ঝড়ঝঞ্ঝা, বিশেষত ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও শক্তি ক্রমাগত ভয়াবহতার মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে। সেই সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসও যে এই রাজ্যে মহাবিপদ ডেকে আনতে পারে, সম্প্রতি তা প্রমাণ করে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে জলমগ্ন হয়ে মৃত্যুর ব্যাপারে এ বার সতর্ক করে দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
হু-র সদ্য প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ২০১৯ সালে অন্তত ৭০ হাজার জন জলে ডুবে মারা গিয়েছেন। সেই রিপোর্টেই বলা হয়েছে, জলবায়ু বদলের ফলে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগ আরও বাড়বে। তা থেকে বাড়তে পারে জলে ডুবে প্রাণহানিও। এই ধরনের বিপর্যয় রুখতে এখন থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ না-করলে অদূর ভবিষ্যতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে হু।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অধিকর্তা পুনম ক্ষেত্রপাল সিংহের মতে, এত মানুষের মৃত্যু সত্ত্বেও জলমগ্ন হয়ে মৃত্যু নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং রাষ্ট্রপুঞ্জ এই বিষয়টিকে তুলে ধরতে চাইছে। বস্তুত, রবিবারেই প্রথম ‘বিশ্ব জলমগ্ন দিবস’ পালন করা হল। চলতি সপ্তাহেই রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় এই রিপোর্ট পেশ করা বলেও জানানো হয়েছে।
পরিবেশবিদেরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ক্ষেত্রে সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলাপ-আলোচনা চলছে। তার উপরে যুক্ত হয়েছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একের পর এক ঘূর্ণিঝড়। এই ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস হয়। ইয়াসের সময় ঝড়ের দাপট মারাত্মক না-হলেও জলোচ্ছ্বাসে বহু এলাকা ডুবে গিয়েছে। ব্যাপক সংখ্যায় প্রাণহানি না-হলেও মারা গিয়েছে প্রচুর গবাদি পশু। নষ্ট হয় জমি ও সম্পত্তি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুধু মানুষের মৃত্যুর হিসেব কষেছে। তার পাশাপাশি এই সম্পদ নষ্টের বিষয়টিও আর্থ-সামাজিক ক্ষতি ডেকে আনে বলে পরিবেশবিদদের অভিমত।
বিভিন্ন দুর্যোগে দেখা গিয়েছে, নদী বা সমুদ্রের একেবারে সংলগ্ন অঞ্চলে বসবাসকারীরাই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। ইয়াস বা আমপান ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে তা প্রমাণিত। আবার ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ড বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও সেটা দেখা গিয়েছে। নদীর পাশে থাকা জনপদ কার্যত গুঁড়িয়ে দিয়েছিল হিমবাহ-হ্রদ ভেঙে আসা জল ও কাদামাটির স্রোত। মহারাষ্ট্র ও গোয়ায় গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টির জেরে বন্যা এই ধরনের বিপর্যয়ের সর্বশেষ উদাহরণ। মহারাষ্ট্রে অন্তত ১৩৬ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে।
নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো তৈরির মাধ্যমে এই ধরনের বিপদ এড়ানো সম্ভব বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে জানানো হয়েছে। তার কিছু রূপরেখাও দিয়েছে তারা। এ দেশের পরিবেশবিদদের অনেকের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরে নানা ধরনের পরিকল্পনা থাকলেও তার বাস্তবায়ন সে-ভাবে দেখা যায় না। উল্টে অনেক জায়গায় উপকূলীয় এবং বিপর্যয় বিধি উপেক্ষা করেই দেদার জনবসতি ও পর্যটন কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সরকারি মদতও থাকছে। কেন্দ্রীয় সরকার যে-উপকূলীয় বিধি সংশোধন করেছে, তাতেও এই ধরনের বিপদ বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদেরা।