সব থেকে বেশী পরিমাণে যারা উদ্বাস্তু হয়েছে সেই বাঙালি হিন্দুর সিনেমা দেখুন, প্যাতপ্যাতে সম্প্রীতি ঠাসা নাহলে শিয়ালদা স্টেশান থেকে গল্প শুরু হয়ে বঞ্চনার কারশেডে ঢুকে যাবে

নেটফ্লিক্সে জাগামে থান্ডিরাম বলে একটা সিনেমা দেখলাম। এক তামিল গ্যাংস্টারের গল্প। কিন্তু গল্পের মূল ভিত্তি শ্রীলঙ্কার তামিল রিফিউজিরা। বেশ ডিটেলে তুলে ধরা হয়েছে শ্রীলঙ্কান তামিলদের রিফিউজি হওয়ার ঘটনা। ডিটেলে বলতে অবশ্যই “ওরা রিফিউজি” এই খান থেকে শুরু নয়। “কেন ওরা রিফিউজি” সেইখান থেকেই শুরু করা হয়েছে।

পাঞ্জাবীরা তো দেশভাগের কারন এবং “কেন ওরা উদ্বাস্তু” সেই নিয়ে গুচ্ছ সিনেমা বানিয়েছে। ইহুদীরা তো বোধহয় বছরে তিন চারটে করে বানায়। অথচ সব থেকে বেশী পরিমাণে যারা উদ্বাস্তু হয়েছে সেই বাঙালি হিন্দুর সিনেমা দেখুন। প্যাতপ্যাতে সম্প্রীতি ঠাসা নাহলে শিয়ালদা স্টেশান থেকে গল্প শুরু হয়ে বঞ্চনার কারশেডে ঢুকে যাবে। দ্রষ্টব্য ঋত্বিক ঘটকের সিনেমা। ঋত্বিকবাবুর ডিরেকশান নিয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই। ওটা ফিল্ম ক্রিটিকদের বিষয়। তবে যিনি সিপিএমকে শুয়োরের বাচ্ছাসম ভাবতে পেরেছিলেন তিনি কেন গল্পের ক্ষেত্রে শিয়ালদা স্টেশান থেকে আরেকটু পিছিয়ে গেলেননা সে নিয়ে ক্ষেদ থাকবেই।

আসল কথা হোল তামিল, পাঞ্জাবী,ইহুদি এদের দুটো জিনিষ আছে। যা আমাদের নেই। এক – “ভাবাবেগ”, দুই – পয়সা। এই দুই একসাথে আছে বলেই এদের চিন্তাভাবনা রাজনীতির কাছে বিকিয়ে দিতে হয়নি। এরা নিজেদের কথা বলতে পেরেছে। অপরদিকে আমরা এতো অত্যাচারের পরেও “একই বৃন্তের দুটি কুসুম”, কারন আমাদের ট্যাকও খালি। তাই এসব শিল্প কর্ম করার জন্য আমাদের ভরসা সেই “বহিরাগতরা”। আর ভাবাবেগ! সেও তো জমা আছে রাজনৈতিক দলের কাছে। খালি ভোটের মরসুমে জেগে ওঠে। যার ট্যাকের জোর নেই তার আবার ভাবাবেগের গুরুত্ব কি। তাই পৃথিবীর বৃহত্তম এক্সোডাসের সাক্ষী আমরা নিজেদের কথা বলতেই ভয় পায়। তাই আমাদের সিনেমায় খালি থাকে “দাদা আমি বাঁচতে চাই”, কিন্তু কেন আমাকে নিজের ভিটে মাটি ছেড়ে উদ্বাস্তু হতে হোল তা থাকেনা। অতোদূর ছেড়ে দিন, হিন্দীতে মির্জাপুর থাকে অথচ আমাদের এখানে “এত্তো এত্তো মেটিরিয়াল” থাকা সত্ত্বেও পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স নিয়ে একটা সিনেমাও হয়না। কেন উদ্বাস্তু হলাম তো আরও অনেক পরের ব্যাপার।

যতোদিননা এই অবস্থার পরিবর্তন হবে ততোদিন রাজ্যভাগ করুন আর স্বায়ত্বশাসন আনুন, যাই করুন অবস্থার কোন পরিবর্তন হবেনা। একদল উইপোকার মতো আমাদের জমি খেতেই থাকবে আর আমরা বঞ্চনার গান গাইতেই থাকব। তাই বঞ্চনা মেটাতে হলে আগে জাতি হিসাবে স্বাবলম্বী হন। নিজেদের ইতিহাস, দুঃখ, দুর্দশার কথা বলুন লজ্জা না পেয়ে দেখবেন আর রাজ্যভাগের দরকার পরছেনা। তখন রাজনীতিকে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। এখন তো রাজনীতি আপনাকে ব্যবহার করছে।

অবস্থা পাল্টাতে তাই আগে আন-এপ্যোলোজিটিক হন। নিজের ট্যাকের জোর বাড়ানোয় মনোযোগী হন। অবস্থার পরিবর্তন তবেই হবে। নাহলে আপনি পদ্মা পার করে গঙ্গা, গঙ্গা পার করে দামোদর, দামোদর পার করে মহানদী, এমনি করে একের পর এক নদী পার করতেই থাকবেন আর নিজের জমি হারাতে হারাতে একদিন বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি হয়ে যাবেন।

দীপ্তশ্য যশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.