” রাজ্যের ২২০ জন প্রাক্তন মাওবাদীকে সাড়ে বাইশ হাজার টাকা বেতনের স্পেশ্যাল হোম গার্ডের চাকরি দিলেন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী’
এই প্রসংগে আমার ব্যক্তিগত অভিমতঃ-
রাষ্ট্রবিরোধি নাশকতামুলক জংগি কার্যকলাপের সাথে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের সমাজের মুল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্যে রাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে তাদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করেছে।বহু ক্ষেত্রেই দেখা গেছে বিভিন্ন রাজ্যে জংগিরা অস্ত্র সহ স্বেচ্ছায় আত্ম সমর্পন করেছে।সেই তালিকায় রাজনৈতিক জংগি সংগঠনের সদস্যরা যেমন আছে তেমনি আছে চম্বলের একদা কুখ্যাত নৃশংস খুনি-ডাকাতরাও। উল্লেখ্য ফুলন ( দেবী কথাটা জুড়তে আমার আপত্তি আছে), যে পরবর্তিকালে সাংসদ নির্বাচিতও হয়েছিল। এই ধরনের জংগিদের রাষ্ট্র বিশেষ সুযোগ সুবিধার প্যাকেজ উপহার দিয়ে এক অর্থে জংগি কার্য কলাপের প্রকোপ কমানোর চেষ্টা করে থাকে।এটা ঠিকই ভ্রান্ত ধারনার বশবর্তি হয়ে জংগি কার্য কলাপের সাথে যুক্ত হওয়া ভারতের কোন নাগরিকের সাথে পাকিস্থান বা ভিন দেশ থেকে আগত জংগির মধ্যে পার্থক্য আছেই। রাষ্ট্র অবিভাবক হিসাবে তার বিভ্রান্ত নাগরিকেদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার যে কোন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতেই হবে।কিন্তু ফারাকটা একটা জায়গায়।এক জন জংগি সে তার কার্যকলাপ ভুল বুঝতে পেরে অস্ত্র সহ আত্ম সমর্পন করছে, আর এক জন জংগি পুলিস বা সামরিক বাহীনির দ্বারা ধৃত হয়েছে।এই দুই শ্রেনীর মধ্যে ফারাকটা আছেই।আত্ম সমর্পনকারীর প্রতি যে ক্ষমা প্রদর্শন বিবেচ্য হতে পারে সেটা ধৃত জংগির ক্ষেত্রে হতে পারে না।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে ২২০ জন প্রাক্তন মাওবাদী জংগিদের সরকারি চাকরি দিলেন তারা কি সবাই অস্ত্রসহ আত্ম সমর্পন করেছিল প্রশাসনের কাছে নাকি এরেস্ট হয়েছিল??না তা নয়।
কেন না এদের মধ্যে খুবই স্বল্প সংখ্যক প্রাক্তন মাওবাদী আছে যারা মাওবাদী স্কোয়াড থেকে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে প্যাকেজের আওতায় এসে এই চাকরি পাচ্ছেন। এইসব প্রাক্তন মাওবাদীদের জন্যে কেন্দ্র বা বিভিন্ন রাজ্যের সরকার যদি মাথার দাম ঘোষনা করে থাকে তবে তাদেরকে আলাদা ভাবে দু’লাখ টাকার স্থায়ী আমানত করে দেওয়া হয়েছে তিন বছরের জন্য। তবে এই স্থায়ী আমানত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপার ও আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের নামে যৌথভাবে রয়েছে। যাতে আক্ষরিক অর্থেই প্রয়োজন ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগে ওই টাকা তুলতে না পারেন। তাছাড়া ওই টাকা তুলতে গেলে পুলিশ সুপারের মতামতও নিতে হবে। ২২০ জনের তালিকায় এই ধরনের আত্ম সমর্পনকারী কজন সেটা কিন্তু রাজ্য সরকার জানান নি।বরং এই তালিকায় প্রত্যক্ষভাবে মাওবাদী কাজের সাথে যুক্ত ছিল না শুধু মাত্র লিংক ম্যানের কাজের সাথে যুক্ত ছিল এমন লোকেরাও ২২০ জনের তালিকায় ঠাই পেয়েছে তা রাজ্য সরকার জানিয়েছেন।
সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা যে এই রাজ্যের যে শীর্ষ ছয় মাওবাদী নেতা যারা আমাদের রাজ্যের জঙ্গলমহলের ‘গ্যাং অফ সিক্স” নামে কুখ্যাত তাদের কাউকেই আত্ম সমর্পন করাতে পারে নি প্রশাসন!!! ফলে এ রাজ্যের জঙ্গলমহলের ‘গ্যাং অফ সিক্স’কে নিয়ে মাথাব্যথা থেকেই গেল প্রশাসনের। এই গ্যাং অফ সিক্স “রক্ত বীজের ঝাড়ের” মত আগামী দিনে আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে না তার কোন নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারবেন না।
এই রাজ্যে বিগত এক দশক ধরে রাজ্য সরকারের চাকরি বন্টনে দুর্নীতি নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টের বিভিন্ন পর্যবেক্ষন এবং রায়ের মধ্য দিয়ে আমরা সবাই সেই সব দুর্নীতির কথা জেনেছি। এই ২২০ জন সবাই যে প্রাক্তন মাওবাদী তার মধ্য কোন “জাল মাওবাদী” নেই তো???? রাজ্যে এখন তো সব জাল-বাবুদের খবর আসছে একে একে!!!
