয়ে ফিরে যেতে হয় দূর থেকে আসা মানুষজনদের। এই বিক্ষোভ চরমে ওঠে জানুয়ারির শেষের দিকে। মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে প্রতিবাদে মুখর হন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়রা। কলেজ স্ট্রিট অবরোধ করে রেখে শুরু হয় বিক্ষোভ।
দীর্ঘদিন ধরে চলা এই অব্যবস্থা বন্ধ করার জন্যই অনলাইনে সমাধানের পথ খোঁজেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নয়া ব্যবস্থায় রিকুইজিশন স্লিপের দরকার পড়ে না। রোগীর আউটডোর স্লিপের রেজিস্ট্রেশন নম্বরটাই আসল। হাসপাতাল সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের কথায়, টিকিটের রেজিস্ট্রেশন নম্বর স্ক্যান করে রোগীর কোন কোন পরীক্ষা দরকার, সেগুলি সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পৌঁছে যায়। তারাই রিপোর্ট তৈরি করে পৌঁছে দেয় নির্দিষ্ট জায়গায়। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়ার কাউন্টার থেকে রোগী নির্দিষ্ট সময়ে তা সংগ্রহ করতে পারেন। কোনও রোগী যে বিভাগে ভর্তি রয়েছেন, বা চিকিৎসকের অধীনে রয়েছেন তাঁর রিপোর্ট মিলিয়ে দেখেই কম্পিউটার থেকে নির্দিষ্ট রিপোর্ট বার করে রোগীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এখানে গড়মিলের কোনও জায়গাই নেই।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, রোগীর একাধিক পরীক্ষা থাকে। রকমফের থাকে রক্তের পরীক্ষারও। একাধিক পরীক্ষাগারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ চালাতে হয়। ফলে, পরিষেবা দিতে সময় লাগে। অনলাইন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে সেই সময় অনেকটাই বেঁচেছে। পাশাপাশি, বেআইনি কাজকর্মও রুখে দেওয়া গেছে।