হৃষীকেশের সুবিখ্যাত ঝুলন্ত সেতু লছমনঝোলা চিরতরে ছুটি নিল। মানে গঙ্গাবক্ষের বিখ্যাত সেতুটি নেই হয়ে গেল! বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দিয়েছেন, তাকে সারিয়েও আর চালানো সম্ভব না।
ফলে সেতুটিকে ‘মুক্তি’ দিতে চলেছে স্থানীয় প্রশাসন। স্বভাবতই একথা শুনে গোটা দেশের মন খারাপ। গড় ভারতীয়ের ভ্রমণের অ্যালবামে লছমনঝোলার স্মৃতীচিত্র আছেই। তাছাড়া কত সন্তের চরণচিহ্ন, কত সকাল রাত্রি সন্ধের প্রার্থনা, কত গঙ্গাস্রোত, কত দেখা হওয়া, দেখা না হওয়া অপেক্ষার প্রহর! আচ্ছা, আদপেই কি এই সেতুর বাস্তব অস্তিত্ব ছিল? লছমনঝোলা স্বপ্ন না তো? হয়তো সে সেই স্বপ্নের সেতু, যাকে হৃষীকেশের মতো তীর্থে এলে, মানসভ্রমণে ছোঁয়া যেত!
না, এই ইলিউশান সবার নয়। আমার মতো কিছু মানুষের। যারা ভেবেছে লছমনঝোলায় ঝুলব, মৃত্যু আর জন্মের দোলনায় দুলব একদিন। কিন্তু হয়নি। ভাগ্য সুযোগ দেয়নি কিংবা ভগবান ডাকেনি! মোদ্দা কথা, কোনওভাবে যাওয়া হয়নি হৃষিকেশে, এটা সেই হতভাগ্যদের অধিবাস্তবতা!
কিন্তু সংবাদটি ঘোর বাস্তব। দীর্ঘ ৯৬ বছর অক্লান্ত পরিষেবা দেওয়ার পর অনন্ত বিশ্রামে চলে গেল হৃষীকেশের ঐতিহ্য ঝুলন্ত সেতু লছমনঝোলা বা লক্ষ্মণঝোলা। ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়ে দিয়েছেন, বৃদ্ধ সেতু আর পর্যটকের ভার বহনে সক্ষম নয়। শুক্রবারই সেতুর ওপর দিয়ে সমস্তরকম যান চলাচলের পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পর্যটকদের যাতায়াতও। শোক সংবাদ—সেতুটি আর সারানোও সম্ভব না। উত্তরাখণ্ডের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব ওম প্রকাশ জানিয়েছেন, সেতুটিতে বয়সের ছাপ স্পষ্ট। যে কোনও সময় ঘটতে পারে বিপদ। আশঙ্কাজনক অবস্থা খতিয়ে দেখেই বিশেষজ্ঞদের একটি দলের পরামর্শেই বন্ধ করে দেওয়া হল লক্ষ্মণঝোলার পরিষেবা।”
কিন্তু, তবু, ইতিহাসে থেকে যাবে সে। তাছাড়া হৃষীকেশ বললেই পর্যটকদের মনে পড়বে গঙ্গাবক্ষের লক্ষ্মণঝোলার আনন্দের কথা। ১৯২৩-এ জন্ম (নির্মিত), ২০১৯-এ মৃত্যু। আর এই মাঝের সময়ে যারা তাকে পেয়েছে তারা অবাক ভালোলাগা উপভোগ করেছে। যারা আমার মতো, কেবলই ছবি দেখেছে মুগ্ধ চোখে, দেখেছে ক্যালেন্ডারে ঝুলে আছে অধরা স্বপ্ন! আত্মীয়, প্রতিবেশির অ্যালবাম দেখে যারা ভেবেছে, জীবনে একবার ঝুলতেই হবে লছমনঝোলায়, তাদের কাছে স্বপ্নের সেতু হয়েই তো রয়ে গেল লছমনঝোলা!