আমি রিয়া চক্রবর্তী বলছি, সব ধর্ম সমান নয়। ভুল শিক্ষা দিলে সারা জীবনের জন্য কাঁদবেন। –
আমি রিয়া চক্রবর্তী। আমার বাবা ছিলেন একজন সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারের ছেলে ।তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি সেক্যুলার মনের মানুষ এবং সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপর নাই এই নীতিটি মনেপ্রাণে সারা জীবন ধারণ করে চলত। আমার মা ছিলেন মুসলিম পরিবারের মেয়ে। তারা ইসলামের সব নিয়ম-কানুন কঠোর ভাবে পালন করত।
এজন্য আমার মা বাইরে বের হলে বোরখা পরতো। আমার বাবা মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ভার্সিটিতে পড়ার সময় আমার মা আমার বাবার প্রেমে পড়ে যান। যেহেতু দুইজন দুই ধর্মের সেজন্য তাদের বিয়েতে অনেক সমস্যা হবে ,তাই আমার বাবা এবং মা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে।
এটা বাংলাদেশের ঘটনা তাই আমার মায়ের পরিবার থেকে অনেক হুমকি আসতে থাকে আমার মা কে হত্যা করার জন্য।আমার বাবা আমার মা কে বিয়ে করলেও ধর্ম পরিবর্তন করাননি। আমার বাবা ভেবে পায়না আমার মায়ের বাবারা তাকে কেন হত্যা করতে চায় ??
তখন আমার মা বাবাকে বলেন যারা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে তাদেরকে বলে মুরতাদ । আর মুরতাদকে হত্যা করার বিধান কোরআনে রয়েছে। বাবা এত কিছু বুঝতো না। তারা কয়েক মাস গোপনে থাকার পর নিজের বাড়িতে এসে বসবাস করতে লাগলো। এভাবে আমার জন্ম হলো।
আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন আমার মা মারা যান। আমার বাবা এরপর আর বিয়ে করেননি । আমার বাবা আমাকে শিক্ষা দিত যে মা মনে রাখবি, “ধর্ম মানুষের জন্য সৃষ্টি হয়েছে ধর্মের জন্য মানুষ সৃষ্টি হয়নি” ” তাই সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই” ” সব ধর্মই সমান” ইসলাম ধর্ম আর সনাতন ধর্ম একই কথা বলে।
কলেজে পড়ার সময় আমার এক মুসলিম বন্ধু আমাকে প্রেমের অফার দেয়। যেহেতু আমি এই শিক্ষা পেয়েছি যে ধর্ম কোনো বিষয় নয় তাই তার অফার গ্রহণ করি এবং একদিন বিয়ে করতে কাজী অফিসে যাই। বিয়ের সময় রিয়াজ বলল,” তোমার ধর্ম পরিবর্তন করতে হবে। রিয়া চক্রবর্তী থেকে রিয়া ইসলাম হবে। আমি বললাম,” তুমি না বলেছিলে ধর্ম কোন বিষয় না??
বিয়ের পর তুমি তোমার ধর্ম নিয়ে থাকবে আমি আমার ধর্ম নিয়ে থাকবো। তাহলে কেন এখন ধর্ম পরিবর্তন করতে হবে?? তবে আজ কেন এসব বলছ?? আরে !!! এটাতো কেবল কাগজে পরিবর্তন করছি।আমি বললাম আমার মা ধর্ম পরিবর্তন করে নি তারপরও তাদের কি করে বিয়ে হল?? সে বলল ইসলাম ধর্মে সমধর্ম ছাড়া বিয়ে হয় না । বিয়ের পর তো তুমি তোমার ধর্ম পালন করবে আর আমি আমার ধর্ম পালন করব।
কাজী আমাকে প্রশ্ন করলেন যে বিয়ের কাবিননামা কত টাকা লিখবো? আমি বললাম আমার কাছে রিয়াজই সব ,কাবিন নামা লেখার কোন প্রয়োজন নেই। সেজন্য 5000 টাকার কাবিন নামায় আমার বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর আমার শ্বশুর বাড়ির লোক খুব আদর যত্ন করলো। তারা বলল তুমি অনেক ভাগ্যবান যে শান্তির ধর্মে আসলে।
জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে গেছো। যদি সারা জীবন মুশরিক(যারা প্রতিমা পুজা করে তাদেরকে আরবীতে মুশরিক বলে) থাকতে তাহলে মরার পর দোযখের আগুনে পুড়ে মরতে। আর তোর বাবাকেও এই ধর্মে আসতে বল তা নাহলে তোর বাবা মরার পর দোযখের আগুনে পুড়ে মরবে। আমি ভয়ে কিছুই বলতে পারতাম না। তারা আমাকে বোরখা পরতে বাধ্য করায়।
কালেমা, কোরআন পরতে শেখায়। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরতে বাধ্য করতো ।অথচ আমি কোনোদিন বেদ, গীতা পড়িনি ।কেউ আমাকে বাধ্যও করেনি।আমার জীবন টাকে তারা দুর্বিষহ করে তুলেছিল। ওদের ধরাবাঁধা ধর্মীয় নিয়ম কানুন পালন করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছি। এভাবে আমি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিলাম।
