শ্রী মোহন ভাগবত। তাঁর সঙ্গে যখন প্রথম আলাপ হয় কলকাতায়, একান্ত আলাপচারিতায় বিভিন্ন বিষয়ে সেসময়ে তাঁর যে মতামত শুনি , বা, পরবর্তী সময়ে নাগপুরে গিয়ে আরও ঘনিষ্ঠভাবে তাঁর সঙ্গে যখন বিভিন্ন বিষয়ে মত বিনিময়ের সুযোগ হয়, তখন থেকেই তাঁর প্রতি এক প্রগাঢ় শ্রদ্ধা অনুভব করেছি। পরে যখনই তাঁর সান্নিধ্যে এসেছি , তাঁর সঙ্গে মত বিনিময়ের সুযোগ এসেছে যখনই , এই শ্রদ্ধা প্রগাঢ় থেকে প্রগাঢ়তর হয়েছে প্রত্যেকবারই। তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সরসংঘচালক —- শুধুমাত্র এই কারণেই যে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রগাঢ়তর হয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। পরমপূজনীয় শ্রী মোহন ভাগবতের প্রতি আমার শ্রদ্ধা প্রগাঢ় হয়েছে একটিOই কারণে। তাহল, এক সংকটদীর্ণ সময়ের ভিতর দিয়ে যখন আমাদের পথচলা, তখন একমাত্র এই মানুষটিকেই দেখেছি, সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ বা ভোটব্যাংক রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে দেশগঠনের উপর জোর দিতে। আমার মনে আছে, 2015 সালে, প্রথম তিনি যখন আমার বাসভবনে আসেন , তখন তাঁর একটি বক্তব্য কেন্দ্র করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। সেই সময় শ্রী ভাগবত বলেছিলেন, দেশের সংরক্ষণ নীতিটির পরিবর্তন দরকার। আমাদের দেশের জাতপাতের রাজনীতির কারবারিরা হইহই করে শ্রী ভাগবতের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমে পড়েছিলেন। এমনকী পরবর্তীকালে বিজেপি এবং সংঘ পরিবারের অনেকেও বলতে শুরু করেছিলেন , শ্রী ভাগবতের এই বক্তব্যের জন্যই ওই সময়ে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পরাজিত হয়েছিল। একান্ত আলোচনার সময় আমি শ্রী ভাগবতের সামনে বিষয়টি উত্থাপন করেছিলাম। মৃদু হেসেছিলেন তিনি। বলেছিলেন , ভোটে কে জিতবে, কে হারবে, তা ভেবে মতামত দেওয়া তো আমার কাজ নয়। আমাদের ভাবতে হবে ভবিষ্যৎ ভারতের ভিতটি যাতে আরও সুদৃঢ় হয়। বস্তুত সেদিনই আমি বুঝেছিলাম — এই মানুষটি সংকীর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না। এই মানুষটি আস্থা রাখেন একটি গণতান্ত্রিক পরিসরের উপর।
আমার এই ভাবনাটি যে ভুল ছিল না, তা আজ আর একবার বুঝতে পারছি। আজ সংবাদপত্রে দেখলাম, সম্প্রতি একটি সভায় শ্রী ভাগবত বলেছেন, ” আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বাস করি। এখানে হিন্দু বা মুসলিম কারোরই প্রাধান্য থাকতে পারে না। এখানে প্রাধান্য পাবে শুধু ভারতীয়রা। ” শ্রী ভাগবত আরও বলেছেন ,” হিন্দু মুসলিম ঐক্য কথাটিই ভুল। কারণ ভারতবর্ষে হিন্দু এবং মুসলিম অভিন্ন। তাদের উপাসনা পদ্ধতি আলাদা হলেও শিকড় তাদের একই। তারা উভয়েই ভারতীয়। ” ভারতের অখণ্ডতা এবং ঐক্যের পক্ষে এই ভাবনাটিই যে জরুরি তা মনে করিয়ে দিয়েছেন শ্রী ভাগবত। ওই সভায় শ্রী ভাগবত আরো বলেছেন ” যদি কোনো হিন্দু কোনো মুসলিমকে দেশছাড়া করতে চান, তবে তিনিও প্রকৃত হিন্দু নন। ” অপরিণামদর্শী অতি উগ্র কার্যকলাপের সমালোচনা করে তাঁর বক্তব্য ” বিনা বিচারে হত্যা হিন্দুত্ব আদর্শ বিরোধী। গোরু পবিত্র প্রাণী। সেক্ষেত্রে আইন রয়েছে। পক্ষপাতহীনভাবে আইনেই বিচার হবে। “
আমি নিশ্চিত অপরিণামদর্শী অতি উগ্রবাদীদের শ্রী ভাগবতের এই বক্তব্য পছন্দ হবে না। তাঁরা ভাগবতের কঠোর সমালোচনা করবেন এবং একমাত্র তারাই হিন্দু এটা প্রচার করার জন্য আরো উগ্র আচরণ করবেন। একবারও বুঝতে চাইবেন না যে, হিন্দুত্ব ভাবনাকে একটি সংকীর্ণ গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে হিন্দুত্ব সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণাই তারা ছড়িয়ে দিতে চলেছেন বিশ্বব্যাপী।
যারা ভারতবর্ষের ইতিহাসকে সম্যকভাবে উপলব্ধি করেছেন , হিন্দুত্বকে যারা সংকীর্ণতার ভিতরে নয় , বিশালতার ভিতরে খুঁজে পান, হিন্দু দর্শনের মর্মবাণী যারা শুনেছেন , যারা সংকীর্ণ রাজনৈতিক গণ্ডিকে অতিক্রম করে সামগ্রিক ভারত ভাবনা ভাবতে পেরেছেন —- তারাই বুঝতে পারবেন শ্রী ভাগবতের এই বক্তব্যের নিহিতার্থটি কী, তার গুরুত্বই বা কোথায়। এই সংকটদীর্ণ সময়ে শ্রী ভাগবতের এই কথাগুলিই যে আমাদের সঠিক দিক্ নির্দেশ দিতে পারে — সেটা তারা বুঝবেন।
শ্রী মোহন মধুকর ভাগবত, আপনার প্রতি আরো একবার প্রগাঢ় শ্রদ্ধায় আবিষ্ট হল মন।
This is full video of Mohan Bhagwat ji from Muslim Rashtriya Manch event of 4th July 2021.
শ্রী রন্তিদেব সেনগুপ্তের লেখা