জমিয়তের রাজ্য সভাপতি তথা মন্ত্রী সিদ্দীকুল্লাহ চৌধুরীর উপর হামলা হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও তৃণমূলের লুঠতরাজ ও সন্ত্রাসের লিখিত অভিযোগ করেছে জমিয়ত। গাড়ির দরজায় মন্ত্রীকে পিষে মারার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ। জমিয়তের তরফে দাবি করা হয়েছে, এসব কীসের ইঙ্গিত বহন করে, তার জবাব দাও।
জমিয়তের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, শুক্রবার দুপুর ২টায় ৫ মিনিটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সরবেড়িয়া পেট্রোল পাম্প ও সংলগ্ন সড়কের উপরে চৌধুরী সাহেবের গাড়ি আটক করা হয়। পনেরো-কুড়ি মিনিট ধরে স্থানীয় তৃণমূল নেতা শাহজাহানের উস্কানি ও পরিকল্পনায় গাড়ির উপর ছেলেরা চড়াও হয়। করোনা পরিস্থিতির কোনও ধার না ধরে শত শত মানুষ দিয়ে সন্ত্রাসী চেহারা নিয়ে, ড্রাইভার আলির কাছ থেকে গাড়ির চাবি কেড়ে নেওয়া হয়।
বিবৃতিতে অভিযোগ, এমনকি পুলিশের গাড়ির চাবি কেড়ে নেওয়ার চাপ, মন্ত্রীর দেহরক্ষী সাবির ও উসমানকে মারধর করা হয়। মন্ত্রী গাড়ি থেকে নামলে দরজায় তাঁকে পিষে মারার চেষ্টা হয়। এহেন এক ঘৃণ্য কর্মকান্ডে লিপ্ত হয় আক্রমণকারীরা। তৃণমূলের পতাকা ধরে তারা বলে, আমরা তৃণমূলের কর্মী। গাড়ি লুঠ করেছি, বেশ করেছি। এখানে ত্রাণ বিলি হবে না।
অভিযোগ, ইতিমধ্যে প্রায় চারশ’ পরিবারের জন্য চাল, আলু, পেঁয়াজ, ত্রিপল, শাড়িসহ ত্রাণসামগ্রীবাহী গাড়ি (গাড়ির নং-WB25D5030) কলকাতার জমিয়ত ভবন থেকে সরবেড়িয়া যাওয়ার পথে দুপুর একটার সময় ওখানকার গুন্ডারা সবকিছু লুঠ করে নিয়ে যায়। সেই খবর মন্ত্রী নিজে নবান্নের ডিজি কন্ট্রোলে এবং তাঁর একান্ত সচিব প্রদীপ আগরওয়াল এসডিপিও বসিরহাটকে জানিয়ে ওখানে যাওয়ার কথা বলেন।
জমিয়তের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এসডিপিও জানান যে, ওখানে স্থানীয় থানার পুলিশ থাকবে। কিন্তু বাস্তবে ওরা ওখানে ছিল না। সব জেনে ওঁরা আড়ালে আত্মগোপন করেছিল। এদিকে, মন্ত্রী ওই দুষ্কৃতীদের বলেন, আমরা সারা রাজ্যে ত্রাণ দিই। জনগণের স্বার্থে ত্রাণসামগ্রী ফেরৎ দিন। ওরা বলে, তুই নেমে আয়। এখানে শাহজাহানই শেষ কথা। আমরা জানি, তুই মন্ত্রী। কিন্তু এখানে কোনও মন্ত্রী-টন্ত্রী চলবে না। আমরা যা করেছি, ঠিক করেছি। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোকে মেরে ফেলব।
অভিযোগ, ওদের মধ্যে অনেকে এর মধ্যে গাড়িতে সজোরে আঘাত করতে করতে জনাব চৌধুরী সাহেবের দিকে মারমুখী হয়ে তেড়ে আসে। নিরাপত্তারক্ষীরা ওঁকে বলেন, স্যার, আপনি গাড়িতে বসুন; নইলে ওরা আপনাকে দরজায় পিষে মেরে দেবে। তিনটি গাড়ি ভর্তি সশস্ত্র পুলিশ থাকলেও তাঁদের সিংহভাগ (১৫-২০ জন) নিষ্ক্রিয় হয়ে বসেছিলেন। মাত্র তিনজন সাব-ইনস্পেক্টর গাড়ি থেকে নেমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁরা গাড়িতে বসে আমোদ-প্রমোদ করছিল। পুলিশ গাড়ি থেকে নামলে দুষ্কৃতীরা কোনোভাবে এই সাহস পেত না।
অভিযোগ, পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তা দুষ্কৃতীদের নৈরাজ্যের জন্য কতটা সহায়, সেটা নিশ্চয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার সহজেই অনুধাবন করতে পারবে। মন্ত্রীর উপর এভাবে বারংবার হামলা হবে কেন? তাঁর নিরাপত্তায় বা এত খামতি কেন? কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা নিষ্ক্রিয় ছিল কেন? এ প্রশ্নগুলির সদুত্তর প্রয়োজন। সিপিএমের শাসন আমলেও জমিয়ত ত্রাণ দিয়েছে। কিন্তু জমিয়তের ত্রাণে হাত দেওয়ার দুঃসাহস সিপিএমও দেখায়নি।
বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, চল্লিশ বছর ধরে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর কর্তব্যের অন্যতম দিক হল— রাজ্যজুড়ে দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তিনি মরে গেলেও একাজ থেকে বিরত হতে পারবেন না। তিনি প্রথমে জমিয়তের রাজ্য সভাপতি, তার পরে রাজ্যের মন্ত্রী। এরকম সম্মানিত ব্যক্তিকে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা অপমানিত করবে, মারবে তা আমরা মেনে নিতে পারব না। সিপিএমের আমলে আমরা মেনে নিইনি, এখনো মেনে নেব না।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জমিয়তে উলামার সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুস সালাম জানান, এর বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে শনিবার দলের প্রতিটি শাখায় জমিয়ত কর্মীরা প্রতিবাদ করবেন। করোনা বিধি মেনে অনুর্ধ্ব পঞ্চাশ জন জমিয়তের পতাকা ধরে শান্তিপূর্ণভাবে তা ভিডিও রেকর্ডিং করে সর্বত্র ছড়িয়ে দেবেন। এই গুন্ডামি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। দোষীরা শাস্তি পাক। সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীকে মন্ত্রিসভায় যাওয়ার সুযোগ জমিয়তের রাজ্য কমিটি দিয়েছে বারংবার অপমানিত হওয়ার জন্য নয়। এহেন ন্যক্করজনক ঘটনার সবটাই পুলিশ প্রশাসনের নখদর্পণে। আমরা মূল পান্ডা শাহজাহানসহ তার সহযোগী জিয়াউদ্দিন, শফিকুল, রাজুসহ অন্যান্যদের গ্রেফতারির দাবি জানাচ্ছি।