করোনা মোকাবিলায় বড় সাফল্য, মাত্র ৬০ দিনেই কলকাতায় কোভিড সংক্রমণ কমল ৭৪ গুণ

পাঁচ মাস পর ফের কলকাতায় (Kolkata) কোভিডে (Covid-19) সংক্রমিতের দৈনিক হার মাত্র পঞ্চাশের ঘরে পৌঁছাল। ভয়ংকরভাবে দ্বিতীয় ঢেউ যে তীব্রতায় শহরে আছড়ে পড়েছিল তাতে এত কম সময়ে দৈনিক সংক্রমণ হার অর্ধশতকে নামিয়ে আনা রাজ্য সরকারের বড় সাফল্য বলে স্বীকার করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। সোমবার সন্ধ্যায় রাজ্যের হেলথ বুলেটিনের তথ্য, গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডে মাত্র ৫৪ জন নয়া সংক্রমিতের সন্ধান মিলেছে। বৃহত্তর কলকাতায় সংখ্যাটি ৬৪।

পাঁচ মাস আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্য বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিতীয় সরকারের শেষ বাজেট পেশের দিন মহানগরে দৈনিক সংক্রমিত ছিলেন মাত্র ৪৯ জন। বিধানসভার ভোটপর্বে কোভিড বিধি না মানায় লাফিয়ে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়ে দৈনিক হার প্রায় চার হাজার ছুঁয়ে ফেলে। শেষপর্বের ভোটের দিন ৩০ এপ্রিল মহানগরে সংক্রমণ হার হয় ৩৯২৪। রাজভবনে তৃতীয়বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে যেদিন শপথ নেন, সেই ৫ মে শুধুমাত্র তিলোত্তমায় নয়া কোভিড আক্রান্ত ছিল ৩৯৭৩, মৃত্যু হয় ২৫ জনের। বস্তুত সেদিক থেকে মাত্র ৬০ দিনেই ৭৪ গুন হ্রাস পেয়ে প্রায় চার হাজার থেকে সংক্রমণ হার মাত্র ৫৪তে নামিয়ে আনা দেশে সর্বোচ্চ রেকর্ড বলে দাবি কলকাতা পুরসভার। তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হল, জুলাই মাস শুরু হতেই শহরে প্রথম চারদিন দৈনিক সংক্রমণ ছিল যথাক্রমে ৯৪, ৭৯, ৭৮, ১০০ জন।


মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মেনে ব্যাপকহারে সুপার স্প্রেডারদের টিকাকরণ করা এবং ‘আত্মশাসন’ মেনে চলার জন্য সংক্রমণ হার কমেছে বলে দাবি করেন পুরসভার মুখ্যপ্রশাসক ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কথায়,“সুপার স্প্রেডার ও ৪৫ ঊর্দ্ধদের টিকাকরণ বেশি করে করার সুফল কিছুটা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী জেলার বহু মানুষ এসে পুরসভার সেন্টার থেকে টিকা নিয়ে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্যদপ্তরকে তাই কলকাতার কোটায় আরও বেশি টিকা দিতে বলেছি। তা হলে কোভিডের সংক্রমণ থেকে শহর আরও সুরক্ষিত রাখতে পারব।” বিষয়টি নিয়ে এদিনই রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের সঙ্গে কথাও বলেন মুখ্যপ্রশাসক। দেশের ৩৯টি প্রথমসারির শহরের মধ্যে টিকাকরণে সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছে কলকাতাই।

২০১১ সালের জনগননা অনুযায়ী কলকাতায় ৫০ লক্ষ বাসিন্দা বসবাস করলেও চারপাশের জেলা থেকে দৈনিক ৬০ লক্ষ মানুষ শহরে আসেন। বস্তুত পুরসভার মাথাব্যাথার কারণ ওই ৬০ লাখ মানুষ যাঁরা দৈনিক ট্রেনে, বাসে ও গাড়িতে শহরে ঢুকে ফের জেলায় ফিরে যাচ্ছেন। এদের একটা অংশই মহানগরের মাছ-সবজি বিক্রেতা, হকার-মুটে, পরিবহণ ও নির্মাণ শ্রমিক, দিনমজুর, নানা ধরনের মিস্ত্রী। সমাজের এই নিচুস্তরের মানুষের টিকাকরণের জেরে সংক্রমণ কমানো গিয়েছে বলে দাবি। তবে ফের ট্রেন-বাস চালু হলে এই দৈনিক সংক্রমণের হার ৫৪ থেকে ফের ঊর্দ্ধমুখী হতে পারে বলে আশঙ্কা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সুব্রত রায়চৌধুরির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.