আমাদের দেহে যে DNA আছে সেগুলি যদি ছাড়িয়ে সরলরৈখিক ভাবে সাজাতে পারতাম তবে তার মোট দৈর্ঘ্য হতো প্রায় ২০০০০০০০০০০ কি.মি.! পৃথিবী থেকে সূর্য পর্যন্ত ৫০ বারেরও বেশি আসা যাওয়া করলে যে দূরত্ব অতিক্রান্ত হবে, তার সমান।
আর DNA তে যে ইনফরমেশন আছে তা যদি লিপিবদ্ধ করা হয়, তবে তা হবে ৯০০ খণ্ডের বিশালাকার এনসাইক্লোপিডিয়ার সমান। যেখানে প্রতিটি খণ্ডের পৃষ্ঠা সংখ্যা হবে ৫০০।
আমাদের দেহে মোট কোষের সংখ্যা হলো ৩৭.২ ট্রিলিয়ন। সেন্সরি রিসেপ্টর আছে ১১০ মিলিয়ন। লৌহিত রক্ত কণিকা (RBC) আছে ৩০ ট্রিলিয়ন। শুধুমাত্র মস্তিষ্কেই নিউরন সংখ্যা ১০০ বিলিয়ন।
দেহে মোট ব্লাড ভেসেল আছে ৪২ বিলিয়ন, যা ৯৭০০০ কি.মি. লম্বা।
একটু চিন্তা করুন তো! সামান্য একটা হেডফোন অতি যত্ন করে রেখে দিলেও জট পাকিয়ে যায়। কিন্তু আপনার দেহের ৯৭০০০ কি.মি. ব্লাড ভেসেল কখনোই জট পাকিয়ে যায় না।
দীর্ঘ এই ব্লাড ভেসেলগুলো কী অদ্ভুত সুক্ষ্মভাবে তৈরি।
আশ্চর্য, অপরিসীম আশ্চর্য – একটা কোষের মধ্যে থাকা আট ফুটের মতো দীর্ঘ DNA গুলো কিভাবে প্যাকেজিং করা আছে একটা মাইক্রোস্কোপিক নিউক্লিয়াসের মধ্যে?
সামান্য একটা আলপিন তৈরির জন্য যে টেকনোলজি ব্যবহার করি তা মানুষের বহু প্রজন্মের অর্জিত জ্ঞানের সমাহার। আজকের এই উন্নত বিশ্বে কত দামী দামী ক্যামেরা আবিষ্কার হয়েছে কিন্তু মানুষের চোখের পরিবর্তে সমান দক্ষ ক্যামেরা তৈরি করতে পারা গেল কি?
একটা তিন বছরের বাচ্চার সমান এবিলিটি যুক্ত রোবোট তৈরির জন্য কয়েক হাজার ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ, মোটর ইন্টিগ্রেটেড চিপ, ক্যামেরা, সেন্সর, পাওয়ার সিস্টেম প্রয়োজন হয় তাও একটা বাচ্চার সমান প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনা।
অদ্ভুত, বড় অদ্ভুত মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা, যার বিকল্প কিছুই আসেনি, অনেকগুলো সুপার কম্পিউটারের যোগফলের সমান এই মানব মস্তিষ্ক। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করেও মানব মস্তিষ্কের 3 শতাংশ কর্মক্ষমতা যুক্ত কোন যন্ত্র তৈরি করা গেলনা।
সবই কি প্রকৃতির কম্বিনেশন পারমুটেশন এর খেলা? নাকি বিবর্তনবাদ, নাকি অতিজাগতিক কিছু আছে?
আর ঠিক এই কারণেই প্রকৃতির এই অত্যাশ্চর্য্য ইঞ্জিনিয়ারিং মার্ভেলকে মাঝেমধ্যে ঈশ্বরের দান বলেই মনে হয়!
Goutam Halder