ফেসবুকে ওরা খারাপ, আমরা কত ভালো এসব তো অনেক হল। কিন্তু তাতে কি বাস্তবটা বদলে যায়?
আজ বাস্তবটা কি? জীবিকার স্টেটাস কি হবে, সেই দেখে প্রেমিকা কি বলবে, আত্মীয়রা কি ভাববে, সেই বিচার আগেভাগেই করে, একটা সাধারন চাকরি বা সরকারি কেরানী হবার বাসনায় কারা সারা জীবন পরীক্ষার হলেই আর কোচিং সেন্টারে কাটিয়ে দিল? আর তার কোচিং এর ফী ভরার জন্য বাড়ীর গয়না চলে যায় বন্ধকে। আর কারা, কোন কমিউনিটির মানুষেরা এসবের তোয়াক্কা না করে একটা যেকোন হাতের কাজ আঁকড়ে ধরে সেটায় নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে, রোজগার বাড়িয়ে যেতে থাকে? আর তারপর নিজের কমিউনিটির আরো দু চার জনকে সেখানে কাজের ব্যবস্থা করে দেয়?
আপনার লোকালিটির সেরা ইলেকট্রিশিয়ান, সেরা কার্পেন্টার, সেরা অটো মেকানিক, সেরা মোবাইল টেকনিশিয়ানটি কে বা কারা? এঁদের পরিচয় একটু জানার চেষ্টা করুন। এঁদের দৈনিক রোজগার অনেক হোয়াইট কলার কর্পোরেট এক্সিকিউটি এর থেকে অনেক বেশি। এরা প্রথাগত শিক্ষার পেছনে না দৌড়ে নিজের স্কিল বাড়িয়েছে এবং উনিশ কুড়ি বছর থেকেই রোজগার করা শুরু করেছে। আত্মীয়, বন্ধুদের কাছে এদের সম্মান সেই সব ফালতু কারণে নষ্ট হয়না। কাজ করে, হাতে ক্যাশ টাকা পায়, ইনকাম ট্যাক্স দিতে লাগে না, বিপদে পড়লে বাড়ী থেকেই দু পাঁচ লাখ যখন তখন বার করে দিতে পারে। একে অপরের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়ায়, কারণ পাশে দাঁড়াতে পকেটে রেস্ত লাগে, আর সেটা এঁদের আছে। কথার দাম আছে, সেটার নড়চড় হতে আজও দেখিনি।
যাদের পকেটে পয়সা আছে, দাপট তো তাদেরই থাকবে, তাই না? তারাই আস্তে আস্তে জমির দখল নেবে, তাদেরই কথায় দেশ চলবে। তখন সে এইট ফেল না ডক্টরেট কেউ দেখবে না। আর ওই ছাইপাঁশ ডিগ্রী আজকাল কেউ দেখেও না। ফেসবুক, গুগল, টেসলা এরাও দেখছে না। “স্কিল” আর “উইল”ই শেষ কথা। আর সেখানেই এই আমরা দশগোল খেয়ে বসে আছি। কিন্তু হতাশা কাটিয়ে কিছু করার সময় এসে গেছে। এখনও যদি না হয় তবে আর কবে! শুধু ওদের সমালোচনা করে, ফেসবুকে হাজার লাইকের জ্বালাময়ী ভাষণ লিখে, খিল্লী করে, তত্ত্বকথা আউড়ে বাস্তবের কোনই পরিবর্তন হবে না।
নিচে একটা ছোট্ট ভিডিও রইল। এটা দেখে মনে আশা জাগে, তাই দিলাম। সুরাটের এই যুবক চাকরি না খুঁজে নিজের মোটর সাইকেলের সাথে একটি গোটা কিচেনকে চাকা লাগিয়ে নিয়ে, চালিয়ে স্যান্ডউইচ তৈরী করে বিক্রী করছে। তাঁর “মোবাইল দোকানে” উপচে পড়ছে ভীড়। সব ব্যাপারেই রয়েছে উদ্ভাবনী ক্ষমতার ছাপ। যেমন পরিপাটি দোকান, তেমনি নতুন রেসিপির স্যান্ডউইচ। তৈরি করতে যা যা সরঞ্জাম দরকার সব ঠিকমতন সাজানো আছে। এর মধ্যেই নিজের ব্র্যান্ডিং করে নিয়েছে সে। “হ্যাপীস চারকোল বুলেট স্যান্ডউইচ” এর দাম একশ টাকা, আর প্রতিদিন বিক্রি মোটামুটি দুশো পিস। তার মানে দিনে কুড়ি হাজার টাকার বিক্রী। আরো দুটি ছেলে এর সাথে অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কাজ করে। ছেলেটি চুপ করে বসে না থেকে, একে তাকে দোষারোপ না করে, নিজে উদ্যোগ নিয়েছিল। আজ এর উদ্যোগ ডানা মেলেছে।
অ্যান্ড দ্যাট শ্যুড রিমাইন্ড, দেয়ার ইজ নো রয়াল রোড টু সাকসেস।
শান্তনু সোম