“তেলে”র আমি, “তেলে”র তুমি, “তেল” দিয়ে যায় চেনা

পেট্রোলের দাম হু হু করে বাড়ছে । ভীষণ অপরাধী কেন্দ্রীয় সরকার । তাইতো ?

বাস্তব টা কি ? এই ১০০ টাকার মধ্যে কেন্দ্রের ট্যাক্স ৩৩ টাকা ফিক্সড । যার মধ্যে চতুর্দশ অর্থ কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী ৪২ শতাংশ পায় রাজ্য গুলি । অর্থাৎ ঐ ৩৩ টাকার মধ্যে ১৪ টাকা পায় রাজ্য । এছাড়াও রাজ্য সরকারের চাপানো ২৫ শতাংশ ভ্যাট অনুযায়ী রাজ্য সরকার ২৫ টাকা ঘরে তুলছে । হিসেব বলছে এই ২৫ আর ১৪ টাকা মিলিয়ে রাজ্য প্রতি ১০০ টাকায় পাচ্ছে ৩৯ টাকা । কেন্দ্র পাচ্ছে ১৯ টাকা । ডিলাররা পাচ্ছে ৩.৬৮ টাকা প্রতি লিটারে । বাকি ৩৮ টাকা তেলের আমদানি, পরিশোধন এবং পরিবহন খরচ আদতে ।

এই বাস্তবতার সঙ্গে প্রশ্ন আসছে মূল দাম অর্থাৎ এই ৩৮ টাকাটা বাড়ছে ধাপে ধাপে কি ভাবে এবং কেন ? মে, ২০২১ এ প্রতি ব্যারেলের দাম ছিল ৬৬.৯৫ ডলার যা জুন ২০২১ এ এসে দাঁড়িয়েছে ৭১.৯৮ এ । প্রায় এক মাসে তেলের দামে যদি পাঁচ ডলারের বৃদ্ধি ঘটে সেই খরচ কে মেটাবে ? এরাজ্যের বাম এবং তৃণমূলীরা বলবেন কেন কেন্দ্র মেটাবে । ঠিক । যেভাবে মিটিয়েছিলেন ড: মন মোহন সিং সরকার । ১ লক্ষ ৪ হাজার কোটি টাকার অয়েল বন্ড বাজারে ছেড়ে । যার দেনা এখন কেন্দ্রীয় সরকারের ঘাড়ে । প্রতি বছর দশ হাজার কোটির সুদ মেটাতে হয় দিল্লিকে । মাথায় দেনা এখনও ১ লক্ষ ৩ হাজার কোটি টাকা । সঙ্গে সুদ বাবদ দেয় দশ হাজার কোটি বছরে । কোন সরকার চলে, চলতে পারে এভাবে ? সঙ্গে আবার ফ্রী রেশন, ফ্রি ভ্যাকসিন, এবং ৪২ টি গরীব মানুষের প্রকল্প ।

তারপর তেলের বাড়তে থাকা দাম মেটাও তুমি মোদী !!

বলুন না মমতা প্রতি ১০০ টাকায় পেট্রোল থেকে যে ৩৯ টাকা পাচ্ছেন তার থেকে ১৯ টাকা নেবেন না আপনি গরীব মানুষের স্বার্থে । পারবেন বলতে ?

এ প্রশ্নটা তুলতে পারবে আনন্দবাজার, বর্তমান, এই সময় ? বললেই বিজ্ঞাপন বন্ধ । তেলের ডিভিডেন্ড যে তাদের ঘরেও ঢুকছে হাসি মুখের বিজ্ঞাপনের গলি পথ দিয়ে । ফলে তারাও চুপ । আজ সন্ধ্যে বেলা চ্যানেল গুলো প্রচার শুরু করল কেন্দ্র নিচ্ছে ৩৩ রাজ্য পাচ্ছে ১৯ । আসল সত্য ও তথ্যকে সযত্নে লুকিয়ে ।

তেলকে জি এস টি র আওতায় আনতে চেয়েছে কেন্দ্র । জি এস টি কাউন্সিলে তা উঠতেই তীব্র বিরোধিতার পথে হেঁটেছিলেন ড: অমিত মিত্র । কেউ সেটা নিয়ে আলোচনা করছি ? জি এস টি র আওতায় এলে দামটা কমত । এটা উল্লেখ করে একটা সম্পাদকীয় লিখবে কেউ ? মনে হয় না ।

সেঞ্চুরি পেরোনো তেলের দাম নিয়ে তাই হুল্লোড় চলবে । আসল তথ্য এবং সত্যকে সযত্নে আড়াল করে । খেয়াল করে দেখুন মমতা এটা নিয়ে কোন তীব্র আন্দোলনে, প্রতিবাদে যাচ্ছেন না । তার কারণ তার পাওয়া ৩৯ টাকার ডিভিডেন্ড নিয়ে লোকে এখন প্রশ্ন তুলবে । বলবে আপনি কেন অত টাকা নিচ্ছেন ?

তেলের দাম নিয়ে মমতা এখন তাই মেঘের আড়াল থেকেই খেলবেন তার মিডিয়ার গৃহপালিতদের দিয়ে । প্রতিদিন তারা টক শো বসাবে, হেডলাইন করবে । গরীব, মধ্যবিত্তদের জন্য পাগলের মত কাঁদবে । একটার পর একটা তীর ছুড়বে নরেন্দ্র মোদীর দিকে । স্ক্রিনের আড়ালে প্রম্পটারকে খুশী করাবে ।

এই চিত্রনাট্যের নাম আদতে – “তেলে”র আমি, “তেলে”র তুমি, “তেল” দিয়ে যায় চেনা ।।

এ তেল আসলে “সেঞ্চুরি পেরোনো মহার্ঘ্য তেল” নয় । এ তেল আসলে বহুমূল্য গলানো তেল । খরচ করলেও খরচা হয়না, উল্টে ডিভিডেন্ড পাওয়া যায় ।

বুঝলেন ?

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.