একের পর এক হিন্দুদের পবিত্র তীর্থধাম গুলোতে জঙ্গিরা নিজেদের আস্তানা গড়ে তুলছে যা ধর্মস্থানগুলোর নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত বিপদজনক। সম্প্রতি লখনৌয়ের সবগুলো মন্দিরকে পরপর বোমা বিস্ফোরণের হুমকির পর টনক নড়ে যোগী সরকারের যদিও উত্তর প্রদেশ সরকার এই বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক এবং পর পর এনকাউন্টারে গুন্ডা দমন হয়েই চলেছে।
পশ্চিমবাংলায় অবশ্য পরিস্থিতি উল্টো। তারাপীঠ ও তারকেশ্বর অঞ্চল যে শুধু সমাজবিরোধীদের আস্তানা তাই নয় জঙ্গিদের অবাধ বচরণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে ওই সব জনপ্রিয় ধর্মক্ষেত্র।
মুর্শিদাবাদের পর এবার হুগলির শৈবতীর্থ তারকেশ্বরে হদিশ মিলল জঙ্গি সংগঠন ‘আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট’ (একিউআইএস) মডিউলের। সূত্রের খবর দুই জঙ্গির পরিচয় সামনে এলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি এখনো পর্যন্ত।
বুধবার সকালে তারকেশ্বরের আস্তাড়া দত্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাজেমোড়া গ্রামে ওই মডিউলের সন্ধানে হানা দেয় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) লখনউ শাখার সদস্যরা। ওই অঞ্চলে জঙ্গিদের বেশ ভালো নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে এবং এর সুবাদেই নিরাপত্তা সংস্থার গোয়েন্দারা যাওয়ার আগেই বেপাত্তা হয়ে যায় একিউআইএস-এর দুই সদস্য নিজাম সরকার এবং সাদ্দাম হোসেন।
উলেখ্য, গত ১১ জুলাই উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউয়ের কাঁকরি এলাকা থেকে পাকড়াও করা হয় দুই একিউআইএস জঙ্গিকে। তিন দিন পর ধরা পড়ে আরও তিন জঙ্গি যাদের জেরা করেই তারকেশ্বরের নিজাম এবং সাদ্দামের খোঁজ পায় এনআইএ।
গত মাসেই হরিদেবপুর থেকে কলকাতা পুলিসের এসটিএফের জালে ধরা পড়েছিল তিন জেএমবি জঙ্গি। সেই মামলাও ইতিমধ্যে হাতে নিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এনআইএ সূত্রের বক্তব্য, পাক-আফগান সীমান্তে লুকিয়ে থাকা একিউআইএস প্রধান উমর হালমান্দির নির্দেশেই উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে জঙ্গি নেটওয়ার্ক।
এ কিউ আই এস মেধাবী পড়ুয়াদেরই বেছে বেছে সদস্য তাদের দলের অন্তর্ভুক্ত করছে। তারকেশ্বর মডিউলের মূল পান্ডা নিজাম সরকার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হলেও চাকরি ছেড়ে মানি মার্কেটিংয়ের ব্যবসা খুলেছিল সে এবং তার আড়ালেই চলত জঙ্গিদের জন্য তহবিল সংগ্রহ।
সেই টাকা বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করত নিজাম। পাকিস্তানের পেশোয়ার এবং কোয়েটা থেকেও অর্থ ঢুকত তার ব্যাংক একাউন্টে।
সহযোগী সাদ্দামের নামে একটি কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলে গোটা কারবারটি সামলাত নিজাম। এনআইএ-র ওই সূত্রটি আরও জানিয়েছে, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের হয়ে দু’জনে চরবৃত্তি চালাত বলেও প্রাথমিক অনুমান তদন্তকারীদের।
ওসামা বিন লাদেন প্রতিষ্ঠিত আল কায়েদার ভারতীয় শাখা এই একিউআইএস পশ্চিমবঙ্গে অত্যন্ত সক্রিয়। মালদা, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং হাওড়ায় ব্যাপকভাবে সদস্য বারবার কাজ করছে ওই আল কায়দার শাখা।
এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইদানীং আল-কায়েদা তাদের শাখার নামকরণ হয়েছে আনসার-গাজওয়াত-উল-হিন্দ। তাদের উদ্যেশ্য ভারতকে গাজোয়া-তুল-হিন্দ অর্থাৎ ইসলামিক খিলাফত বানানো।
গত মাসেই লখনউয়ের কাঁকরি থেকে একিউআইএস-এর দুই জঙ্গি মিনহাজ আহমেদ এবং মাসিরউদ্দিন ওরফে মুসিরকে গ্রেপ্তার করেছিল উত্তরপ্রদেশের অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড (এটিএস)। উদ্ধার হয় প্রেসার কুকার বোমা। এটিএস অভিযানের আগেই সেখান থেকে চম্পট দেয় শাকিল নামে আরও এক জঙ্গি। পরে অবশ্য তাকে গ্রেপ্তার করে এটিএস। তার সঙ্গেই ধরা পড়ে মুস্তাকিন এবং মুইদ নামে আরও দুই জঙ্গি। এটিএস-এর দাবি, স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে লখনউ সহ আরও কয়েকটি জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানোর ছক ছিল ধৃত জঙ্গিদের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে গত ২৮ জুলাই মামলাটির তদন্তভার নেয় এনআইএ। তারা নতুন করে মামলাটি (আরসি-০২/২০২১) শুরু করেছে। লখনউয়ে ধৃত জঙ্গিদের জেরা করেই তারকেশ্বরের এই মডিউল এবং তার দুই সদস্যের নাম সামনে আসে।
বুধবার সকাল ন’টা থেকে টানা ছ’ঘণ্টা ধরে বাজেমোড়া গ্রামে নিজাম ও সাদ্দামের বাড়িতে তল্লাশি চালায় লখনউ এনআইএ-র টিম। সঙ্গে ছিল তারকেশ্বর থানার পুলিসও। বেশ কিছু নথিপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।