তোলাবাজি নয়, গরু পাচার নয়, কয়লা পাচার নয়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরা গেলেন বাজার করতে । বাংলা সংবাদ মাধ্যমের উত্তেজনা দেখে মনে হচ্ছে ত্রিপুরায় সরকার গঠন করে মন্ত্রিসভায় কে কে জায়গা পাবেন তার তালিকা ফাইনাল করতে অভিষেক আগরতলা যাচ্ছেন ।
বাস্তবতাটা কি একবারও বাংলা সংবাদ মাধ্যম তলিয়ে দেখেছে ? বাংলায় যে সংখ্যালঘু ভোট মমতার ব্যাংক ব্যালেন্স তার সংখ্যাটা হচ্ছে ২৮ শতাংশ + । ত্রিপুরায় সেটা ৮.৬ শতাংশের কাছাকাছি । মমতা নজর করছেন জনজাতির দিকে যাদের জন্য ২০ টি সিট সংরক্ষিত । তাদের ভোট কুড়োতে গেলে স্বাধীন তিপ্রাল্যান্ড দাবী মেনে নিতে হবে । বাংলায় বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে চেঁচিয়ে ত্রিপুরায় তিপ্রাল্যান্ড এর পক্ষে যাওয়া মুশকিল ।
ত্রিপুরায় গতবার মমতা কম চেষ্টা করেন নি । ৬০ টি আসনের মধ্যে ১৬ টিতে তীব্র লড়াই করেছিল তৃণমূল । হাদ্দা হাড্ডি লড়াই করেছিল । সর্বোচ্চ যিনি ভোট পেয়েছিলেন তাঁর নাম মধুসূদন ত্রিপুরা । জোলাই বাড়ি থেকে দাঁড়িয়ে ৪৩৫ টি ভোট পেয়েছিলেন । ১১৬ থেকে ৪৩৫ এর মধ্যে সবাই ভোট সংগ্রহ করেছিলেন । রাজ্যে তৃণমূলের সংগৃহীত ভোটের শতাংশ ছিল ০.৩ শতাংশ । কংগ্রেস ভোট শতাংশ ছিল ১.৮ শতাংশ । নোটায় ভোট পড়েছিল ১৬ হাজারের কিছু বেশি, তৃণমূল ভোট পেয়েছিল ৬৯৮৯ টি । যেটা মোট ভোটের ০.৩ শতাংশ ।
বাংলা চ্যানেলগুলোর সঞ্চালিকাদের সান্ধ্য আস্ফালন সঙ্গে ওপরের এই তথ্য গুলো মেলে ? কেউ মেলাতে পারবেন ? তাহলে তারা এত লাফাচ্ছেন কেন ? শুধুই টি আর পির জন্য ? “বার্ক” তো এখন নেই । কে হিসেব মেলাবে ? এত হুল্লোড় কেন ? শুধুই তাঁর দৃষ্টি টানার জন্য ?
পাগলেও জানে লড়াইটা ত্রিপুরায় এখনও বি জে পি র সঙ্গে বামেদের । ৪৩.৫৯ শতাংশের সঙ্গে ৪২.২২ শতাংশের । সেখানে গণতন্ত্র নেই বলে অনেক হুল্লোড় হলেও বিপ্লব দেব সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্য ডি এ মিটিয়ে দিয়েছেন । কাউকে আদালতে যেতে হয়নি । পে কমিশনের নামে ছ্যবলামি করেন নি । প্যারা টিচারদের সরকারি স্বীকৃতি দিয়েছেন । যে হাজার দশেক স্কুল শিক্ষকদের বাম আমলে বে আইনি নিয়োগের জন্য কাজ চলে গিয়েছিল তাদের জন্য সরকারি চাকরির বিকল্প কর্মসংস্থান বিপ্লব দেবই করে দিয়েছেন । সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও রাজ্য সরকারকে এ ব্যাপারে হারানো যায়নি । আদালত রাজ্য সরকারকে মান্যতা দিয়েছে ।
বর্ডার স্টেট হওয়াতেও বিনয় মিশ্রদের উত্থান সেখানে হয়নি । কোন ভাইপো এখনো গরু পাচার, কয়লা পাচারে অভিযুক্ত নন । তোলাবাজির বাংলা রমরমা এখনও সেখানে সরকারি মান্যতা পায়নি । কোন পি কের পরামর্শ ছাড়াই বিপ্লব দেব রাজ্যটাকে নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন । কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিটি প্রকল্প ১০০ শতাংশ টেনে নিয়ে আসছেন । ভ্যাকসিন প্রায় ৯০ শতাংশ দেওয়া শেষ । একটি দেবাঞ্জন, সনাতন কিম্বা ভুয়ো আই এ এস, সি বি আই, সি আই ডি, আই পি এস সেখানে বাজারে এখনো নেই ।
আর সেই আবহেই অভিষেক যাচ্ছেন আগরতলায় সৌকত, কাইজার, জাহাঙ্গীর, আরাবুলদের খুঁজতে । যা তিনি বাংলার অলিতে গলিতে খুঁজে নিয়েছেন ইতিমধ্যেই ।
অভিষেক ত্রিপুরেশ্বরি মন্দিরে পুজো দিন । ০.৩ শতাংশের ভোটটাকে ৩ শতাংশে তোলা যায় কি না চেষ্টা করে দেখুন । ১.৮ শতাংশ পাওয়া একটা দুটো কংগ্রেস নেতাকে দলে ভেড়াতে পারেন কি না দেখুন ।
কিন্তু “বহিরাগত” ডাক শোনার আগে অভিষেক প্লিজ ফিরে আসুন । আমাদের কোন বাঙালিকে ভিন্ন রাজ্যের কেউ সেটা বলে ডাকলে আমাদের খুব খারাপ লাগবে ।
ওদিকে একটু নজর রাখুন ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)