ক্রিপ্টোকারেন্সি-র পাসওয়ার্ড লুকিয়ে ফেলুন আপনার ডি এন এর মধ্যে

আপনার বিটকয়েন তথ্য  নিরাপদ রাখতে চান? তাহলে আজকেই  DNA এর একটি মাইক্রো টিউবের ভিতরে আপনার পাসওয়ার্ড লুকান।

সত্যি!! কার্ভার নামে একটি স্টার্টআপ সংস্থা ,  গ্রাহকদের ডিজিটাল অর্থ সুরক্ষার জন্য সেই পরিষেবা প্রদান করে।

ক্রিপ্টোকারেন্সির ঝুঁকিপূর্ণ সিস্টেমের মধ্যে এটি  একটি  ইউনিক  বীমা পলিসি –  যা জেনেটিক্স গবেষণার একটি নতুন ক্ষেত্রকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে: এখানে ডেটা সংরক্ষণের উপায় হিসাবে সিনথেটিক ডিএনএকে  ব্যবহার করা হয় । বিজ্ঞানীরা যেকোনো কিছুই ডিএনএ -তে সংরক্ষণ করতে পারেন, সেটা ওয়ার্ড ডক, অ্যানিমেটেড জিআইএফ, অপারেটিং সিস্টেম।  যদিও ব্যাপারটা  অদ্ভুত বলে মনে হচ্ছে, তাও এটি একটি আমাদের নজরদারির ঘেরাটোপের  বিকল্প হয়ে উঠতে পারে কারণ আমরা আমাদের ক্রমবর্ধমান ডেটা সংগ্রহ ও তার স্টোর করার জন্য অত্যন্ত গোপনীয় সিস্টেমকে ব্যাবহার করছি বা করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি । “কার্ভার “এর  সিইও এবং সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিশাল ভূঁয়া স্বীকার করেছেন যে এই সিস্টেম অস্বাভাবিক  মনে হলেও  , কিন্তু  এটিকে একটি ভিন্ন ধরনের এনক্রিপশন টুল হিসাবে দেখলে দেখা যাবে – এটি দীর্ঘ মেয়াদী এবং হার্ড ড্রাইভে আপনার অ্যাকাউন্টের বিবরণ সংরক্ষণের চেয়েও বেশি নিরাপদ। ভূঁইয়া বলেন, ২৮ জন গ্রাহক এখন পর্যন্ত এতে  সাইন আপ করেছেন এবং এটি করার জন্য $ 1,000 টাকা  প্রদান করেছেন। কার্ভার ব্যাংক  অন্যান্য বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি হোল্ডিং কোম্পানির সাথে এই পরিষেবা সম্প্রসারণের জন্য আলোচনা করছে।
একটি ডেটা ফাইলকে ডিএনএতে রূপান্তর করা একটি আশ্চর্যজনকভাবে সহজ ধারণা। ডেটা, যখন একটি মৌলিক বাইনারি আকারে বিভক্ত হয়, এটি কেবল শূন্য এবং একটা বাঞ্চ হিসেবে থাকে। ডিএনএ চারটি বেস পেয়ার নিয়ে গঠিত: এ, টি, সি এবং জি – নিউক্লিওটাইডগুলির সংক্ষিপ্ত রূপ । যদি বাইনারী সিস্টেমকে ডিএনএ এর নিজস্ব ভাষায় রূপান্তর করতে হয়, তাহলে একটি সাধারণ কনভার্সন সিস্টেমের প্রয়োজন হবে ।
ধরা যাক , DNA এর চারটি বেস – A,T,C,G
যদি A= 00,
        T= 01
         C= 10
        G= 11 হয়, তাহলে স্ট্রিং 11000101001000 রূপান্তরিত হবে GATTACA তে।

