ভোডাফোনকে ডুবিয়ে আম্বানিদের জিওকে ফাকা মাঠে গোল দেবার ব্যাবস্থা করেছেন কে? যে কোন বাঙালী কোন রকম চিন্তা না করে উত্তর দেবেন, ‘নরেন্দ্র মোদী’ l কিন্তু সঠিক উত্তর কি? উত্তর একামদ্বিতীয়ম, স্বর্গীয় প্রণব মুখার্জী মহাশয় l একজন নিপাট বামপন্থী বঙ্গসন্তান l আর, এই সপ্তাহে ভোডাফোনকে এক বড় অন্যায় ও অবিচারের হাত থেকে বাঁচিয়ে নতুন জীবন দিলেন নরেন্দ্র মোদী, যা আগামী দিনে মুকেশ আম্বানির জিওকে কড়া টক্করে ফেলতে পারে l কিন্তু কি ঘটেছে ভোডাফোনের সঙ্গে? ধরুন একজন ভাড়াটে তিন বছরের জন্য ভাড়া নিয়েছে l দুই বছর পর কি বাড়িয়ালা ভাড়া বাড়িয়ে আগের দুই বছরের অতিরিক্ত বকেয়া ভাড়া চাইতে পারেন? বামপন্থী বাঙালী হলে নিশ্চই পারেন; যিনি ‘রাষ্ট্রই সর্বশক্তিমান’ তত্বে বিশ্বাসী l আর সেটাই করে গেছেন প্রণববাবু l
2007 ই ভোডাফোন হাচের থেকে তাঁদের টেলিকম কোম্পানি কিনলে, আয়কর দপ্তর তাঁদের থেকে ক্যাপিটাপ গেইন কর বাবদ টাকা দাবী করেন l ভোডাফোন বলে এই ডিল দুটি বিদেশী কোম্পানির মধ্যে হয়েছে অন্য দেশে এবং 1961 সালের ভারতের আয়কর আইন অনুযায়ী, ভারত সরকারের এক্ষেত্রে কোন দাবী নেই l প্রথমে হাই কোর্টে হারলেও, সুপ্রিম কোর্টে জিতে যায় ভোডাফোন l এই সময়, আয়কর আধিকারিকরা স্মরণাপন্ন হন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জীর কাছে l
ইন্দিরা গান্ধীর প্রিয়পাত্র প্রণব মুখার্জী সম্পর্কে প্রথমেই একটা কথা বলে নেয়া উচিৎ এক্ষেত্রে l আমার এই লেখা পড়লে অনেকেই হয়তো ঢোক গিলবেন l প্রণব মুখার্জী কোন দিন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের হয়ে সংসদীয় রাজনীতি করেন নি l উনি রাজনীতি শুরু করেন বাংলা কংগ্রেস থেকে l তারপর কংগ্রেস (R) এর সাংসদ হন এবং ইন্দিরা কংগ্রেসের মন্ত্রী l আজকের জাতীয় কংগ্রেস কিন্তু 1978 ই তৈরি সেই ইন্দিরা কংগ্রেস l 1885 র জাতীয় কংগ্রেস নয় l এখন এই কংগ্রেস আর এবং ইন্দিরা কংগ্রেস দুটোই কেজিবির অনুপ্রেরণায় তৈরি দুটি বামপন্থী দল, যার একজন মুল চিন্তক ছিলেন প্রণববাবু l তাই রাষ্ট্রই যে সর্বশক্তিমান সেটা তিনি শেষ বার অর্থমন্ত্রী হয়েও বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন l নরসিমা রাও এবং অটলবিহারী বাজপেয়ীর সাফল্য তার মনে কোন দাগ কাটেনি তিনি আবার বুঝিয়ে দিলেন দ্বিতীয়বার অর্থমন্ত্রী হয়ে l কি করলেন প্রণব বাবু?
রেট্রোস্পেক্টিভ ট্যাক্স আইন 2012 নামে একটি আইন এনে বললেন, আগের আইন ভুল ছিল l ভোডাফোনসহ সব বিদেশী কোম্পানিকে এই আইন অনুযায়ী আগের বছরের ট্যাক্স দিতে হবে l ব্যাপারটা কেমন? এই বছর আমি ধরাযাক আয়কর দিলাম 20% হারে l পরের বছর নতুন সরকার এসে সেটি বাড়িয়ে 40% করে বললো, আগের বছরের আয়কর বেড়ে গেছে l তুমি ব্যাংকে জমানো টাকা থেকে সরকারকে গত বছরের বকেয়া কর দাও l কিম্বা, ধরাযাক আমি একটা বাড়ি তিন বছরের জন্য ভাড়া নিয়েছি 5000 টাকায় l দুবছর পর মালিক এসে বললো, জিনিসের দাম বেড়েছে l গত দুই বছরের ভাড়া আমি 6000 করে দিলাম l তুমি আমাকে এখুনি বকেয়া 24000 দাও l অবাস্তব মনে হলেও, বামপন্থী এবং ইন্দিরা গান্ধীর প্রিয়মানুষ প্রণববাবু সেটাই করলেন l ভোডাফোনকে বহু টাকা কর দিতে হল যা 1961 সালের আয়কর অনুযায়ী আয়কর দপ্তরের প্রাপ্য নয় l কোম্পানি প্রায় বসে গেল l কয়েক লক্ষ মানুষ হারাল চাকরি, যাদের দুঃখের কথা ‘রানার’ দের মত লেখার কোন কবি সুকান্ত নেই l
এর সঙ্গে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারালো ভারতের আইনব্যাবস্থার থেকে l উপরোক্ত বাড়িয়ালার কাছে জেনেশুনে আর কেউ ভাড়া নেবে? মনমোহন সিং, প্রণব মুখার্জীরা যাবার আগের নতুন সরকারের কাছে বেশ কিছু প্রাচীর তুলে দিয়ে যান l যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, 2012 র রেট্রো কর আইন এবং 2013 র জমি আইন l নতুন সরকার এই ধরনের আইনের নাগপাশে আটকে পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং শিল্প বিনিয়োগে ভীষনভাবে মার খেয়েছে l এর প্রভাব পড়েছে আর্থিক বৃদ্ধির হারে l জিওর মত কিছু নতুন কোম্পানি এর সুবিধা পেয়েছে l দোষ পড়েছে সেই একটা লোকের l অপরাধ গুজরাটি হওয়া l. অথচ পুরো খেলা খেললেন এক বামপন্থী বঙ্গসন্তান l
গত সপ্তাহে এই আইন তুলে দিলেন মোদীজি l সরকারের আরও একটি বড় ইতিবাচক সংস্কার স্বচ্ছতার দিকে l ভারতকে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের সেরা গন্তব্য বানানোর পথে আরও একটি পদক্ষেপ l
- সুদীপ্ত গুহ