শুধু মুসলিম অধ্যুষিত মালদা ও মুর্শিদাবাদই নয়, রাজধানী কলকাতা যে নিরাপত্তার দিক থেকে কতটা অসুরক্ষিত তারই প্রমান বাংলাদেশ থেকে আগত জঙ্গিদের এই রাজ্যে আস্তানা গাঁড়া। নিরাপত্তার দিক থেকে সুবিধেজনক থাকা খোদ রাজধানী কলকাতার হারিদেবপুরের মতো জায়গায় তিনজন জেএমবি জঙ্গির গ্রেফতারের ঘটনায় টনক নড়িয়ে দিয়েছে নিরাপত্তার রক্ষায় নিযুক্ত সংস্থাগুলোর ।
ধৃত জঙ্গিদের জেরায় উঠে এসেছে কিছু ভয়ঙ্কর তথ্য যা নিয়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার দাবি করা সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যেতে পারে সহজে ।
জেরায় প্রকাশ বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে ১৫ জন জেএমবি জঙ্গি।
জানা গিয়েছে, সীমান্ত টপকে ভারতে ঢুকে কয়েকজন এ রাজ্যে লুকিয়ে থাকলেও , বাকি জেএমবি জঙ্গিরা পালিয়ে গিয়েছে জম্মু-কাশ্মীর এবং ওড়িশায়। ধৃত নাজিউর রহমান ওরফে জোসেফ, মিকাইল খান ওরফে শেখ সাবির এবং রবিউল ইসলামকে গ্রেফতারের পর থেকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে । তদন্তকারী গোয়েন্দা আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, এ রাজ্যে জঙ্গিদের থাকা-খাওয়ার জন্য অর্থের জোগান দিত জামাতের রবারি উইং বা ডাকাতি শাখা। যার প্রধান হুজি লিডার আল আমিন এবং ধৃত নাজিবুর অস্ত্র পাঠাতো আমিনকে।
আরো জানা যায় যে কয়েক মাস ধরে এ রাজ্যে ঘাঁটি গেড়েছিল জঙ্গিরা। তবে তদন্ত এগোতে প্রকাশ্যে এসছে মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো বিস্ফোরক সমস্ত তথ্য।
এক গোয়েন্দা আধিকারিক যিনি নিজের নাম বলতে অস্বীকার করেন জানান পশ্চিমবঙ্গ কার্যত বাংলাদেশী জঙ্গিদের আস্তানা হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
“আপনি কি করে জানবেন মুর্শিদাবাদ অথবা মালদা থেকে এসেছে পরিচয় দিয়ে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই কলকাতা এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় যদি ঘুরে বেড়ায় কিছু লোকজন। অন্য যে কোনো সাধারণ নাগরিকের মতোই পরিচয় গোপন করে যদি তারা ঘুরে বেড়ায় নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে, তাহলে ধরা খুব কঠিন । পরিস্থিতি খুবই জটিল এবং যে কোনো দিন যে কোনো বড়ো বিপদ হতে পারে,” ওই গোয়েন্দা শাখার আধিকারিকের বক্তব্য।
তিনি বলেন ধৃত জঙ্গি নাজিউর রহমান নিজে কখনো জোসেফ আবার কখনো জয়রাম ব্যাপারী নাম ঘুরে বেড়াতো এবং তার সাথে জামাতের ডাকাতি শাখার প্রধান আল আমিনের সরাসরি যোগ রয়েছে।
তিনি বলেন প্রায় আড়াই বছর আগে এই শহরে ঘাঁটি গাড়ে নাজিউর । সোদপুরের একটি ঠিকানায় নিজের ভুয়ো পরিচয়পত্রও বানিয়ে সবার চোখে ধুলো দিতো সে। জঙ্গি মিকাইল খান ওরফে শেখ সাবির প্রায় তিন বছর ধরে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে কলকাতায় এবং ফল বিক্রেতার ছদ্মবেশে সকলের অলক্ষে নিজের কার্যসিদ্ধি করে যাচ্ছিল সে।
রিপাবলিক টেলিভিশনের খবরে প্রকাশ ধৃত জঙ্গিরা রাজ্যের ঘরে ঘরে বোমা বানিয়ে জেহাদের প্রশিক্ষণ দিতো ।
গোয়েন্দাদের মাথা ব্যাথার অন্যতম কারণ হলো এই যে এখনও পলাতক এ রাজ্যে JMB অন্যতম শীর্ষ জঙ্গি সেলিম মুন্সী যে সীমান্ত টপকে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে পালিয়েছে। খবরে প্রকাশ , দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে হরিদেবপুরের প্রত্যন্ত এলাকায় বাস করছিল এই সেলিম মুন্সী। এ রাজ্যে আসা জামাতের স্লিপার সেলের সদস্যদের আশ্রয় দেওয়া, তাদের ভুয়ো পরিচয় পত্র তৈরি করে দেওয়ার মতো কাজ করত সে। সেলিম মুন্সীকে ধরতে পারলে, তা বড় সাফল্য হবে বলেই মনে করছেন কলকাতা পুলিসের STF-এর গোয়েন্দারা।