এক সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে তাদের ব্যবহার ,আচার-আচরণ সব পাল্টে গেল। আমাকে আর আমার স্বামী দেখতে পায় না। নির্যাতন করতে থাকে। একদিন বলে সে আমাকে তালাক দিয়ে আরেকটি বিয়ে করবে। আমি বললাম,”আমাকে যদি দূরে ঠেলে দিবে তাহলে আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন কেন”?? সে বলল একজন হিন্দু মেয়েকে ইসলাম ধর্মে কনভার্ট করতে পারলে আমি সহ আমার পরিবার জান্নাতবাসী হবো।
সেজন্য তোমাকে ফুসলিয়ে বিয়ে করেছি। আমি বললাম, তাহলে তোমার ভালোবাসা?? আরে!!! ওসব তো আমাদের অভিনয় । মালাউনের (যারা আল্লাহকে মানে না তাদেরকে মুসলিমরা অভিশপ্ত বলে,আর অভিশপ্ত শব্দের আরবী শব্দ মালাউন) বাচ্চাদের আমরা এভাবে ধর্মান্তরিত করি ভোগ করার জন্য আর বেহেশতের টিকিট পাওয়ার জন্য।
ভোগ করার কিছু বছর পর রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিই।দূর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে মালাউনের বাচ্চা। আর এই ধর 5000 টাকা, তোর ইজ্জত এর দাম। আমি বললাম আমার ইজ্জতের দাম মাত্র ৫০০০ টাকা?? সে বলল,” কাবিননামায় তোর ৫ হাজার টাকা লেখা আছে তাই 5000 টাকা ফেরত দিলাম। আমি প্রশ্ন করলাম, ‘তাহলে কাবিননামা মানে একজন মেয়ের ইজ্জত এর দাম’?? সে উত্তর দিল হ্যাঁ।
আমি বাবার কাছে ফিরে এলাম। বাবাকে প্রশ্ন করলাম, বাবা তুমি বলেছিলে, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। তাহলে কেন আমার স্বামী ধর্মের জন্য আমাকে ত্যাগ করল??
তুমি আমাকে শিখিয়ে ছিলে মানুষের জন্য ধর্ম সৃষ্টি হয়েছে ধর্মের জন্য মানুষ সৃষ্টি হয় নি।তাহলে কেন আমার স্বামী এবং তার পরিবার জান্নাত যাওয়ার লোভে আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে আমার সবকিছু লুটে নিয়ে আমাকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিল?? বাবা সেদিন কোন উত্তর দিতে পারল না।
কোরআন, হাদীস পড়ার কিছুদিন পর বাবা আমাকে বলল, “আমি যা বলেছি তা ঠিকই বলেছি কিন্তু একটা কথা বলতে ভুলে গেছি,তা হল “লোভে পাপ পাপে মৃত্যু” ইসলাম ধর্মে জিহাদ(অমুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ) করার জন্য 72 হুরের(মরার পর বেহেশতে সেক্স করার জন্য পরীর মত সুন্দরী ৭২জন কুমারী মেয়ে) লোভ, একজন হিন্দু মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ইসলাম ধর্মে কনভার্ট করতে পারলে জান্নাতবাসি হওয়ার লোভ, মিথ্যা শান্তির বাণী শুনিয়ে ধর্মান্তর করতে পারলে ছওয়াবের লোভ।
এই ধর্মে এত লোভ দেখানো হয়েছে যা একজন মানুষের মনুষ্যত্বের মৃত্যু হয়। ক্যান্সারের মতো সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে । আর মৃত্যু অবধি তা দূর করা সম্ভব হয় না। যখন এই রোগ কোন মানুষের মধ্যে প্রবেশ করে তখন সে আর মানুষ থাকে না অমানুষ হয়ে যায় ।
আর অমানুষ কখনো ধর্মের উপর সত্য নয়। আমি যে তোমাকে ভুল শিক্ষা দিয়েছি তা তুমি তোমার মেয়েকে দিও না। আমার বাবা আমার কষ্টে কষ্ট পেয়ে কয়েক বছরের মধ্যে মারা যায় ।
আমার মেয়ে আজ ক্লাস সিক্সে পড়ে। তাকে শিক্ষা দিয়েছি, সব ধর্ম সমান নয়। কিছু ধর্ম আছে যা মানুষকে অমানুষ করে তোলে। তারা ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকে।
তারা তোমাকে শান্তির বাণী শোনাবে, উদারতার কথা শুনাবে কিন্তু ভুলেও তুমি সেদিকে পা বাড়াবে না। কারণ তুমি তাদের কাছে ভোগ্যপণ্য এবং বেহেশতের টিকিট মাত্র। যখন তোমাকে ভোগ করা শেষ হবে তখনই তারা তোমাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে ।
আমি আমার সন্তানকে লাভ জিহাদ সম্পর্কে সচেতন করেছি আপনারা আপনার সন্তানদের সচেতন করেছেন তো?? আমার বাবা আমাকে যে ভুল শিক্ষা দিয়েছিল আশা করি আপনারা আপনার সন্তানদের সেই ভুল শিক্ষা দিয়ে সারা জীবনের জন্য কাঁদবেন না, আপনার সন্তানকেও কাঁদাবেন না।
রিয়া চক্রবর্তী
ঢাকা- বাংলা