কলার দাবি করেছেন যে তিনি একজন ‘ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী’ এবং ‘কোরানের লাভ জিহাদ’ সম্পর্কে লেখার জন্য লেখককে খুন করতে চান
বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, পন্ডিত এবং কেরালার বিজেপির সহ-সভাপতি ডঃ কে এস রাধাকৃষ্ণন ‘লাভ জিহাদ’ সম্পর্কিত একটি বই লেখার জন্য গত শুক্রবার (১লা জুলাই) সংযুক্ত আরব-আমীরশাহি থেকে প্রাননাশের হুমকি পেয়েছেন। এদিন অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি ফোন করে নিজেকে ‘ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী’ বলে দাবি করেন এবং তারপর রাধাকৃষ্ণনসহ তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে গালিগালাজ ও প্রাণহানির হুমকি দেন।
দিল্লীর ইন্ডাস স্ক্রোলস প্রেস থেকে প্রকাশিত ‘লাভ জিহাদ ইন দ্য কোরান’ নামক বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর যেন রাতারাতিই ইসলামের মূল ভিত নড়ে উঠেছে, আর সেটাই হয়তো মুসলিমদের এতো মাথাব্যথার কারণ।
ডঃ রাধাকৃষ্ণন পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন যে, ঐ অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি একাধিকবার ফোন করার চেষ্টা করেছিল। “আমি সংযুক্ত আরব-আমীরশাহির নম্বর থেকে একটি ফোন পেয়েছি। সকাল ১১:২৮ নাগাদ 971556443094 থেকে একটি চার মিনিটের ফোন আসে। ফোন ওপাশে থাকা ব্যক্তি আমার কাছে নিজের ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ করতে অস্বীকার করলেও এটা দাবি করেন যে তিনি একজন ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী এবং এরপর আমায় হত্যার হুমকি দেয়। ঐ ব্যক্তি আমায় ক্রমাগত অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করেন তাই আমি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিই। তিনি আমার সাথে আবার সকাল ১১:৩৩ এবং ১২:১৪ নাগাদ যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। আমি ডঃ কে এস রাধাকৃষ্ণন, বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি। আমি আপনাকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি”— নিজের অভিযোগপত্রটি তিনি পড়ে শোনান।
“লাভ জিহাদ বিষয়ক বেশ কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা এবং কোরান থেকে অনেকগুলো উদ্ধৃতাংশ উদ্ধৃত করে, সৌদির ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ একটি আনুষ্ঠানিক সংস্করণ প্রকাশ করেছে। এটা হ’ল আসলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর একপ্রকার হামলা এবং মতামত দানের ক্ষমতাকে দমন করার নোংরা চেষ্টা। তার পাশাপাশি এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে ডঃ রাধাকৃষ্ণনের মতো একজন সম্মানীয় বিদ্বজ্জনের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে”— ইন্ডাস স্ক্রোলস প্রেসের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
১৫টিরও বেশি বিখ্যাত এবং সমৃদ্ধশালী বইয়ের লেখক ডঃ রাধাকৃষ্ণন ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কেরালা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ‘শ্রী শঙ্করাচার্য ইউনিভার্সিটি অফ সংস্কৃত’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক একাডেমিক কাউন্সিলে তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
বই সম্পর্কে নিজের যুক্তিকে আরও শক্তিশালী করতে তিনি বলেছেন যে: “কোরানে লাভ জিহাদ বিষয়টি রয়েছে”। কোরান অমুসলিমের সাথে মুসলমানের বিবাহকে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করেছে এবং সাথে এটাও সতর্ক করে দিয়েছে যে: ‘মুশরিকদের(প্রতিমা-পূজকদের) সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস না করা পর্যন্ত তাদের বিয়ে করবেন না’। ধর্মান্তরীকরন ব্যতিরেকে যদি বিবাহ অনুষ্ঠান করা হয়, তবে সেটাকে সত্যিকারের ভালবাসার চিহ্ন হিসাবে বিবেচনা করা যাবে না। সুতরাং, মুসলিম-অমুসলিমদের বিবাহের ক্ষেত্রে যুক্তিতর্কের উর্ধ্বে উঠে, আইনকানুনের বেড়াজাল ডিঙিয়ে, নিঃশর্ত ভালবাসা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার দোহাই দিয়েও এইধরনের বিবাহকে অনুমোদন করা সম্ভব নয় কারণ এইরকম বিবাহের ক্ষেত্রে ধর্মান্তরীকরন ই হ’ল এক এবং একমাত্র শর্ত”।