প্রাথমিক অনুমান ছিলই। ধৃত যুবকের স্বীকারোক্তিতে সেটা আরও স্পষ্ট হলো। জম্মু বাসস্ট্যান্ডে গ্রেনেড হামলার ঘণ্টা পাঁচেকের মধ্যেই বিস্ফোরণ এলাকার কাছ থেকে সন্দেহভাজন এক যুবককে আটক করে পুলিশ। শুরু হয় জেরা। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত যুবকের দাবি সে হিজবুল মুজাহিদিনের এক সক্রিয় সদস্য। কুলগামের হিজবুল কম্যান্ডারের নির্দেশেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
জম্মু পুলিশের এক আধিকারিক মনীশ কে সিনহার কথায়, তদন্তে নেমে বাসস্ট্যান্ড টত্বরের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান নেওয়া শুরু হয়। তাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে ওই যুবক ইয়াসির জাভেদ ভাটের নাম উঠে আসে। বিস্ফোরণের পর পরই এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল সে। পরনে ছিল জিন্স ও লাল শার্ট। ইয়াসিরের বাড়ি কাশ্মীরের খানপুরা এলাকায়। মাস খানের ধরে কুলগামে ঘাঁটি গেড়েছিল সে। পুলিশের অনুমান সেখানেই হিজবুলের গোপন ডেরায় চলছিল প্রশিক্ষণ। এ দিন সকালে সে কুলগাম থেকে জম্মু পৌঁছয়। জেরায় বিস্ফোরণের কথা স্বীকার করে নিয়েছে ইয়াসির।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার সময় হঠাৎ করে প্রচণ্ড বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে বাসস্ট্যান্ড। বিস্ফোরণের পরেই পুরো এলাকাটি ঘিরে ফেলেন নিরাপত্তারক্ষীরা। এই বিস্ফোরণে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। আহতদের সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় জম্মু সরকারি হাসপাতালে। পরে সেখানে উত্তরাখন্ডের হরিদ্বারের বাসিন্দা ১৭ বছরের মহম্মদ শারিক নামের এক যুবক মারা যায়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বাকিদের মধ্যেও কয়েকজনের অবস্থা সঙ্কটজনক।
বিস্ফোরণের পরই এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। পুলিশ কুকুর নামিয়ে শুরু হয় তল্লাশি।
পুলিশ জানিয়েছে, এই বাসস্ট্যান্ডটি রয়েছে শহরের একবারে ব্যস্ততম এলাকায়। বিস্ফোরণের সময় বাসে কাউ না থাকায় প্রাণহানির সংখ্যা অনেক কম। আহতদের বেশিরভাগই বাসের চালক বা খালাসি। শহরের ব্যস্ত এলাকায় বহু মানুষের মৃত্যু ঘটানোই উদ্দেশ্য ছিল হিজবুলের।
এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, “আমরা দাঁড়িয়েছিলাম বাসস্ট্যান্ডে। আচমকাই মারাত্মক শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। ভেবেছিলাম টায়ার ফাটার শব্দ। পরে বুঝলাম বিস্ফোরণ হয়েছে, আহতদের এলাকার বাসিন্দারাই হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন।”
পুলওয়ামার সিআরপিএফ কনভয়ে জঙ্গি হামলার পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে কাশ্মীরের পরিস্থিতি। প্রত্যেকদিনই নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে জঙ্গিদের গুলির লড়াই চলছে। গত এক সপ্তাহ ধরে উত্তপ্ত কুপওয়ারা, ত্রাল-সহ বেশ কয়েকটি এলাকা। কুপওয়ারার হান্দওয়ারা এলাকায় সেনা-জঙ্গি গুলির লড়াইয়ে এক জঙ্গি নিহত হয়েছে। সোপিয়ানেও লাগাতার চলছে সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষ। বুধবার সেখানে দুই জঙ্গির নিকেশ হওয়ার খবর মিলেছিল।