বাসে চেপেই লন্ডন থেকে কলকাতা! এ এক অন্য ইতিহাস

কলকাতার (Kolkata) সঙ্গে লন্ডন। এই দুটি নাম শুনলেই এখন লোকজন হাসিঠাট্টা করতে ছাড়েন না। কারণটা কী, তা কমবেশি সকলেরই জানা। কিন্তু কলকাতার সঙ্গে লন্ডনের (London) যোগাযোগ বহু পুরনো। বলতে গেলে ব্রিটিশ আমল থেকেই। এই কলকাতাকেই তো ব্রিটিশরা একসময় রাজধানী হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। কলকাতার প্রতি ইংরেজদের একটা টানও চোখে পড়েছিল। অনেক লন্ডনবাসী কলকাতা দেখার জন্য উৎসুকও ছিলেন। সে ইংরেজ শাসনের আগেও যেমন ছিল, ইংরেজরা দেশছাড়া হওয়ার পরও ছিল। যার জেরে দুটো শহরের মধ্যে বেশ মিলও ছিল। আর তাই তো লন্ডন থেকে কলকাতায় ছুটে আসত বাস। হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।

জানা যায়, ১৯৫০-এর দশকে থেকে লন্ডন থেকে কলকাতায় বাস পরিষেবা চালু ছিল। বাসের নাম- ‘অ্যালবার্ট’ (Albert)। সত্তরের দশকে তো রীতিমতো বিখ্যাত ছিল এই বাস। বাসের ভেতরে ছিল বিলাসবহুল বন্দোবস্ত। লাক্সারি (Luxury) সুবিধা নিতে গেলেই পকেট থেকে বের করতে হত ১৪৫ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১৪ হাজার টাকা। কী কী লাক্সারি সুবিধা পাওয়া যেত বাসে? জানা যা, ওয়ান সাইড ট্র্যাভেলে লাক্সারি সুবিধার মধ্য়ে ছিল ফুডিং, লজিং-সহ আরও কত কিছু৷

বাসের নর্মাল ভাড়া নিয়ে ভাবছেন নিশ্চয়? তা একটু মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরেই বটে। তাতেও বিলাসবহুল সুবিধা পেত যাত্রীরা। কারণ বাসে উঠলেই গুণতে হত ৮৫ পাউন্ড। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৮ হাজার টাকা। ভাবুন তো সে সময়কার হিসাবে এটা কি কম? নয় নিশ্চয়!

এবার প্রশ্ন হল বাসের রুট। ঠিক কোন রাস্তা দিয়ে লন্ডন থেকে কলকাতায় আসত অ্য়ালবার্ট? এর একটি ছবিও পাওয়া যায়। তা থেকে জানা যায় যে, লন্ডন (London) থেকে বাসটি ছেড়ে প্রথমে বেলজিয়াম পৌঁছত৷ সেখান থেকে পৌঁছত পশ্চিম জার্মানি, অস্ট্রিয়া, যুগোস্লোভিয়া। যুগোস্লাভিয়ার পর বুলগেরিয়া, তুরস্ক, ইরান হয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করত বাসটি। সেখান থেকে পশ্চিম পাকিস্তান হয়ে ভারতে৷ ভারতে ঢোকার পর ‘অ্যালবার্ট’এর গন্তব্য ছিল দিল্লি (Delhi)। তারপর আগ্রা, এলাহাবাদ, বারাণসী হয়ে যাত্রীদের নিয়ে কলকাতায় প্রবেশ করত বাসটি ৷

এককথায় বলতে গেলে ‘অ্যালবার্ট’এ উঠলেই যাত্রীরা এক অদ্ভুত অ্যাডভেঞ্চারের সাক্ষী থাকতেন। মোট ১৫০টি সীমান্ত পেরোত অ্যালবার্ট। তবে তার জন্য সমস্যা তেমন হত না। সকলের কাছে ‘বন্ধু–দূত’ বলেই পরিচিত ছিল সে।

জানা যায়, অ্যালবার্টের শেষ ট্রিপ ছিল ১৯৭৬ সালে। তারপর আর য়াত্রা করেনি ঐতিহাসিক এই বাস। কেবল অমলিন হয়ে রয়ে গিয়েছে স্মৃতির অগোচরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.