লিসা হাবার্টের মতে লালকেল্লার ভিতরের জমিতে খননকার্য এবং গবেষণা শুরু হলে ভারতের ইতিহাসের এক সম্পূর্ণ অন্ধকার একটি অধ্যায় উন্মোচিত হবে

ভারতের প্রতিটি সৃষ্টি ও সমস্ত শিল্পকর্মই হিন্দু স্থাপত্য ও শিল্পসৃষ্টিকলার অন্যতম প্রদর্শন মাত্র। ৭৭২ থেকে ১৩১১ খ্রীষ্টাব্দ অবধি সময়কাল পৃথিবীতে ছিল হিন্দুযূগের স্বর্ন যূগ। তমসাচ্ছন্ন পৃথিবীর মানুষ ভারতকে স্বপ্নের চোখে দেখত। সোনার ভারতেকে একটি বার চাক্ষুষ করার জন্যে সুযোগ ও সুলুকের সন্ধানে থাকত বিশ্বের মানুষ। জ্ঞান – গরিমা – শিক্ষা – দীক্ষা এবং শিল্পে ভারত ছিল পৃথিবীর সেরা দেশ। হিন্দু ছিল পৃথিবীর সেরা জাতি। দুর্ভাগ্য ভারতের মানুষের । সেই গৌরবের ইতিহাসের কোন প্রমাণ তারা বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি। মোগল এবং খলজীর শাসন কালে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক্ করে দেওয়া সমস্ত প্রামাণ্য পুস্তকগুলি। কিন্তু ছদ্মনামের আড়ালে আজও জীবন্ত হয়ে বিরাজ করছে তাদেরই সৃষ্ট কিংবদন্তি গুলি।
হায়! হিন্দুর নিজেদের সৃষ্টিগুলিকেই হিন্দুরা বিচার করে মোগল – পাঠানের সাজিয়ে দেওয়া নামগুলি দিয়ে।
……… নিশ্চিত থাকুন এটি কোনো চাড্ডির দেওয়া ভাষন নয়। নিজের লেখা পুস্তক ‘Erbe’ তে এভাবেই ভারতের পরিচয় দিয়েছেন প্রখ্যাত পুরাতাত্বিক-ঐতিহাসিক এবং লেখিকা লিসা হাবার্ট মহাশয়া।

সত্যিই তো, ভাষ্কো-ডা-গামা কিংবা কলম্বাস যে দেশে বানিজ্যের স্বপ্ন নিয়ে সমুদ্রে পাড়ি দিয়ে ছিল সে দেশ তো সামান্য দেশ হতে পারে না। আলবেরুনী-ফা হিয়েন-হিউয়েন সাং দের মতন প্রবুদ্ধ মানুষেরা যে দেশকে নিজে চোখে যাচাই করতে চেয়েছিল সে তো কোন অজ্ঞানের দেশ হতে পারে না। বাইরের দেশের দস্যুরা যে দেশের মন্দিরকে ১৭ বার লুন্ঠন করেও নিঃস্ব করতে পারে না সে তো নিশ্চিত ভাবেই কোনো গরীবের দেশ ছিল না।

লিসা হাবার্টের বলছেন, হিন্দু যূগ গুলিতে শিল্প ও শিক্ষার এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন ঘটে যা দীর্ঘ ৭০০ বছর প্রবহমান ছিল। তবু হিন্দুত্বের চূড়ান্ত স্বর্নযূগের পর্যালোচনা করতে তিনটি যূগকে বেছে নেবো। সেগুলি হল চালুক্য যূগ, চান্ডিল্য যূগ এবং মৌখরি সাম্রাজ্যের সময়কাল। সেটা এমন সময়কাল ছিল যখন দিল্লি দিল্লি নামেই পরিচিত ছিল না। মৌখরি যূগের শাসনকালে সেখানে তৈরি হয়েছিল লালকোট দূর্গ যা বর্তমানে রেড ফোর্ট (লালকেল্লা) নামে পরিচিত। ভারতের ইতিহাসকাররা যদিও একে মোগল সম্রাট শাহজাহানের সৃষ্টি বলে আখ্যায়িত করে তবুও এটি সম্পূর্ণ ভুল একটি তথ্য। পুরাতাত্বিক-ঐতিহাসিক প্রমাণ বলছে এটি তোমর বংশের মহারাজ অনঙ্গপাল তোমরের শাসন কালে নির্মিত । ভারতের দর্শনে লালকোট তথা লালকেল্লার পাঁচিল দেওয়া অংশটির গুরুত্ব অপরিসীম কারন এটিই মহাভারতের ইন্দ্রপ্রস্থের সেই মাটি যেখানে কৃষ্ণসখা অর্জুন তাঁর চার সহোদর ভাইয়ের সাথে হলকর্ষনের মাধ্যমে ইন্দ্রপ্রস্থের নির্মানকার্যের সূচনা করেছিলেন। আজও এর মাটির নিচের থেকে উঠে আসে মহাভারত যূগের ঐতিহাসিক প্রমাণ। ইন্দ্রপ্রস্থের যুগকে স্মরন করেই মহারাজ যশোবর্মন এই পবিত্র মাটিকে বিশেষ ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং এই জমির সন্নিকটে এক নগরীর পত্তন করেন যেটি আজকের পূরাতন দিল্লি।

বংশ পরম্পরায় এই জমির উত্তরাধিকারী হন রাজা অনঙ্গপাল তোমর। যিনি এই জমির বিশেষ সংরক্ষণের লক্ষ্যে তৈরি করেন লালকোট দূর্গ। নির্দিষ্ট জমির সম্পূর্ণ অংশটিই তিনি নির্মিত দূর্গের অভ্যন্তরে রাখেন।

লিসা হাবার্টের মতে লালকেল্লার ভিতরের জমিতে খননকার্য এবং গবেষণা শুরু হলে ভারতের ইতিহাসের এক সম্পূর্ণ অন্ধকার একটি অধ্যায় উন্মোচিত হবে। যা বদলে দেবে ভারতবর্ষের ইতিহাস কে……

(সংগৃহিত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.