৩৪ বছরের এক বাকশক্তিহীন অসহায় গৃহ বধূকে বাড়ি থেকে বার করে গণধর্ষণ করে বেঁধে তাঁর বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যাওয়ার সংবাদটি শুধু ভয়ঙ্কর না বীভৎস । সংবাদটি আজ আনন্দবাজার প্রথম ও পঞ্চম পৃষ্ঠায় গুরুত্ব বুঝে ছেপেছে । গণশক্তিও ছেপেছে প্রথম পাতায় । এই সময় ও বর্তমান পত্রিকায় মূল সংস্করণে খবরটি লোপাট করেছে ।
প্রশ্ন হচ্ছে এই সময়, বর্তমান কি জানতোনা এই খবরের গুরুত্ব ? ওরা কি পায়নি এই খবর ? নাকি পেয়েও চেপেছে । কেউ রেগে যাবে বলে ? জানি না । জানতে আর ইচ্ছেও করে না । এঁদের যারা পাঠক তারাই হিসেবটা বুঝে নিন । ডিজিটাল যুগে একদিন না একদিন এর খেসারত এঁদের দিতে হবে ।
কাল হয়তো এরা ছাপবে এই খবর কেননা ঘটনাটি আরও অনেক দূর এগিয়েছে ।
কি রকম ?
বাকশক্তি হারানো এই মহিলার স্বামী থানায় পাঁচ জনের নামে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিল । তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি কুতুবুদ্দিন মল্লিক, যুব সভাপতি দেবাশিস রানা, জয়নাল মল্লিক, রহমত মল্লিক, সহিদ মল্লিকরা তাঁর স্বামী, পুত্রর অনুপস্থিতিতে দলবদ্ধ ভাবে তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ করে পিছমোড়া করে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল পাশের ভাঙা বাড়িতে । সকালে নাইট ডিউটি সেরে বাড়ি ফিরে ছেলে মা কে না পেয়ে খুঁজতে বেরিয়ে তাঁর রক্তাক্ত শরীর উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছিল বাগনান থানায় । থানার কর্তাবাবু বলেছিল প্রমাণ আনতে । অগত্যা অসুস্থ মা কে নিয়ে ছেলে ছুটেছিল বাগনান হাসপাতাল, বাড়াবাড়ি বুঝে সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ।
পুলিশ কুতুবুদ্দিন ও রানাকে ধরতে পেরেছিল এমন সংবাদ ছিল সারাদিন সংবাদ মাধ্যমে । পাড়ার লোকও দেখেছিল । ভুল ভাঙে আদালতে পেশ করতে গিয়ে । দেখা যায় তারা দুজনেই বদলে গেছেন । পুলিশ পেশ করেছে অন্য দুজনকে ।
বলা বাহুল্য শাসকের নির্দেশে । কেন না ততক্ষনে থানার অভ্যন্তরে শুরু হয়ে গেছে অন্য খেলা । ” গণধর্ষণ” বদলে ততক্ষনে হয়ে গেছে ” শ্লীলতাহানী ” । বাগনান থানা আর গ্রামীণ এস পি সৌম্য রায়ের যৌথ ব্যবস্থাপনায় । আর তা নবান্নের ইশারায় সেটা বলাই বাহুল্য ।
আজ প্রায় পড়ন্ত বেলায় সেখানে পৌঁছলেন শুভেন্দু অধিকারী । নির্যাতিতা বাকশক্তিহীন এই মহিলাকে চিকিৎসার জন্য পাঠালেন কলকাতার এক প্রাইভেট হাসপাতালে । অভয় দিলেন পুত্র এবং স্বামীকে সব রকমের সাহায্যের । লড়াইয়ের । কাল কাগজপত্র যাচ্ছে এন এইচ আর সি তে । এবং আদালতে ।
এই ধরণের স্মার্ট লড়াইতেই মমতার রাগ বাড়ে, বি পি বাড়ে । শুভেন্দু এটা জানেন, বোঝেন । আর ঠিক সেই জায়গায় ঘা দিতে উদ্যত হয়ে গেলেন তিনি । লড়াই জমে উঠল । এই মারাত্মক খবর এড়াতে চাওয়া চ্যানেলগুলো এখন এই স্টোরিতে থাকবে । অনিচ্ছা থাকলেও । কালীঘাটের বকুনি খেলেও প্রিন্ট মিডিয়া ভেতরের পাতায় স্টোরি করবে ঘটনাটাকে যতটা সম্ভব লঘু করে । উনি যাতে না রাগেন সেটা অবশ্য মেপে, এবং বুঝে ।
স্মরণ করুন মাত্র মাস চারেক আগের আরেকটি ঘটনা । হাওড়ার বাগনানে এক মা নিজের ইজ্জত বাঁচাতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে ঝাঁপ দিয়ে মারা গিয়েছিলেন । অভিযুক্তরা তৃণমূলের সম্ভবত পঞ্চায়েত পদাধিকারী ছিলেন । মনে পড়ে মন্ত্রী অরূপ রায় মৃত মহিলার চরিত্র টেনে সাফাই গেয়েছিলেন দলের হয়ে প্রকাশ্যে । মমতা রা কাড়েননি সেদিন । স্নেহে, মমতায় অরূপরা প্রশ্রয় পেয়েছিল ।
আজ বাগনানের বাইনান আরও একবার প্রশ্রয়ের অপেক্ষায় দিন গুনতে শুরু করল । থানার ও সি, জেলার এস পি নিশ্চিত প্রমোশন পাবেন । প্যারামিটার হবে কে কতটা কি ভাবে দুষ্টু কুতুবুদ্দিনের ঘটনাটা চাপতে পারবেন তার ওপর তাদের গ্রেডেশনও হবে । সেটাই মমতার খেলার স্টাইল ।
“এই সময়”, “বর্তমান” কার কত বিজ্ঞাপন জুটবে সেটাও বিচার্য হবে ঠিক এই স্টাইলেই । অনুপ্রাণিত থেকে কে কতটা খবর চাপবেন, খবর ছাপবেন তার ওপরই জুটবে নবান্নের “হাসিমুখের বিজ্ঞাপন” ।
এই অর্থ অনর্থের লড়াইয়েই মাঝখান থেকে পাঠক হারাবেন বহু বহু গুরুত্বপূর্ন খবর । যার খবর ক’ জন পাঠক রাখবে বলুন ? এই সরল সত্যটা বুঝে গেছেন এরা, এরা মানে “এই সময়” এর মত নবান্নে প্রাণ-মন ঢেলে দেওয়া সংবাদ মাধ্যম ।
যারা কি অনায়াসে আমার আপনার রাখা ভরসা নিয়েও ছেলেখেলা করে, বিক্রি বাটরা করে । এবং ধরা পড়ে গেলে তার জন্য কখনো কোনোদিন সামান্য বিব্রত বোধও করেনা এরা ।
এরা গণতন্ত্রের ” ফোর্থ পিলার ” !!
যে পিলারে সরকারের মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইনভেস্টেড থাকে চড়া ডিভিডেন্ডের আশায় । মানুষ সেখানে নিছকই সেভিংস একাউন্ট । সরকার এবং সংবাদ মাধ্যমের কাছে ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)