স্রেফ মুখেই প্রতিশ্রুতির ফোয়ারা। বাস্তবে একেবারে উলটোপথেই (নব্বই দশকের তালিবানি শাসনের নিরিখে অবশ্য একেবারে নিজেদের পথেই) হাঁটছে তালিবান। সেই রেশ ধরে এবার হেরাট প্রদেশের সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে পারবেন না বলে নিষেধাজ্ঞা চাপানো হল। আফগানিস্তানের সংবাদসংস্থাকে উদ্ধৃত করে একথা জানাল সংবাদসংস্থা পিটিআই।
আফগানি সংবাদসংস্থা খামা প্রেসকে উদ্ধৃত করে পিটিআই জানিয়েছে, বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক এবং তালিবানের বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, তিন ঘণ্টা বৈঠক শেষে তালিবানের প্রতিনিধি মুল্লাহ ফরিদ জানিয়েছে যে কোনও বিকল্প নেই। ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে পড়াশোনার বিষয়টি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। কারণ হিসেবে দাবি করেছে, ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে পড়াশোনাই হল ‘সমাজের সকল খারাপের শিকড়’। তালিবানের তরফে জানানো হয়েছে যে ধার্মিক মহিলা অধ্যক্ষরা শুধুমাত্র মেয়েদের পড়াতে পারবেন। ছেলেদের পড়াতে পারবেন না। যে নিষেধাজ্ঞাকে প্রথম ফতোয়া হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
শিক্ষা মহলের বক্তব্য, গত দু’দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কো-এডুকেশন এবং লিঙ্গভিত্তিক ক্লাস গড়ে তোলা হয়েছিল। তালিবানের আমলে সেই ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। তবে সেই ফতোয়ার ফলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন প্রভাব পড়বে না। শোচনীয় অবস্থা হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির। যেখানে এমনিতেই ছাত্রীর সংখ্যা নগণ্য ছিল।
সেই প্রথম ফতোয়া জারির দিনকয়েক আগেই প্রতিশ্রুতি বন্যা বইয়ে দিয়েছিল তালিবান। মঙ্গলবার তালিবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদকে উদ্ধৃত করে আফগানিস্তানের সংবাদমাধ্যমে টোলো নিউজ বলেছিল, ‘শরিয়তি আইনের উপর ভিত্তি করে মহিলাদের অধিকার প্রদানের বিষয়ে তালিবান প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য যে সকল ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রয়োজন হবে, সেখানে তাঁরা কাজ করতে পারবেন। মহিলাদের বিরুদ্ধে কোনওরকম বৈষম্য হবে না।’ সেইসঙ্গে তালিবান মুখপাত্রের দাবি করেছিল, প্রতিশোধ-নীতি ত্যাগ করা হবে। যাঁরা আগের সরকার বা বিদেশি সরকার বা বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। বেসরকারি সংবাদসংস্থাকেও ‘স্বাধীন’ থাকতে হবে। তবে কোনওরকম ‘জাতীয় স্বার্থ বিরোধী’ কাজ করা যাবে না। যদিও সেই দাবির পর একের পর এক তালিবান-সুলভ কাজের খবর মিলেছে।