ভারতে করোনার ‘সুপার স্প্রেডার’ তাবলীগি জামাত চরমপন্থীরা এখন বাংলাদেশ, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরায় ও জঙ্গি সংস্কৃতির ধারক, বাহক ও পৃষ্ঠপোষক। ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের কাছে এরা এখন অন্যতম মাথাব্যথার কারণ।
সম্প্রতি সিলেটের ২০ বছরের রাজ্জাক নামে এক যুবকের তাবলীগের সংস্পর্শে শেষে হঠাৎ ঘর থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে আফগানিস্তানে পারি দেওয়ার ঘটনা ভাবাচ্ছে নিরাপত্তা সংস্থার কর্তাদের। পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া বাংলাদেশ সীমান্তের ওই তালিবানি সংস্কৃতি এখানেও ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ আছে তাঁদের হাতে।
কলেজে ভর্তির পর বন্ধুদের সঙ্গে একাধিকবার তাবলীগে গিয়েছিলেন সিলেটের আব্দুর রাজ্জাক। বাসায় টিভি, ল্যাপটপ কিছুই নেই। কয়েক মাস আগে স্মার্ট ফোন কিনেছেন। বাসায় কাউকে টিভি দেখতে দিতেন না, গান শুনতেও মানা। মোবাইলের ইউটিউবে ধর্মীয় বিভিন্ন বক্তার ওয়াজে মগ্ন থাকতেন ২০ বছরের এ তরুণ।
হঠাৎ একদিন বন্ধুদের সঙ্গে নিখোঁজ হয়ে যান রাজ্জাক। খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে রাজ্জাক আফগানিস্তানে চলে গেছেন। এ খবর বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তার আত্মীয়-স্বজন। পুলিশ নিশ্চিত করে জানায়, আব্দুর রাজ্জাক এখন আফগানিস্তানেই অবস্থান করছেন।
পুলিশের বক্তব্য, কথিত ‘হিজরত’ আর ‘মুসলমানদের রক্ষার’ নামে আব্দুর রাজ্জাক বাড়ি ছেড়েছেন। বড় ভাই সালমান খান ঢাকা পোস্টের কাছে তার নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ‘মুসলমানদের রক্ষার নামে তার আফগানযাত্রা’ কোনোভাবেই মানতে রাজি নন।
সম্প্রতি আব্দুর রাজ্জাকের সন্ধান দেয় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। সংস্থাটি বলছে, ভারত হয়ে রাজ্জাক এখন আফগানিস্তানে অবস্থান করছেন। তিনি একা নন, তার সঙ্গে আরও অনেক বাংলাদেশি যুবক আছেন। সেখানে তালেবানের সহযোগী হিসেবে তারা কাজ করছ
সিলেট থেকে নিখোঁজ হওয়া ২০ বছরের যুবক আব্দুর রাজ্জাক
গতকাল শনিবার (১৪ আগস্ট) রাতে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় রাজ্জাকের ভাই সালমান খানের। বলেন, রাজ্জাক লামাবাজারের একটি কলেজের শিক্ষার্থী। ছোটবেলা থেকে খুব শান্ত প্রকৃতির সে। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে নিয়মিত নামাজ আদায় করে। খুব বেশি নয়, হাতেগোনা কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ছিল তার চলাফেরা। প্রয়োজন ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলত না রাজ্জাক। এলাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। সে যে আফগানিস্তান যেতে পারে— এটা বিশ্বাস হয় না।
সম্প্রতি তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার হওয়া কয়েকজন জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারা জানান, তাদের অনেক বন্ধু কথিত হিজরতের নামে আফগানিস্তান গেছেন। তাদের মধ্যে রাজ্জাকও রয়েছেন। রাজ্জাকের ছবি দেখে তারা বিষয়টি সিটিটিসিকে নিশ্চিত করেন
‘২৫ মার্চ থেকে সে নিখোঁজ। অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। শেষমেশ ১ এপ্রিল সিলেটের কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি’— বলেন বড় ভাই মো. সালমান খান (২৭)। ওই জিডির সূত্র ধরে সালমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিটিটিসি। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে তারা জানায়, ‘রাজ্জাক চলে গেছে আফগানিস্তানে।’
