মমতা দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ সাজতে চাইছেন, শুধু দল কেন, ওঁর প্রশাসনও তো কাটমানি খাচ্ছে: অধীর

কাটমানি বিতর্কে জেলায় জেলায় তৃণমূলের নেতারা যখন স্থানীয় মানুষের কাছে হেনস্থা হচ্ছেন, তখন ফের বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন লোকসভায় তৃণমূলের নেতা অধীর চৌধুরী।

শনিবার বহরমপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধীর চৌধুরী বলেন, “কাটমানি নিয়ে কেবল দলের লোকেদের বিরুদ্ধে কেন লোক লেলিয়ে দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? প্রশাসনের অফিসারদের বিরুদ্ধেও লোক লাগান। জেলার পুলিশ সুপার, জেলাশাসক, মহকুমা শাসক সবাই তো কাটমানি খান। মুর্শিদাবাদের যিনি ডিএম ছিলেন, ভোটের পর বদলি হয়েছেন, তিনি তো ওপেন টেন্ডার থেকে কাটমানি খেতেন!”

অধীরবাবুর কথায়, “কেন উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাচ্ছেন দিদি? প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া তৃণমূলের নেতারা কাটমানি খেতে পারতেন? আপনি তো পুলিশ মন্ত্রী, আপনি জানতেন না? এখন লোককে দেখাতে চাইছেন, আমি দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ, আমি সাধ্বী!”

তৃণমূলের অবশ্য অধীরবাবুর কথায় এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে দলের নেতারা ঘরোয়া ভাবে শুধু বলেন, কংগ্রেস বাংলায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে। অধীর চৌধুরীর কথার কোনও গুরুত্ব নেই।

রাজনৈতিক ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় অধীরবাবু বরাবরই আপসহীন। আবার লোকসভা ভোটে বহরমপুর আসনে অধীর চৌধুরীকে পরাস্ত করতে মমতা যেন পণ করেছিলেন। জনসভা থেকে অধীর চৌধুরীকে ব্যক্তিগত স্তরে আক্রমণও বাদ দেননি তিনি।

এর পরেও বহরমপুরে অধীরবাবু বিপুল ব্যবধানে জিতেছেন। উপরি কংগ্রেসের লোকসভার নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর সর্বভারতীয় রাজনীতিতে অধীরবাবুর রাজনৈতিক মর্যাদা এখন অনেকাংশে বেড়েছে। ফলে রাজনৈতিক ভাবে তাঁর মন্তব্যের ওজন আগের তুলনায় এখন বেশি বলেই মনে করেন পর্যবেক্ষকদের অনেকেই।

তৃণমূলের একাংশ নেতার দুর্নীতি প্রসঙ্গে এ দিন অধীরবাবু বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে কাটমানি, লুঠমানি, ছাঁটমানি এ সবই আমরা জানতাম। বাংলার মানুষ জানতেন। মুখ্যমন্ত্রী এতদিনে স্বীকার করেছেন। তা দেখে ভাববেন না, ওনার বোধোদয় হয়েছে। এটা আরও একটা চালাকি। উনি দেখাতে চাইছেন, ওঁর দলের সবাই চোর। উনি একাই সাধ্বী! নিজেকে সাধিকা প্রমাণ করার জন্যই এ সব করছেন তিনি”। তৃণমূলনেত্রীর উদ্দেশে টিপ্পনি কেটে একই সঙ্গে অধীরবাবু বলেন, ভোটে জিততে এখন প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে এসেছেন দিদি। প্রশান্ত দিদির জীবন অশান্ত করে তুলেছেন। বলছেন, আপনার দলে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। কিছু একটা করুন।

পর্যবেক্ষকদের মতে, অধীরবাবু রাজনৈতিক ভাবে মোক্ষম জায়গায় আঘাত করতে চাইছেন তৃণমূলকে। একে তো কাটমানি প্রশ্নে তৃণমূলের নিচু তলার নেতা কর্মীদেরই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে চাইছেন তিনি। সে কারণেই বলছেন, প্রশাসনিক কর্তারা কাটমানি নিয়ে কেন নিস্তার পেয়ে যাচ্ছে? কেন তাঁদের ধরা হচ্ছে না? আবার এ কথা বলে প্রশাসনিক স্তরে কর্তা ব্যক্তিদেরও রক্ষণাত্মক করে দিতে চাইছেন অধীর।

পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বাংলার রাজনীতিতে কংগ্রেস এখন অপ্রাসঙ্গিক ঠিকই। এমন নয় যে অধীরবাবুর এ সব আক্রমণের কোনও আশু সুবিধা কংগ্রেস পাবে। কিন্তু বাংলায় শাসক-বিরোধী হাওয়ায় অধীরের এ সব কথা যে অক্সিজেন জোগাবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। অধীরবাবুও হয়তো সেটাই চাইছেন। এবং এ ব্যাপারে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড তথা সনিয়া গান্ধীর যে সবুজ সংকেত রয়েছে তাও এখন স্পষ্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.