আরো একটা কমিশন, আরো একটা ভন্ডামীর এপিসোড । এবং কয়েক কোটির শ্রাদ্ধ ।
পেগাসাস নিয়ে নাকি মমতা তদন্ত করাবেন । কি হয়েছে, কিভাবে হয়েছে তা দেখার জন্য, বোঝার জন্য এবং বার করার জন্য যে আদতে কার কার ঘরে এবং ঘাড়ে ঢুকেছে এবং চেপেছে পেগাসাস ।
আদৌ সম্ভব ?
পেগাসাস, অভিযোগ কেন্দ্রীয় সরকার কিনেছে এবং প্রয়োগ করেছে কারুর কারুর ওপর । তা তদন্ত কমিশন কি ভাবে তদন্ত করবে রাজ্যের মধ্যে থেকে ? কেন্দ্রীয় সরকার involved না হলে তদন্ত কি সম্ভব ? আর এক্তিয়ারের প্রশ্ন ? কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ রাজ্য কি কমিশন বসিয়ে তদন্ত করতে পারে ? বিকাশ ভট্টাচার্যর মত আইনজীবীরা পরিষ্কার বলছেন পারে না ।
তাহলে ? মমতা এটা করলেন কি ভাবে ?
স্রেফ গিমিকের জন্য এই চাল । সবাই বোঝেন । জেনেশুনেই তিনি করেছেন । National হওয়ার রোগে এখন বেশ কিছুদিন এসব করবেন,করেও যাবেন । অবাক হলে চলবে না ।
যাঁরা সদস্য মনোনীত হলেন সেই দুই প্রাক্তন বিচারপতির উচিত মমতাকে বলা এসব আপনি করবেন না । কোষাগারের টাকা এভাবে ওড়াবেন না । ওটা পাবলিক মানি । আমাদের কাজে লাগিয়ে টাকাটা নষ্ট করবেন না । বলবেন কি না সেটা তাঁরা জানেন । কিন্তু বলা উচিত ।
কেন বলছি ? মমতা ক্ষমতায় এসে এরকম ১৩ টা কমিশন বসিয়েছেন তদন্তের জন্য । কি কি শুনবেন ?
১. ১৯৭০ সাই বাড়ি হত্যা কান্ড কমিশন
২. ১৯৭১ কাশিপুর বরানগর হত্যাকাণ্ড কমিশন
৩. আনন্দমার্গী হত্যাকাণ্ড ১৯৮২ কমিশন
৪. ২১ জুলাই ১৯৯৩ হত্যাকাণ্ড সুশান্ত কুমার চ্যাটার্জির নেতৃত্বাধীন কমিশন
৫. চিট ফান্ড নিয়ে শ্যামল কুমার সেন ২০১৪ কমিশন
৬. মেদনিপুর ট্রাইবাল হত্যাকাণ্ড ১৯৯৯ কমিশন
এবং এরকম আরো সাতটি তদন্ত কমিশন ।
কেউ বলতে পারবেন এগুলোর রিপোর্ট কি ? কবে বেরিয়েছে ? কে শাস্তি পেয়েছে ? কে অপরাধী ? কি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ?
এর নিট রেজাল্ট আসলে জিরো । কেন বলছি ? ভেবে দেখুন সময়ের কালে কালে মানুষ বিস্মৃত হয়ে যায় এসব কমিশন বসানোর কাহিনী । আড়ালে চলে যায় এসব কমিশন, কমিশনের তদন্ত রিপোর্ট । মানুষ ছেড়ে দিন, কোন বাংলা সংবাদ মাধ্যম পর্যন্ত কখনো লেখেনা, প্রশ্ন করে না এসব নিয়ে । ঘণ্টা খানেক ছেড়ে দিন পাঁচ মিনিটের আলোচনা পর্যন্ত হয়না ইলেকট্রনিক্স মাধ্যমে এসব পুরানো কমিশন বা তার না প্রকাশ হওয়া তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে ।
কিরকম খরচ হয় বা হতে পারে এক একটি কমিশনের জন্য ? কোনো ধারণা আছে কারুর ? বছরের পর বছর তার প্রধান, তার অফিস, তার আয়োজন, এবং তদন্ত চালাতে তিন চার কোটি বেরিয়ে যায় সরকারের ।
অর্থ দফতরের হিসেব বলছে গত দশ বছরে এরকম ১৩ টি কমিশনের জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের খরচ হয়ে গেছে ৩২.৫৩ কোটি টাকা ।
কিছু বলবেন কেউ ?
