একটা জীবন্ত জাতি হয়ে ওঠবার এই আগ্রহ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি—কিন্তু শেখবার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ক’জন?

” হিন্দুদের ভোট নিয়েই কংগ্রেস ব্যবস্থাপরিষদে প্রবেশ করতে পারে, অথচ হিন্দুর ন্যায্য স্বার্থরক্ষা করতে কংগ্রেস অক্ষম এবং নিজেদের হিন্দু-প্রতিনিধি বলে স্বীকার করতেও রাজী নয়। এর চেয়ে হিন্দুর দুর্ভাগ্য কি আর হতে পারে? তার রাজনৈতিক শক্তিকে লাঘব করতে, নষ্ট করতে ইংরাজ-মু.সলমানে এক বিরাট চক্রান্ত ফেঁদে বসেছে। কিন্তু হিন্দু তার নিজের কোন প্রতিষ্ঠান গড়তে চায় না। যে প্রতিষ্ঠান আমরা এত বাধা সত্ত্বেও গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছি, তাকে স্বহস্তে ভাঙতে সে আনন্দবোধ করে। এর চেয়ে আত্মঘাতী নীতি আর কি হতে পারে? যে জাতি নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যেতে এত ব্যগ্র, যে জাতির আপন জাতিত্ব-গৌরববোধ নেই, যে নিজের রাষ্ট্র গড়ে তোলার কথা ভাবলে বা বললে সঙ্কীর্ণ সাম্প্রদায়িকতা দোষে দুষ্ট হচ্ছে বলে নিজেকে ধিক্কার দেয়, সে জাতির ভবিষ্যৎ কি? শুধু ইংরেজ বা মু.সলমানকে দোষ দিয়ে লাভ কি? ইংরেজ এসেছিল এ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের লোভে। সেই লোভ ক্রমে রাজ্যাধিকারে পরিণত হল। তার এত বড় জমিদারী ও লাভের সামগ্রী সে সহজে ছাড়তে চাইবে কেন? মু.সলমান এ দেশে তার রাজত্ব বিস্তার করেছিল—৭০০ বৎসর ধরে হিন্দুদের উপর প্রভুত্ব করেছিল, কখনও তাদের সঙ্গে ভাল কখনও মন্দ ব্যবহার করে। যদিও আজ তাদের মধ্যে—বহুসংখ্যক লোক একদিন হিন্দুপরিবারে অন্তর্ভুক্ত ছিল কয়েক পুরুষ পূর্বে, তথাপি তারা আজ হিন্দু-বিদ্বেষী। আবার তারা এখানে তাদের রাজত্ব স্থাপিত করবে, এটা তারা ভাববার সাহস রাখে। যতদিন ইংরেজ এখানে প্রভুত্ব করবে, ততদিন হিন্দু মু.সলমান দুই পক্ষই ইংরেজের গোলামী করেছে। আজ ইংরেজ চলে গেলে কে বেশী ক্ষমতাশালী হবে—এটা দুপক্ষেরই ভাবা স্বাভাবিক। মুসলমান তৈরী হয়ে উঠছে সেই সময়ে যেন তারা হিন্দুর তাঁবেদাররূপে পরিণত না হয়। যদি হিন্দু মু.সলমান মিলিত হয়ে ভারতীয় সংস্কৃতিকে বজায় রাখে, যে যার ধর্ম ও আচরণ অনুযায়ী বসবাস করে, তাহলে ত গোলমালের কথা ওঠে না। কিন্তু যদি আবার মুসলমান তার স্বধর্মে অতিরিক্ত নিষ্ঠা দেখিয়ে হিন্দুর উপর আধিপত্য বিস্তার করতে প্রয়োগ করে, তখন হিন্দু কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবে সেটা চিন্তা করে দেখেও না। একটা Civil War ছাড়া হিন্দু-মু.সলমান সমস্যার সমাধান হবে না। Civil War আমরা চাই না—কিন্তু যদি অপর পক্ষ তৈরী হয়ে ওঠে আর আমরা প্রস্তুত না থাকি, তাহলে আমরাই ঠক্বব শেষ পর্যন্ত। কংগ্রেস হিন্দু-মু.