ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে আজ রাজ্য সরকার তাদের মতামত জানবে কলকাতা হাইকোর্টে।
রাজ্যের নানা প্রান্তে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনাগুলি নিয়ে তদন্ত চালিয়ে এক সপ্তাহ আগেই হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা করেছে মানবাধিকার কমিশন। পাঁচটি সেটে ৫০ পাতার রিপোর্টে রাজ্যের নানা প্রান্তে ঘটিত ভোট পরবর্তী হিংসার বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ আছে। এই রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল রাজ্য সরকার। সেই সূত্রেই সরকারকে তার মতামত জানানোর জন্য সাতদিন সময় দেয় হাইকোর্ট। আজ বৃহস্পতিবার ২২ জুলাই সেই মামলার শুনানি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের নেতৃত্বে এই শুনানি হবে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে।
২ মে বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তির অভিযোগ ওঠে। মূলত বিজেপির তরফ থেকেই সেই অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সে সময় অভিজিৎ সরকার নামে এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যু নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। নিহত অভিজিতের ভাই বিশ্বজিৎ সরকার খুনের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থও হযেছিলেন তিনি। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে রাজ্যকে নোটিসও পাঠিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত।
ভোট পরবর্তী অশান্তির ওই চিত্র তুলে ধরে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরাতে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কমিটিতে ছিলেন জাতীয় ও রাজ্যের মানবাধিকার কমিশন এবং রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির সদস্যরা। রাজ্যের নানা প্রান্ত ঘুরে ভোট পরবর্তী হিংসার নানা ঘটনার উল্লেখ করে রিপোর্ট তৈরি করেন তাঁরা। ৫০ পাতার সেই রিপোর্টও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে বলা হয়, ভোটের পরে হিংসার কারণে অনেকের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রাণের আশঙ্কায় ঘরছাড়া হতে হয়েছে বহু মানুষকে। মহিলাদের উপরে যৌন নির্যাতনও হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের অস্বস্তি বাড়িয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে এই ধরনের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করা না গেলে অন্য রাজ্য তা ছড়িয়ে পড়বে এবং দেশে গণতন্ত্রের বিপর্যয় ঘটবে। অবিলম্বে এই ধরনের হিংসা বন্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। রিপোর্টে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে। মামলা অন্য রাজ্যে সরানোরও সুপারিশ করা হয়েছে রিপোর্টে।
এই রিপোর্ট সামনে আসার পরই হাইকোর্টের সমালোচনার মুখে পড়ে রাজ্য। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল রাজ্যকে তিরস্কার করে জানান, ভোট-পরবর্তী হিংসার প্রমাণ রয়েছে রিপোর্টে, অথচ রাজ্য শুরু থেকেই তা অস্বীকার করে আসছে। লিগ্যাল সার্ভিস রিপোর্টও রাজ্যের যুক্তির সঙ্গে মেলেনি। এই রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্যের আইনজীবী কিশোর দত্ত জানান, রাজ্যকে তার মতামত জানাতে আরও কিছুদিন সময় দিতে হবে। তাতে বিচারপতি বিন্দল জানান, এই মামলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই দ্রুত নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। সাতদিনের মধ্যে রাজ্যকে মতামত জানানোর সময় দেন তিনি। শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করা হয় আজ ২২ জুলাই।