এক স্বেচ্ছাচারীনির ইচ্ছা, অনিচ্ছায় এভাবেই রাজ কোষাগার গলে যায়, জলে চলে যায় কোটি কোটি টাকা । আমরা যারা জনগণ তারা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে সব কিছু দেখি । তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ইতিহাস কিরকম বিস্মৃত হই । আর বাংলা কাগজ ও চ্যানেলগুলো ? যাঁরা এসব নিয়ে প্রশ্ন করতে পারতো, সরকারকে বিদ্ধ করতে পারতো তারাও কি অদ্ভুত ভাবে নীরব ! ঠিক কি না ?
একটা খবর দিই । শুনুন । সি এম থেকে পি এম হবার তাড়নায় রাজ কোষাগারের খরচ হওয়ার আরেকটি কাহিনী । একটি অবাধ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট ।
২৮ জুলাই চাণক্য পুরীর বঙ্গ ভবনের লনে মমতা শতাধিক রাজনীতিবিদকে হাই টি এর নিমন্ত্রণ করেছেন । বঙ্গভবনের ক্যাম্পাসে এই উপলক্ষে গড়ে উঠছে একটি বড় ক্যাম্প, অভিষেক ব্যানার্জির বাস ভবনে যেখানে মমতা থাকছেন সেখানে ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে দুটি ক্যাম্প । করছে কে ? রাজ্যের পূর্ত দফতর । মলয় ঘটক বেশ কয়েকজন অফিসারকে নিয়ে ঘাঁটি গেড়েছেন দিল্লীতে । তদারকি করতে ।
সরকারের যাচ্ছে কত ? পরে বলছি । মেনুতে চোখ বোলান –
শুরুতেই দু তিন রকমের চা । কফি, ঠান্ডা পানীয়, ফলের রস, সুইট কর্ন স্যুপ, রকমারি স্যালাড, চিকেন ক্রিম স্যালাড, মিক্সড ফ্রুট স্যালাড, আলুর চাট, রকমারি পাউরুটি, চিকেন ও ভেজ স্যান্ডুইচ, গার্লিক ব্রেড, ব্রেড রোল, ব্রাউন ব্রেড, কড়াইসুঁটির কচুরি, আলুর দম, ফিস ফ্রাই, ফিঙ্গার চিপস, ভেজ কাটলেট, চিকেন রেশমি কাবাব, চিকেন মালাই কাবাব, পনির টিক্কা, রসগোল্লা, সন্দেশ, মিষ্টি দই দিয়ে শেষ ।
এত আয়োজন সবই সরকারি পয়সায় । থাকছে লাইভ কভারেজের ব্যবস্থা । সেটাও সরকারি অর্থে । নেত্রীর দিল্লী সফরে কলকাতা থেকে পৌঁছেছেন প্রায় চল্লিশ জন সিকিওরিটি । একাধিক বুলেট প্রুফ গাড়ি । একাধিক রাজনৈতিক নেতারা ঘাঁটি গেড়েছেন সরকারি অতিথিশালায় । সঙ্গী হয়েছেন অনুগত প্রেসের বসেরাও, পুরোপুরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় ।
নেত্রীর তিন দিনের এই সফরে মোট খরচ কত কোটি হতে পারে এবার হিসেবটা করুন ।
সি এম থেকে পি এম হওয়ার চেষ্টাতেই চাণক্য পুরীর বঙ্গ ভবনে ২৫ পদের আয়োজন হবে । এখনো ২০২৪ আসতে মাঝে তিন তিনটে বছর বাকি । রাজ কোষাগারের আরও কত জল এভাবে অকাতরে গলে চলে যাবে কেউ একবারও ভেবে দেখেছেন ?
এক স্বেচ্ছাচারীনির স্বপ্নপূরণের সব দায় হবে মানুষের ?
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)