সলমানের সমস্যার কোন মীমাংসা করতে পারে নি, পারবেও না। হিন্দু মু.সলমান সমস্যা হিন্দু ও মু.সলমানের ভিতর বোঝাপড়া করে শেষ হবে—বন্ধুভাবে মিলন হবে, অথবা সংঘর্ষের মধ্যে আপন আপন শক্তি পরীক্ষার পর আপোষ হবে। আপোষ যদি না হয়, যে অধিক শক্তিশালী, সেই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে। একটা প্রতিষ্ঠান যে হিন্দুর সহায়তার উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে অথচ হিন্দুস্বার্থ রক্ষা করার কথা চিন্তা করা বা বলা পাপ বলে মনে করে, সেই প্রতিষ্ঠান কি করে লড়তে পারে আর এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যে মু.সলমান প্রাধান্য স্থাপন করাই, ই.সলামের ধ্বজাকে বাড়িয়ে তোলাই তার একমাত্র কাম্য মনে করে? এই সামান্য সত্য কথা হিন্দু তার এত বুদ্ধি ও অর্থবল থাকা সত্ত্বেও বুঝতে পারে না, এর চেয়ে দুঃখের কথা কি হতে পারে? মু.সলমান ধর্মের ভিতর এক অদ্ভুত একতা আছে—সাম্যবাদ আছে, যা হিন্দু তার নিজের ধর্মাচরণের মধ্যে সহজে পায় না। নানা জাতি ও বর্ণভেদ, প্রাদেশিকতা–এইসব কারণে এক হিন্দু অপর হিন্দুর জন্য সেরূপ সহানুভূতি বোধ করে না, যা বোধ করে কোন মু.সলমান তার অন্য মু.সলমান ভাইএর জন্য—তা সে পৃথিবীর বা ভারতের যে কোন প্রান্ত থেকে আসুক না কেন? ভারতের সব হিন্দু এক- যতদিন না এই বোধ আমাদের ভিতর দৃঢ়ভাবে জন্মাবে, ততদিন হিন্দুর রাষ্ট্র বা তার জাতিগত প্রাধান্য এ দেশে স্থাপিত হতে পারবে না। সামাজিক, অর্থনৈতিক বিপ্লবের ভিতর দিয়ে আমরা নিজেদের না নিয়ে যেতে পারলে, এই বিরাট হিন্দুত্ব বোধ জাগবে না। হিন্দুসভার সামনে এই বৃহৎ কাজ রয়েছে যা সাধন করতে অনেক মালমসলার প্রয়োজন। বহু বৎসর অক্লান্ত পরিশ্রম, প্রচার, সামাজিক কুনীতির ও সঙ্কীর্ণতার সংশোধন, সাম্যবাদের উপর ধর্মের আসল ভিত্তি স্থাপন, শিক্ষাপ্রসার–এ সব না হলে হিন্দু জাগরণ সম্ভব হবে না। শুধু ব্যক্তিগত আর্থিক বা আধ্যাত্মিক উন্নতি—এই করে হিন্দু জগতে টিকে থাকতে পারবে না। নূতন করে বাঁচতে হবে, জাতিকে গড়ে তুলতে হবে, দরকার হলে অপরের কাছ থেকে নিজের প্রাপ্য কেড়ে নিতে হবে এই রকম এগিয়ে চলার তীব্র একাগ্রতা আজ ভারতের মু.সলমান সমাজের মধ্যে প্রবেশ করেছে– শুধু তাদের নিন্দা করে লাভ কি? একটা জীবন্ত জাতি হয়ে ওঠবার এই আগ্রহ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি—কিন্তু শেখবার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ক’জন?”
– Leaves from a Diary, Dr. Shyama Prasad Mukherjee
 শুভ জন্মদিন,দেবদূত৷ হিন্দু ভোট টেকেন ফর গ্রান্টেড দেখলে আজ আপনি খুশী হতেন না৷ নির্দ্ধিধায় বলতে পারি
সুতীর্থা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.