যেভাবে রাজ্জাকের সন্ধান পেল সিটিটিসি
সিটিটিসি’র পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, সম্প্রতি তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার হওয়া কয়েকজন জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারা জানান, তাদের অনেক বন্ধু কথিত হিজরতের নামে আফগানিস্তান গেছেন। তাদের মধ্যে রাজ্জাকও রয়েছেন। রাজ্জাকের ছবি দেখে তারা বিষয়টি সিটিটিসিকে নিশ্চিত করেন।
রাজ্জাক কীভাবে আফগানিস্তানে গেল— জানতে চাইলে সিটিটিসি জানায়, প্রথমে ভারত, এরপর পাকিস্তান হয়ে তিনি আফগানিস্তান পৌঁছেছেন। হিজরতের নামে তালেবানের সঙ্গী হয়ে যুদ্ধ করাই তার মূল উদ্দেশ্য। রাজ্জাক শুধু একাই যাননি। তার মতো আরও অনেক যুবক হিজরতের নামে গ্রুপ করে তালেবানদের ডাকে আফগানিস্তানে যাচ্ছেন। তারা তালেবানের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চান।
তাদের মধ্যে তালেবান ফ্যান্টাসি কাজ করছে। তালেবানদের সঙ্গে তারাও বিজয়ের সঙ্গী হতে চান। এ কারণে দলে দলে সেখানে (আফগানিস্তান) যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকে সফলও হয়েছেন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটিটিসি’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল এসপি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক আগে থেকেই আমরা রাজ্জাকের বিষয়ে জানতাম। তিনি আফগানিস্তান যেতে পারেন— এমন সন্দেহও ছিল। সম্প্রতি কয়েকজন জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি যে, তিনি আফগানিস্তান গেছেন।
‘শুধু রাজ্জাক নন তার মতো আরও অনেকে বর্তমান আফগান-পরিস্থিতি নিয়ে বেশ উদ্বেলিত। তাদের মধ্যে তালেবান ফ্যান্টাসি কাজ করছে। তালেবানদের সঙ্গে তারাও বিজয়ের সঙ্গী হতে চান। এ কারণে দলে দলে সেখানে (আফগানিস্তান) যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকে সফলও হয়েছেন’— বলেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্প্রতি তালেবান আফগানিস্তান যুদ্ধে অংশ নিতে বিশ্বের মুসলিম যুবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে কিছু যুবক কথিত হিজরতের নামে ঘর ছেড়েছেন। বাংলাদেশ থেকেও গেছেন। তবে ঠিক কতজন গেছেন এ মুহূর্তে সংখ্যাটি বলা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি তালেবান আফগানিস্তান যুদ্ধে অংশ নিতে মুসলিম যুবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে কিছু যুবক কথিত হিজরতের নামে ঘর ছেড়েছেন। বাংলাদেশ থেকেও গেছেন। তবে ঠিক কতজন গেছেন এ মুহূর্তে সংখ্যাটি বলা যাচ্ছে না
কেমন ছিলেন রাজ্জাক
রাজ্জাকের ভাইয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, ছোট বেলা থেকে তিনি খুবই শান্ত স্বভাবের ছিলেন। একা একা থাকতে পছন্দ করতেন। নিয়মিত নামাজও পড়তেন। কলেজ বন্ধ থাকলে বন্ধুদের সঙ্গে তাবলিগ জামাতে যেতেন। সব সময় কম কথা বলতেন। কাজ ছাড়া অতিরিক্ত কথা বলতেন না। রাজ্জাক বলতেন, ‘অতিরিক্ত কথা বলে যদি কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে তো আমি পাপ করে ফেললাম। এ কারণে কম কথা বলাই ভালো।’
বড় ভাই সালমান বলেন, ‘ফোনেও কারও সঙ্গে বেশি কথা বলত না সে। গান-বাজনা পছন্দ করত না। ঘরে কোনো দিন টিভিও কিনতে দেয়নি।’ আমাকে প্রায়ই বলত, ‘মুসলমানদের ওপর অত্যাচার করে সবাই মজা পায়। সবাই শুধু মুসলমানদের ওপর দোষ চাপায়। আমরা (মুসলমানরা) কি এতই খারাপ? পৃথিবীতে আমাদের কি কোনো দাম নেই?’ আমরাও বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দিইনি— বলেন সালমান।
ছোট ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়ার দিনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গত ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় রাজ্জাক তার বন্ধু ফরিদের বাসায় যায়। সেখানে সে একদিন থাকবে বলে আমাদের জানায়। ফরিদ যেহেতু লামাবাজার এলাকার ভাতলিয়া মসজিদের হুজুর, মসজিদের কোয়াটারেই সে থাকে, এ কারণে বাধা দিইনি। এরপর সে আর ফিরে আসেনি।
ফোনেও কারও সঙ্গে বেশি কথা বলত না সে। গান-বাজনা পছন্দ করত না।
ঘরে কোনো দিন টিভিও কিনতে দেয়নি। আমাকে প্রায়ই বলত, মুসলমানদের ওপর অত্যাচার করে সবাই মজা পায়। সবাই শুধু মুসলমানদের ওপর দোষ চাপায়। আমরা (মুসলমানরা) কি এতই খারাপ
নিখোঁজ রাজ্জাকের বড় ভাই মো. সালমান
নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন রাজ্জাক আমাকে বলেছিল, ‘আমি ফরিদের বাসায় যাচ্ছি, একদিন থাকব।’ আমি বলেছিলাম, ‘যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে দেখা করে যেও।’ কিন্তু সে দেখা না করেই ফরিদের বাসায় যায়। এর আগেও দুদিন সে তার কোনো এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে থেকে এসেছে। সেই বন্ধুর পরিচয় আমার জানা নেই।
সিটিটিসি’র বক্তব্য
আফগানিস্তানে বর্তমানে তালেবানের পুনরুত্থান দেখে আমাদের দেশীয় জঙ্গি সংগঠনগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে অনলাইনে তাদের কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এসব জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা ভুয়া আইডি থেকে তালেবানের বিজয়কে ফলাও করে প্রকাশ করছে। একই সঙ্গে তালেবানের সঙ্গে যুক্ত হতে তাদের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন দেশের যুবকদের আহ্বান জানানো হচ্ছে। ফলে ধর্মভীরু যুবকরা তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ঘরছাড়া হচ্ছেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রথমে তারা ভারতে প্রবেশ করছেন। সেখান থেকে একটি গ্রুপ তাদের পাকিস্তানে পার করে দিচ্ছে। পাকিস্তান থেকে আরেকটি গ্রুপ তাদের আফগানিস্তানে তালেবানদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।
(Tabhlighi Jamaat, a fanatic Islamic group which follows Deobandi thought of radical Islam and was under scanner for spreading Covid-19 in India last year, is in the glare of security agencies for spreading its tentacles. According to a top security official, Tablighis are trying to foment trouble in Assam, West Bengal and Tripura, three eastern states, where thousands of youths are being brainwashed by radicals. Recently, the case of Razzak, a 20-year-old youth in Bangladesh district of Sylhet, which borders India, who has suddenly vanished from his home, surfaced much to the concern of security people. His brother told media that his younger brother came in close touch with Tablighi Jamaat and resultantly modelled himself as a terrorist. Razzak has finally went to Afghanistan to join the Taliban. Notably, Taliban also follows Deobandi school of thoughts.