বেশ যুদ্ধ করেই শৈশবের অন্ধকারকে সরিয়ে পড়াশোনার আলোয় নিজেকে আলোকিত করতে পেরেছেন রমনিতা শবর। ব্রিটিশ জমানা থেকেই যে এলাকা ‘ব্যাঙ শিকার’ ও ‘শাকপাতা জোগাড়’ করে আহার করার এবং দুপুরের আগেই ‘হাঁড়িয়ার নেশায়’ বুঁদ হয়ে যাওয়ার সাক্ষী ছিল, সেই এলাকাই এই প্রথমবার স্নাতক ডিগ্রীর স্বাদ পেল রমনিতা শবর-এর হাত ধরে।যে এলাকায়, কোনো মেয়ের ১৫-১৬ বছর বয়স হলেই বিয়ের সানাই বেজে যেত, সেখানেই শুনতে পাওয়া গেল শিক্ষার অধ্যায় শুরু হওয়ার শঙ্খধ্বনি। তাঁর বিভিন্ন সংঘর্ষকে সম্মান দিয়েই আদিবাসী জাতির মধ্যে বিশেষ করে নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য জঙ্গল মহলের নারীশিক্ষার আইকনরূপে দেখা হচ্ছে রমনিতা শবরকে।জানা গেছে, রমনিতা শবর পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল বরাবাজার ব্লকের সিন্দরি গ্রাম পঞ্চায়েতের ফুলঝোর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি শিক্ষার প্রাথমিক পাঠ নেন শিশু থেকে। এরপরে, ঝাড়খন্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার চৌকা থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন এবং উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন পুরুলিয়া শহরের কস্তুরবা হিন্দি বালিকা বিদ্যালয় থেকে। তিনি হোস্টেলে থেকেই উচ্চ মাধ্যমিকের পাশ করেছিলেন। তারপরে, তিনি ইতিহাসে স্নাতক করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি স্নাতক ডিগ্রীর জন্য পূর্ব সিংভূম জেলার পটমদা ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। অবশেষে দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে তিনি স্নাতক পাশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেন।
উল্লেখ্য, তাঁর পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা। রমনিতার বাবা কখনও চাষবাস বা কখনও বা প্রাণীপালন বা হাতের কাজ করার মধ্যে পরিবারের পেট চালান। এই সমস্ত কাজ থেকে মাসে আয় হওয়া ৫০০০ টাকার মধ্যে ২০০০ টাকাই তাঁর মেয়ের হোস্টেল খরচের জন্য পাঠিয়ে দিত। এই দেখে পড়শিরা প্রশ্নও করতো, এত পড়ে কি হবে। এরকম হাজারও প্রশ্নের পরেও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ রমনিতা জানান, “অধ্যাপক হতে চাই। শবর জনজাতির মহিলাদের উচ্চশিক্ষার আলোয় নিয়ে আসায় আমার চ্যালেঞ্জ। যেদিনই এই কাজ করতে পারব, সেদিনই আমার প্রথম স্নাতক হওয়া সার্থক হবে”।