দিদি আমার প্রধানমন্ত্রী হবেন, ইচ্ছেটা মন্দ নয় ।
তোলাবাজির ফর্মটা nationalised হবে, বিষয়টা মন্দ কি । ভেবেই শিহরিত হচ্ছি ।
স্বাধীনতার ৬ দশক বাদে ভারত একজন বাঙালি রাষ্ট্রপতি পেয়েছিল । প্রণব মুখার্জি প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন । হতে পারেন নি । কারণ সোনিয়া গান্ধী চাননি । তাঁকে যখন রাষ্ট্রপতি করতে চাইলেন সোনিয়া তখন যে গুটি কয়েক ভারতীয় প্রথমে তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন তার মধ্যে ছিলেন এক বাঙালি । নাম মমতা ব্যানার্জি ।
প্রণববাবুর নাম রাষ্ট্রপতি পদে প্রস্তাব করতেই দিল্লী ছুটে গিয়েছিলেন মমতা । মুলায়ম সিং যাদবকে নিয়ে প্রণববাবুর নামের বিরোধিতায় প্রেসের সামনে মুখ খুলেছিলেন মমতা । এটা এখন ইতিহাস । পরে মুলায়ম পুরো ইউ টার্ন নিয়ে প্রণব বাবুর পক্ষে চলে যাওয়ায় মমতা একলা পড়ে গিয়েছিলেন । তারপর লজ্জার মাথা খেয়ে প্রণববাবুকে সমর্থনে এগিয়ে গিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু ততক্ষণে লেখা হয়ে গেছে মমতার তীব্র বিরোধিতার ইতিহাস রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দলিলে । যেখানে এখনও লেখা আছে সাংবাদিকরা যখন মমতার তৎকালীন প্রতিনিধি মুকুল রায়কে প্রশ্ন করছেন – বাঙালি হয়ে ভূমি পুত্রকে কেন বিরোধিতা করছেন ? মুকুল বিদ্রুপ করে বলছেন উনি ভূমি পুত্র কেন হতে যাবেন, উনি (প্রণববাবু) বিশ্বপুত্র !
বাঙালি হয়ে এক বাঙালিকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রথের রশি একসময় বঙ্গজ অনেক বামপন্থীরাও আটকেছেন । কেন আটকেছেন, কিসের জন্য আটকেছেন সেই আলোচনায় যাচ্ছিনা । আটকানোটা ইতিহাস । জ্যোতিবাবু হতে পারেননি । এখনো অনেক পুরানো বামপন্থী তাই নিয়ে আক্ষেপও করেন । এই ইতিহাসও আজ অতীত ।
এখন যেটা বর্তমান তা হল “আব কি বার মমতা সরকার” । কেউ চান বা না চান স্লোগানটা তো থাক । সেই অনুযায়ী ইভেন্ট ম্যানেজার পি কে কিন্তু কাজ করে যাচ্ছেন । এক এক করে পাঠাচ্ছেন ১২ টায় কমল নাথ, ২টোয় আনন্দ শর্মা, সাড়ে ৬ টায় অভিষেক মনু সিং ভি …….। দিদি যে এবার হবেনই প্রধানমন্ত্রী । ইভেন্ট ম্যানেজার নরেন্দ্র মোদীকে দেখে ছাতা ধরিয়ে দিয়েছেন নেত্রীর হাতে । বহুকাল বাদে নেত্রীর হাতে ছাতা দেখে বাঙালি আহ্লাদিত । ছটপট করতে করতে বাংলা সংবাদ মাধ্যমের এক রং চং মাখা সঞ্চালিকা হাঁপাতে হাঁপাতে তারস্বরে আজ বিকেলে চিৎকার করে উঠলেন – মুখ্যমন্ত্রী নিজে হাতে ছাতা ধরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি । এ দৃশ্য কোনোদিন দেখেছে ভারত ? শুনুন কি বলছেন মুখ্যমন্ত্রী…..
মুখ্যমন্ত্রী কি বললেন, শুনলাম…..পরশু উনোনে ( রাষ্ট্রপতি ) হামকো টাইম জরুর দিয়া হ্যায় । হাম ডবল ভ্যাকসিন কিয়া হ্যায়, লেকিন হামকো আর টি পি সি আর করনে বোলা হ্যায় । হাম ইধার মে আউট সাইডার হ্যায়, কাহা জায়গা, কাঁহা আর টি পি সি আর করেগা ?
ঠিকই তো একজন মানুষ দুটো ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কি করে তাঁকে আর টি পি সি আর করতে বলা হচ্ছে ? রাষ্ট্রপতি ভবনের কি কোন কান্ড জ্ঞান নেই ? নাকি বাঙালি বলেই এমন করা হচ্ছে ? নাকি দেবাঞ্জন কাণ্ডের পর বাংলায় ভ্যাকসিন নিলে সেটা বিশ্বাস যোগ্য নয় ? তার ওপর মুখ্যমন্ত্রীর কথা মত সত্যিইতো দিল্লীতে মমতা আউটসাইডার মানে বহিরাগত । কোথায় যাবেন, কাকে ধরবেন আর টি পি সি আর করতে ? দেখা রাষ্ট্রপতি করবেন না বলে দিননা । একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কি রসিকতা করা হচ্ছে ? ভুলে যাবেন না আপনি রমানাথ কবিন্দ, যাঁর সঙ্গে এই ফাজলামি হচ্ছে তিনি কিন্তু ২০২৪ এ ভারতের প্রধানমন্ত্রী !
নিজের ছাতা নিজে ধরে মমতা তাই এরপর ঠিকই বলেছেন – ( ঠিক হ্যায় ) হামনে রাষ্ট্রপতিকো খেয়াল জাদা রাখেঙ্গে । উস্কো শরীর আচ্ছা রহে । উনকা কভি ধিক্কাত না হো দেখনা হামারা কর্তব্য হ্যায় ।
খেয়াল করে দেখুন প্রতিটি শব্দ কিন্তু পি এম সুলভ । ন্যায়, নীতি, কর্তব্য পরায়ণ ইঞ্চিতে, ইঞ্চিতে ফুটে উঠছে । পাশাপাশি সৌজন্যে, চমকে, ধমকে পূর্ন ।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে এসে ছাতা হাতে সেই মমতা বলেছেন শুধু মাত্র দুটি বিষয়ে পি এমের সঙ্গে কথা হয়েছে
১. কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে
২. বাংলার নাম পরিবর্তনের বিষয় নিয়ে ।
এখানেই খটকা লাগল একটু ।
আর কিছু নিয়ে কথা হয়নি ? বাংলার শিল্প, আর্থিক দাবী, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বকেয়া অর্থ, পেট্রো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পেগাসাস সব কিছু উহ্য থাকল ? থেকে গেল ? নাকি উহ্য রাখলেন ? কিছু বিশেষ স্বার্থে ?
৪৫ মিনিট ধরে তাহলে কি এত বকে এলেন ? কি কাকুতি মিনুতি করলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে “হতে চাওয়া এক ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী” ?
এই জায়গাটা একটু খোলাসা করলে ব্যাপারটা পি এম সুলভ হত । পি কে এই ব্রিফিংটা আগে করে দিলে ভাল হত । নিজের ছাতা যখন নিজেই ধরছেন নেত্রী এই উত্তর গুলো পি কের সাহায্য না নিয়ে বললে আরো ভালো লাগতো । খুব সুন্দর শোনাতো । কিছুটা পি এম সুলভ হত । তাই না ?
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)