বর্তমান সময়ে ল্যাব থেকে ডিএনএ এর রাসায়নিক উপাদান গুলির প্রিন্ট খুব সহজেই বের করা যায় ,যে যেমন চাইবে ,সেটা GATTACA , ATCCGAC , TAGCATGA  অথবা আরোও বড় কিছু হতে পারে । এই সিস্টেম  কেবল একটি প্লাস্টিকের মাইক্রো টিউবের  সেট করা  থাকে, যতক্ষণ না এটি ল্যাব-সিকোয়েন্সিং মেশিন দিয়ে  রিড  করা না হচ্ছে, যে কোন মুহুর্তে, বেস পেয়ারিং  কোডগুলি আবার ও শূন্যে রূপান্তর করা যেতে পারে।কার্ভারের গ্রাহক হল সেই ধরণের ব্যক্তি যিনি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে এই বিনিয়োগ কে  ধরে রাখার পরিকল্পনা করেছেন। তার মানে তাদের একটি নিরাপদ ব্যাকআপ দরকার যা পুরনো হয়ে যাবে না। বিটকয়েনের তথ্য হার্ড ড্রাইভে সংরক্ষণ করা হল , এবং ২০-৩০ বছরের মধ্যে সেই ড্রাইভে এমন কিছু ঘটল যার ফলে সেই তথ্যগুলো  অ্যাক্সেস করা কঠিন হয়ে যেতে পারে।  এটি ডিএনএতে সংরক্ষণ করা থাকলে ,  প্রজন্মের পর  প্রজন্মের জন্য স্থায়ী হতে পারে। ল্যাবগুলিতে সর্বদা ডিএনএ এর সিকোয়েন্স  কে রিড করার
প্রযুক্তি রয়েছেই । DNA এর সিকোয়েন্স কে হাতিয়ার করে ডিজিটাল ফাইল সংরক্ষণ করার এই পদ্ধতি  একদম আধুনিক, যদিও তা ব্যায়বহুল । কিন্তু জেনেটিক্স রিসার্চ এর একটা বিশাল অংশের প্রতি বর্তমান পাঠরত গবেষক ছাত্রদের যে আগ্ৰহ বাড়বে এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই । সব ধরণের তথ্য কেই DNA এর মধ্যে এনকোড করা হয়েছে , হতে পারে এটা শর্ট মুভি ক্লিপ , একটা প্রসেসড লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম আবার আমাজনের গিফট কার্ড ও । কিন্তু ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, গবেষকদের ২ মেগাবাইট ডাটা বাঁচাতে প্রায় ৭,০০০ ডলার খরচ হয়েছিল , এবং এই ডাটা কে পুনরুদ্ধার করতে আরোও ২,০০০ ডলার খরচ হয়েছিল । ডিএনএ -তে ফাইল সংরক্ষণের চেষ্টা ক্রমবর্ধমান ডেটা স্টোরেজ সমস্যার একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে।  গবেষণা বলছে ২০২৫ সালের মধ্যে, মানুষ ১৬০  জেটাবাইট ডেটা উৎপাদন করতে পারে, অর্থাৎ প্রায় ১৬০ ট্রিলিয়ন গিগ।  একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে হার্ড ড্রাইভে ডাটা সংরক্ষণ করার জন্য মাইক্রোচিপ গ্ৰেড সিলিকন ব্যাবহার করা হবে না । এক গ্ৰাম সিন্থেটিক DNA এর মধ্যে , ২১৫ পিটাবাইট ডাটা স্টোর করা যেতে পারে , অর্থাৎ এই সাইজ হতে পারে ১০০ মিলিয়ন মুভির সাইজের থেকেও বেশি।

এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে , DNA এর মধ্যে পারিবারিক ছবির আ্যলবাম ও সংরক্ষণ করা যায়, অবশ্য এখনো প্র্যাকটিক্যালি পরীক্ষিত নয়। সংস্থা প্রদত্ত ফর্মুলা(যেখানে বাইনারী ট্রান্সলেটেড হয় DNA তে) , আমাদের দেওয়া উদাহরণ ” GATTACA” এর থেকেও বেশ অনেকটা জটিল , কিন্তু প্রসেসিং টা একই। এমনকি কোম্পানিকে আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রাইভেট কী দেওয়ারও প্রয়োজন নেই; এটি একটি এনক্রিপ্টেড সংস্করণ।

যদি কেউ ডিএনএ এর ভায়ালটিকে চুরি  করে, তাহলে প্রোটেকশন কি করে সিকিউর থাকবে,  তাদের কার্ভারের সিস্টেম এর A, T, C এবং G এর সিকোয়েন্স নাম্বারিং  জানতে হবে এবং তারপর আপনার এনক্রিপশনটি কীভাবে ক্র্যাক  করতে হবে তাও জানতে হবে। গোপনীয়তার একটি অতিরিক্ত স্তর হিসাবে, সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক লেনদেন “প্রোটনমেইল” নামক একটি এনক্রিপ্ট করা মেইল সার্ভিসের মাধ্যমে করা হবে।

।।সপ্তর্ষি।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.