সৌজন্যে তালিবান। কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে গেল কেরলের আইএস-এর কয়েকজন মহিলা সহ প্রায় ১২ জন ভারতীয়। এরা প্রত্যেকেই ২০১৬ সালে আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক ও সিরিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল। কাবুলের দুটি কারাগার পুল-ই-চরখি এবং বাদামবাগ থেকে তালিবানরা শত শত ‘জিহাদিদের’ মুক্তি দিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে ভারতীয় সন্ত্রাস দমন ও গোয়েন্দা সংস্থা।
গোটা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন কাউন্টার টেররিজম কর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, এই তালিবানদের দখলদারিতে পোয়াবারো হয়েছে সেদেশের অতি মৌলবাদীদের। এঁরাই এক সময়ে শরিয়া আইনের আওতায় বসবাসের জন্য নানগারহার প্রদেশে গিয়েছিল। অবশেষে তাঁরা যা চেয়েছিল তাই বাস্তবায়িত হয়েছে।
আশরাফ গনির সরকারের দ্রুত পতন এবং আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর আত্মসমর্পণের অর্থ একটাই। বর্তমানে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছে জিহাদিদের সঠিক অবস্থান নিশ্চিত করার কোনও উপায় নেই। বিভিন্ন উগ্রপন্থী কার্যকলাপে অভিযুক্ত ভারতীয়রা এখন মুক্ত। ফলে তারা এখন কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, তার নজরদারি করার কোনও উপায় নেই গোয়েন্দাদের।
আর তার ফলেই উঠে আসছে আশঙ্কার কথা। এমনটাও হতে পারে যে পরবর্তীকালে তারা কোনও তৃতীয় দেশের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্তা জানালেন, ‘আমাদের এখন উগ্রপন্থী, জঙ্গিদের উপর আরও কড়া নজরদারি রাখতে হবে। তারা কী করছে তার হদিশ রাখা এখন অনেক বেশি কঠিন হয়ে গেল।’
গোয়েন্দাদের অনুমান, আফগানিস্তানের বিভিন্ন কারাগারে প্রায় ২৫ জন ভারতীয় বন্দি ছিলেন। এর মধ্যে প্রায় ১২ জন পুল-ই-চরখি এবং বাদাম বাগ-এ ছিল। এখন তাদের অবস্থান কোথায়, তারা কী করছে, তার কোনও সঠিক খবরই নেই গোয়েন্দাদের কাছে।এদের মধ্যে কেরলের আইএস সদস্য মহিলাদের গত বছরই জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন গোয়েন্দারা।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ গুরুদ্বারে হামলার পর গত বছর এনআইএ-র গোয়েন্দাদের কাবুল যাওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার কারণে সেই পরিকল্পনা শেষমেশ বাতিল করা হয়।সন্ত্রাস দমন বিভাগের ধারণা, আইজাজ অহঙ্গারের মতো সন্ত্রাসবাদীরা পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর সাহায্যে ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারে। কেরলের বিধবা মহিলাদের তালিবান যোদ্ধাদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও করা হতে পারে।
গোয়েন্দাদের মতে, ভারতের সবচেয়ে আশঙ্কার কারণ হল তালিবান নেতা সিরাজউদ্দিন হাক্কানি। ভারতীয়দের মাধ্যমেই সিরাজ আফগানিস্তানে ভারতীয় সম্পত্তি এবং ভারতীয়দের টার্গেট করার প্রশিক্ষণ দিতে পারে। এ বিষয়ে এক গোয়েন্দা আধিকারিক বলেন, ‘এই মুহূর্তে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করা যাচ্ছে না। কিন্তু পাকিস্তান আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদীদের প্রশিক্ষণের জন্য হাক্কানি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার চেষ্টা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর তারপরেই তাদের ভারতে পাঠানো হতে পারে।’