পার্বত্য চট্টগ্রামে বাড়ছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদেরকে জোর করে গণ-ধর্মান্তরিতকরণ ভয়।
সূত্রের খবরে প্রকাশ পাহাড়ে নতুন নামে আল-কায়েদা মতাদর্শী একটি জঙ্গিগোষ্ঠী উপজাতিদের উপর বৌদ্ধ ধর্ম ছেড়ে ‘ইসলাম কবুলের’ চাপ বাড়াচ্ছে।
খবরে প্রকাশ আল-কায়েদা দাওয়াতুল ইসলাম নামের একটি সংগঠনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ ও ধর্মান্তকরণের কাজ চালাচ্ছে ।
বাংলাদেশের প্রথম আলো খবরের কাগজে বেরোনো সংবাদে বলা হয়েছে জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত একাধিক সূত্র জানায়, দাওয়াতুল ইসলাম নামের সংগঠনের আড়ালে পার্বত্য এলাকায় এই উগ্রবাদী কার্যক্রমের নেতৃত্বে আছেন মাহমুদুল হাসান গুনবী।
আরেক সূত্রের মতে ওই মৌলবাদী বান্দরবানের লামা ও খাগড়াছড়িতে দুটি জঙ্গি আস্তানাও গড়ে তুলেছেন যেখানে ২০ থেকে ২৫ জন সক্রিয় সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে ধর্মপরিবর্তনের মাধ্যমে জেহাদ করার জন্য।
উগ্রবাদী ওয়াজ মাহফিলের জন্য কুখ্যাত মাহমুদুল হাসান গুনবী বর্তমানে জঙ্গি গোষ্ঠী আনসার আল ইসলামের আধ্যাত্মিক নেতা।
সে আবার দাওয়াতুল ইসলাম নামের একটি সংগঠনের হয়ে ধর্মান্তরিতকরণ করছে। এই জঙ্গি সংগঠন যেটি পার্বত্য অঞ্চলে এবং উত্তরবঙ্গে চরাঞ্চলের কিছু এলাকায় আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম ও উগ্র মতাদর্শ প্রচার করে আছে তারা ইতিমধ্যে বৌদ্ধদের ভয় ভীতি ও প্রলোভন দিচ্ছে ‘ইসলাম কবুল’ করার জন্য।
এই আনসার আল ইসলাম হলো আল–কায়েদার ভারত উপমহাদেশের (একিউআইএস) শাখা দাবি করে থাকে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, মাহমুদুল হাসান গুনবী ‘মানহাজি’ নামক একটি উগ্রবাদী গ্রুপের মুখ্য ব্যক্তি হিসেবেও কাজ করছেন। তিনিসহ তিনজন এই গ্রুপের অন্যতম দায়িত্বশীল। বাকি দুজন হলেন মাওলানা হারুন ইজহার ও আলী হাসান ওসামা। এই দুজন গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে আছেন। এই মানহাজি গ্রুপও হেফাজতে ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গোপনে তৎপর রয়েছে। মানহাজি গ্রুপও আল-কায়েদার মতাদর্শ অনুসরণ করে এবং হেফাজতে ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সংগঠিত হয়েছে বলে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানতে পেরেছে।
মাহমুদুল হাসান গুনবীও হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে সখ্য রেখে এই সংগঠনকেও ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও হেফাজতের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে গুনবীর ছবি দেখা গেছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাহমুদুল হাসান গুনবী হেফাজতের কোনো কমিটি বা পদে নেই। তাঁর বিভিন্ন বয়ানে এনজিওবিরোধী বক্তব্য থাকে, বিশেষ করে পার্বত্য এলাকায়। সম্প্রতি বান্দরবানে ওমর ফারুক নামে একজন নও–মুসলিম খুন হয়েছেন। সেই ওমর ফারুকও মাহমুদুল হাসান গুনবীর মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে শুনেছি।’
জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত সূত্রগুলো বলছে, দাওয়াতুল ইসলামের বর্তমান আমির মাহমুদুল হাসান গুনবী। সংগঠনটির এর আগে আমির ছিলেন মাওলানা নাজিমুদ্দিন। তিনি জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে একাধিকবার গ্রেপ্তার হন। দাওয়াতুল ইসলামের সদস্য সাইফুল ইসলাম, আবদুল হামিদ, আনিছুর রহমান ও হাসান এর আগে জঙ্গি-সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন।
গুনবীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু মাওলানা আলী হাসান ওরফে ওসামাকে গত মে মাসে রাজবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জাতীয় সংসদ ভবনে হামলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আলী হাসান ওসামার সঙ্গে আনসার আল ইসলামের আরও কয়েকজন গ্রেপ্তার হন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মাহমুদুল হাসান গুনবীর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে যুক্ত থাকার তথ্য সামনে আসে। সংসদ ভবনে হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে শেরেবাংলা নগর থানায় করা মামলায় গুনবীকে পলাতক আসামি হিসেবে দেখানো হয়। গত মে মাসে ওই মামলার পর গুনবী আত্মগোপনে চলে যান। খাগড়াছড়ির গহিন পাহাড়ে আত্মগোপনে আছেন, এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গুনবীকে গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কয়েক দফা পাহাড়ে অভিযানও চালায়।
দাওয়াতুল ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান গুনবীর বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার হওয়া আনসার আল ইসলামের জঙ্গিরা জিজ্ঞাসাবাদে দাওয়াতুল ইসলামের নাম বলেছে। সংগঠনটি উগ্রবাদী কার্যক্রমে যুক্ত বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘গুনবী সম্পর্কেও আমাদের কাছে কিছু গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। তিনি উগ্রবাদী বক্তব্য ও শিক্ষা দেওয়ার নামে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে গ্রেপ্তার হওয়া আনসার আল ইসলামের কিছু জঙ্গির কাছ থেকেও তথ্য পেয়েছি। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনী ও সংস্থার মতো আমরাও তাঁকে খুঁজছি।