আরেকটা কথা এই লেখার মধ্যে উল্লেখ করতেই হচ্ছে।অন্যথায় আমার মানবিক চেতনার বৃত্ত অসম্পুর্ন থেকেই যাবে। এই রাজ্যে জংগল মহলে মাওবাদীদের হাতে যে অসংখ্য মানুষ নিহত বা আহত হয়েছিলেন তাদের পরিবার-পরিজনকে রাজ্য সরকার কি কোন চাকরির ব্যবস্থা করেছেন আজ পর্যন্ত????বিশেষ করে যারা পুলিস প্রশাসনকে সাহায্য করেছিলেন মাওবাদীদের বিরুদ্ধে এবং সেই কারনে মাওবাদীদের হাতে খুন হয়েছিলেন।যদি সেটা না করে থাকে তবে রাজ্য সরকারের এই নীতিকে ” সামাজিক ভারসাম্যহীন নীতি” বলেই আখ্যায়িত করে তীব্রভাবে নিন্দা করব।প্রতিটি নাগরিকের জীবন এবং সম্পদের নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্র বাধ্য।যদি সেই নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় তবে তার জন্যে ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিটি পরিবার রাষ্ট্রীয় ক্ষতিপুরন পাওয়ার অধিকারি ন্যাচারাল জাস্টিসের থিয়োরি মেনে। তাই মাওবাদী জংগিদের চাকরির ব্যবস্থা করার আগে রাজ্য সরকারের উচিত মাওবাদীদের হাতে নিহত বা স্থায়ীভাবে সম্পুর্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিবারকে সরকারি চাকরি প্রদান করা।উলটে শুধুমাত্র খুনি প্রাক্তন মাওবাদী জংগিদের চাকরির ব্যবস্থা যদি রাজ্য সরকার করে তবে তা জংগিদেরই বাহবা দেওয়া হবে পক্ষান্তরে।এটা এই রাজ্যে উচ্চ শিক্ষিত, শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের হতাশাগ্রস্থ করে তুলবে।যেই রাজ্যে ১০০ জন ইঞ্জিনিয়ার ১৫০০০ টাকার মাসিক বেতনে একটা সরকারি হাসপাতালের অস্থায়ী ডোম পদের জন্যে আবেদন করেন সেই রাজ্যে এই ভাবে শুধু মাত্র জংগি বলে মাসিক ২২৫০০ টাকা বেতনের স্থায়ী সরকারি চাকরি প্রাপ্তী কোনভাবেই সমর্থন যোগ্য নয় । তবে কি আজ শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়েও বড় হল মানুষ খুনের যোগ্যতা!!!??? এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে??????
পরিশেষে সিরিয়াস আলোচনার মধ্যেও আমার স্বভাব সুলভ রসিকতা করে বলব— ” এরা সবাই খাটি প্রাক্তন মাওবাদী তো? নাকি এখানেও জালি মাওবাদীদের সন্ধান মিলবে পরে? তবে রাজ্য সরকার এদের নিয়ে এতটাই মাতামাতি করছেন দেখে মনে এরা যেন সব প্রাক্তন স্বাধীনতা সংগ্রামী!!”
“Where do you see yourself in five years?
Obviously in College.
To enrich my knowledge
Nope! Better to move in jangal with deadly weapon.
Obviously you will get a Govt job by the virtue of Administrtion “
★Written by
G.C Mandal, Advocate
High Court at Calcutta
From Tollygunj
Ph 9830856567