ইতিহাস বলছে নেহেরুর সৌজন্যেই চীনের অনুপ্রবেশ অরুণাচলে, কিন্তু এখন কতটুকু সুরক্ষিত ভারতের পূর্ব সীমান্ত?

স্যাটেলাইট ছবি অনুযায়ী সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশে ঢুকে চিন একটি গ্রাম বানিয়েছে এবং এই খবর সামনে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে ।
এই ঘটনাটি যথেষ্টই শোরগোল ফেলেছে। এই গ্রামটি অরুণাচলের জারি চু নদীর পাশে আপার সুবনসিরি জেলার লংজুতে অবস্থিত। সূত্রের খবর, এখানে প্রায় 101 টি পরিবার নিয়ে একটা গ্রাম বানিয়েছে চিন । এই ব্যাপারে রাহুল গান্ধী মারফত বিজেপি তথা মোদী কে কটাক্ষ করতেও ছাড়েনি কংগ্রেস । তবে বিজেপির তরফে বলা হয়েছে যে চিরকাল অরুণাচল প্রদেশ কে ‘দক্ষিণ তিব্বত ‘ এর অংশ বলেই দাবি করে এসেছে চিন । তাই চিন সবসমই এখানে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করে এসেছে ও আসবেও । বিজেপি ও বর্তমান ভারত সরকারের বক্তব্যও এক । এই বক্তব্যকে সম্মতি দিয়েছে সেনাবাহিনীও।
তবে এই প্রসঙ্গে একটা প্রশ্ন করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল বাগচি যিনি বিদেশে মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স এর উচ্চপদস্থ অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন, বলেন এখন সময় এসে গেছে পূর্ব সীমান্তের দিকে অতিরিক্ত নজরদারির ।
“পূর্ব সীমান্তে এবার চীনের বিশেষ নজর, সুতরাং এবার নজরদারি বারবার সময় এসে গেছে । সরকার এই বিষয়ে সতর্ক এবং তা এই সরকারের মিলিটারি আউটলুক দেখেই বোঝা যায়, কিন্তু প্রতিনিয়ত নজরদারি বাড়াবে আশা করি,” কর্নেল বাগচি বলেন।

মূল সমস্যা নেহেরুর অবিবেচক ও উদাসীন মনোভাব :
অভিযোগ অরুণাচল প্রদেশে চীনের অনুপ্রবেশের কারণ নেহেরুর অত্যন্ত অবিবেচক, উদাসীন, গাছাড়া মনোভাবের জন্য।

অরুণাচল প্রদেশে বহু বছর সুনামের সাথে কাজ করা সিনিয়র সেনা অফিসার, ব্রিগেডিয়ার জন ডালবির একটি বিখ্যাত বই আছে যার নাম, “হিমালয়ান ব্লান্ডার ” ।
এই বইটি প্রকাশ হয়েছিল 70 এর দশকে । এই বইটি যেন প্রকাশ না পায়, তার পূর্ণ চেষ্টা করেছিল কংগ্রেস । কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা প্রকাশ পায় । এই বইতে বিশদ ভাবে লেখা আছে কি ভাবে নেহেরুর আমলে তৎকালীন ভারত সরকার কতটা উদাসীন ছিল চিন তথা ভারতের সুরক্ষা নিয়ে ।
জন ডালবি ওই বই ( pg 47)তে কিছু নথি পেশ করেন, যাতে দেখা যায় 28 শে অগাস্ট, 1959 এ নেহেরু সংসদ এ বক্তব্য রেখে বলছেন, ” আমার কাছে খবর আছে 200 রো বেশি চীনা সেনা অরুণাচল প্রদেশের শুভসিনি ডিভিশনের লংজু ঢুকে পড়ে আমাদের বেশ কিছু সেনাকে খতম করে এলাকাটা দখল করে নিয়েছে, আমরা কিছুই করতে পারিনি । “
এর পর এই নিয়ে সংসদ এ প্রবল বিতর্ক হয় । নেহেরুর এই বক্তব্য নিয়ে বিশিষ্ট সমাজতান্ত্রিক নেতা, এন জি গোরে, সেই সময় সংসদ এ নেহেরু কে পাল্টা প্রশ্ন করেন যে এই বিষয়ে। প্রথমে ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন নেহেরু, বলেন ” এই বিষয়ে আমি এই মুহূর্তে কিছু বলবো না । “

নেহেরুর এই বক্তব্য মেনে নিতে না পেরে নেহেরুর উপর পাল্টা চাপ তৈরী করেন অটল বিহারি বাজপেয়ী। তিনি বলেন, ” দেশের মানুষ জানতে চায় তাঁদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী র প্রতিক্রিয়া, সেই অধিকার তো তাঁদের আছে। “
বাজপেয়ী র চাপে অবশেষে বক্তব্য রাখতে বাধ্য হন নেহেরু ।
তিনি বলেন, “চীনের এই হেনো কাজের জন্য আমি চিন কে মোটেই সাধুবাদ জানাতে পারছিনা, আবার এই বিষয়ে চীনের সমালোচনাও করছিনা । চীনের এই আগ্রাসনের ব্যাপার টি যে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এমনটাও আমি মনে করিনা ।”

নেহেরুর এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা সেই সময় হয় সংসদ এ ও তার বাইরেও ।

ফলে একটা ব্যাপার জলের মতো পরিষ্কার যে, বিজেপি নয়, নেহেরু তথা কংগ্রেস এর লাগাম ছাড়া উদাসীনতা ও দুরোদর্ষিতার অভাবের ফলেই অরুণাচল সহ লাদাখ ও ভারতের বিভিন্ন বর্ডারে চিন তথা পাকিস্তানের বিবাদ লেগেই চলেছে ভারতের । প্রশ্ন হচ্ছে, ভারত কতদিন আর নেহেরু তথা কংগ্রেস এর একের পর এক ভুলের মাশুল দিয়ে যাবে? মোদী সরকারের কর্মপন্থার দিকে জনগণের নজর রয়েছে সর্বদা বিশেষ করে পাকিস্তানে সার্জিকেল স্ট্রাইক এর পর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.