বৃষ্টি চাই, শস্য শ্যামল ধরণী চাই, তাই আষাঢ় জুড়ে পাহাড় পুজো

পাহাড় দেবতা। তাকে তুষ্ট করলে হবে ভালো বৃষ্টি। ফসলে ভরে উঠবে মাঠ। শস্য শ্যামল হবে ধরণী। তারই হাত ধরে সুখ আসবে, সমৃদ্ধ হবে বসতি। এমনই বিশ্বাস বংশপরম্পরায় বইছে ফল্গুধারার মতো। আর সেই বিশ্বাসেই আদিবাসী মূলবাসীদের মধ্যে পাহাড় পুজোর রেওয়াজ বছরের পর বছর ধরে। গোটা আষাঢ় মাস ধরে পালা করে পুজো পায় নানা পাহাড়। আষাঢ় এলেই মেতে ওঠেন বেলপাহাড়ি ও ঝাড়খণ্ড সীমানার আদিবাসীরা।

আষাঢ় মাসের প্রথম শনিবার আদিবাসী মানুষজন ধূমধাম করে পুজো করেন ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়ার জামিরা পাহাড়কে। পাহাড়তলির বিভিন্ন গ্রাম তো বটেই, বহু দূর থেকেও মানুষ আসেন। পাহাড় চুড়োয় নির্দিষ্ট পাথরকে দেবজ্ঞানে পুজোয় মাতেন তাঁরা। পুজো উপলক্ষে বসে মেলা। রীতিমতো উৎসবের চেহারা নেয় গোটা তল্লাট।

মাসের দ্বিতীয় শনিবার এই পুজো হয় বেলপাহাড়ির গাড়াশিনি পাহাড়ে। সেখানেও তৈরি হয় উৎসবের আবহ। বৃষ্টি আর সমৃদ্ধি চেয়ে দেবতাকে তুষ্ট করতে ভিড় জমান এলাকার মানুষ। গাড়াশিনির পর আষাঢ় মাসের তৃতীয় শনিবার পুজো করা হয় বেলপাহাড়ি ও চাকুলিয়া সীমানার কানাইসোর পাহাড়কে। রবিবারই কানাইসোর পাহাড়ে শেষ হল দুদিনের উৎসব।

কানাইসোর পাহাড়ে পুজোর দায়িত্ব থাকে আদিবাসী মাল সম্প্রদায়ের উপর। তাঁরাই এই পুজোয় পুরোহিতের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। পুজোয় মেতে ওঠেন বেলপাহাড়ি ও চাকুলিয়ার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে রক্ত দেওয়ার রেওয়াজ। তাই পাহাড় চুড়োয় দেবস্থানের সামনে হয় ছাগ বলি। পাহাড়ের নীচ অংশে যে পুজো, সেখানে মুরগি বলি দেওয়ার রীতি। কানাইসোর পাহাড়ের উপরে ও নীচে আলাদা করে আয়োজন করা হয় পুজোর। সেটাও প্রথা মেনেই। পুজো উপলক্ষে মেলায় হরেক জিনিসের মধ্যে প্রতিবারই নজর টানে শাল পলাশের পাতা দিয়ে তৈরি টুপি আর কাঁঠাল।

লোক সংস্কৃতি গবেষক মধুপ দে বলেন, “পাহাড় জঙ্গল নদী এ সবই জড়িয়ে আছে আদিবাসীদের সঙ্গে। প্রকৃতিকে ঘিরেই এঁদের ভয় ও ভক্তির অনুভূতি। তাই আলাদা করে কোনও বিগ্রহ নয়, সমৃদ্ধি চেয়ে গোটা পাহাড়কেই দেবতাজ্ঞানে পুজো করেন এরা। প্রতি আষাঢ়ে এই পাহাড় পুজো এখানে উৎসবের চেহারা নেয়। কানাইসোর পাহাড়ে স্থানীয় মাল সম্প্রদায়ের উপরেই থাকে এই পুজোর ভার।”

লোকসংস্কৃতির আরেক গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “পাহাড়ের উচ্চতাকেই আদিবাসীরা দেবতা জ্ঞানে পুজো করে। শস্য ও সমৃদ্ধির আশাতেই এই পুজো।”

কানাইসোর পাহাড়ের পুজো শেষ হয়েছে। আগামী কাল হবে ধলভূমগড়ের ঘটিডুবা পাহাড়ের পুজো। এখন তারই প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.