রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘর্ষের পর এক বছরেরও বেশি কেটে গিয়েছে। কিন্তু লাদাখে এখনও সঙ্কট কাটেনি পুরোপুরি। উষ্ণ প্রস্রবণ, গোগরা পোস্ট, দেপসাংয়ে এখনও চিনাবাহিনীর আধিপত্য কায়েম রয়েছে। তার মধ্যেই ভারতের উদ্বেগ আরও বাড়াল চিন। দলে দলে তিব্বতি তরুণদের সেনাবাহিনীতে শামিল করছে তারা, যাতে হাতের তালুর মতো লাদাখের দুর্গম এলাকার সঙ্গে পরিচিত ওই তরুণদের ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে কাজে লাগানো যায়।
গোয়েন্দা মারফত চিনাবাহিনীতে তিব্বতি তরুণদের অন্তর্ভুক্তির খবর দিল্লিতে পৌঁছেছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় সশস্ত্র অভিযানের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে তাঁদের। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এক শীর্ষ আধিকারিককের মন্তব্য তুলে ধরেছে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম। তাতে তিনি বলেন, ‘‘গোয়েন্দা মারফত আমরা জানতে পেরেছি যে, এলএসি বরাবার বিশেষ অভিযান চালাতে তিব্বতি তরুণদের নিয়োগ করছে চিনাবাহিনী। নিয়মিত তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’’
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গম এলাকায়, যে কোনও পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে তিব্বতি তরুণদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে চিন। প্রথমে একাধিক ধাপ পেরিয়ে ড্রাগনবাহিনীর সামনে আনুগত্য প্রমাণ করতে হচ্ছে ওই সমস্ত তরুণদের। চিনের মূল ভূখণ্ডের ভাষা শেখানো হচ্ছে তাঁদের, যাতে চিনা সেনার থেকে তাঁদের আলাদা করা না যায়। একই সঙ্গে দলাই লামা এবং চিনা আগ্রাসনের ঘোর বিরোধী বলে পরিচিত নেতা এবং ধর্মগুরুদের ছত্রছায়া থেকে বার করে এনে, চিনা কমিউনিস্ট পার্টির কর্তৃত্ব মেনে নেওয়ার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে সকলকে।
১৯৬২ সালে ইন্দো-চিন যুদ্ধের পর ভারতীয় সেনা এবং আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) মিলে চিন-বিরোধী নির্বাসিত তিব্বতিদের নিয়ে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স (এসএফএফ) গড়ে তোলে। বর্তমানে ভারতীয় সেনার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ ওই বাহিনী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সচিবালয়ের অধীনে রয়েছে ওই বাহিনী। গালওয়ান সঙ্ঘর্ষের সময় চিনাবাহিনীকে পর্যুদস্ত করতে বিশেষ ভূমিকা ছিল তাদের। লালসেনার হাত থেকে মোখপরি এবং একাধিক পার্বত্য এলাকা উদ্ধার করেছিল তারা। তার পরই তিব্বতি তরুণদের বাহিনীতে শামিল করার সিদ্ধান্ত নেয় চিনা সেনা। এ বছরের গোড়া থেকে তাঁদের নিয়োগ শুরু হয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর।