মরুতীর্থ হিংলাজ

মরুতীর্থ হিংলাজ সিনেমাটির নাম অনেক বাঙালির জানা হলেও তার থেকে কম সংখ্যক মানুষই হয়তো অবধূতের লেখা উপন্যাসটা পড়েছেন – এটা আমার আন্দাজ হলেও মনে হয় খুব একটা ভুল নয়।

গানগুলো দারুন লাগে। কালিকানন্দ অবধূতের লেখার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় উদ্ধারণপুরের ঘাট থেকে, তারপর মরূতীর্থ হিংলাজ, হিংলাজের পারে, বশীকরণ পড়ে এখন বহুব্রীহি পড়ছি।

Currently পড়ছি বলেই যে ভালো বলব তা নয়, মরূতীর্থ হিংলাজ পড়তে বসে ছাড়তে পারিনি। উদ্ধারণপুরের ঘাট পড়ে মনে হয়েছিল জায়গাটা সত্যি করে আছে কিনা দেখে আসি – পড়তে পড়তে অন্য একটা দুনিয়ায় চলে গেছিলাম, শ্মশানকে এভাবেও দেখা এবং পাঠকদের দেখানো যায় এটা এই বইটা না পড়লে জানতে পারতাম না।

গুগল পড়ে জানলাম লেখকের জীবনের নানা তথ্য, যেগুলো ওনার লেখার থেকে কম বৈচিত্র্যপূর্ণ নয় কোনো অংশে! দুই স্ত্রী, যৌবনে পুলিশের হাত থেকে স্বদেশী করার অপরাধে পালানো, সুদীর্ঘকাল হিমালয়বাসের পড়ে আবার ফিরে আসা। সাহিত্যিক তারাশঙ্করের অনুপ্রেরণায় নিজের জীবনের অর্জিত অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখালিখি শুরু, সেই লেখা ছেপে বেরোনোর পর বাড়ির লোক জানতে পারে তিনি এখনও বেঁচে আছেন! শেষ জীবনে আমাদের হুগলি জেলারই চুঁচুড়াতে জমি কিনে বাড়ি করেছিলেন, স্থাপনা করেছিলেন রুদ্রচন্ডী মঠ। দ্বিতীয় স্ত্রী ভৈরবীর মৃত্যুর পর আর বেশিদিন বাঁচেন নি অবধূত। শেষের দিকে বেড়ে গেছিল মদ্যপান, ছেলের সাথেও মতানৈক্য ছিল। প্রসঙ্গত জানাই, এই ভৈরবীর নামে চরিত্র রয়েছে মরূতীর্থ হিংলাজ আর হিংলাজের পারে উপন্যাসে – আর কোথাও আছে কিনা জানা নেই, কারণ এখনও সব লেখা পড়িনি।

বেশ উৎসাহিত হয়েছিলাম যে একদিন চুঁচুড়ার অবধূতের সেই মঠ দেখতে যাবো। কিন্তু গুগল হতাশ করছিল – অনেক খোঁজার পর একজনের ব্লগ থেকে পড়লাম সেই মঠের মালিকানা হস্তান্তরিত।এবং সেটা খুব সম্ভবতঃ এখন কারোর বসতবাড়ি। গঙ্গার তীরেই ছিল বাড়িটি, যার ঠিক পাশের বাড়িতে বসেই বঙ্কিমচন্দ্র লেখেন বন্দেমাতরম গানটি। সরকারের কৃপায় সেটিকে সংরক্ষণ করা হলেও ঠিক তার পাশেই অবধূতের বাড়িটি কথা মনে রাখেনি কর্তপক্ষ।

অবধূতের সব লেখাই হয়তো মরূতীর্থ হিংলাজের সমকক্ষ নয়, তাও বলব, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অবধূত তার প্রাপ্য মর্যাদা পাননি। নেটে দেখলাম ওনার লেখা নিয়ে সমালোচনা হত তাতে তান্ত্রিক যৌনাচারের উল্লেখ থাকার জন্য। অবশ্য অবধূতের লেখা পড়ে মনে হয়না উনি এসব সম্মানের ব্যাপার স্যাপার নিয়ে খুব একটা ভাবতেন (ওনার লেখা গল্পের কথক চরিত্রগুলো পড়ে এমনটা মনে হয়েছে আমার)।

এভাবেই হয়তো শুধু মুষ্টিমেয় কিছু মানুষকেই আমরা মনে রাখি, বাকিরা সময়ের সাথে চলে যেতে থাকে বিস্মৃতির আড়ালে। লেখক, অভিনেতা, রাজনৈতিক নেতা – স্পটলাইট এক না এক সময় সময়ের অমোঘ নিয়মে সরে যায় মুখের ওপর থেকে। শুধু কি সেলেব্রিটি ? আমাদের নিজেদের জীবন, নিজেদের পরিবারেও কি তা হয়না? বৃদ্ধ ঠাকুমার স্থান হয় বাড়ির সবথেকে কোণের ঘরটিতে ,- কথা বলার জন্য কেউ থাকেনা।

যাক, কি বলতে গিয়ে কি বলছি এসব।

ভালো থাকবেন সবাই। যদি না পড়ে থাকেন, অবধূতের লেখা পড়ে দেখবেন – হয়তো ঠকবেন না।

রুদ্রপ্রসাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.