মায়ানগরী তুমি নীরব কেন ?

মায়ানগরী তুমি নীরব কেন ?
—————————

এই রাজ্যে যার অনুমতি ছাড়া একটা পাতাও নড়ে না। যিনি একধারে কবি, শিল্পী, যার আঁকা ছবি কোটি টাকায় বিক্রি হয়, যিনি বহু ভাষা জানেন, একটুখানি ভুল হতেই পারে, কিন্তু যিনি নতুন সরস্বতী অজ্ঞলি মন্ত্র বানান, যিনি সব বিষয়েই কিছু না কিছু বলেন, কিন্তু এত বড়ো ভ্যাক্সিন কেলেঙ্কারিতে – মাননীয়া আপনি নীরব কেন?
খোদ কলকাতায় ভুয়ো ভ্যাকসিন ক্যাম্প !! ভাবা যায় ???

পুরসভা জানে না, তার স্বাস্থ্য দফতর জানে না, সেই ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি জানে না, অথচ কসবায় নীল সাদা বেলুন পুরসভার স্টিকার লাগিয়ে রমরম করে করে ভ্যাকসিন শিবির চলা সম্ভব ?

সকালে কোন একটি চ্যানেলে কসবার এক ভদ্রলোক বলছিলেন – আমার সন্দেহ হওয়ায় আমি সাড়ে বারোটা নাগাদ কসবা থানার ও সি কে ফোন করি । থানার ওসি বলেন – ওটা কর্পোরেশনের করা ক্যাম্প । ভদ্রলোক আরও খবরা খবর নিয়ে যখন নিশ্চিত হন আবার ফোন করেন ও সি কে । পাছে ওসি কাজ না করেন ভদ্রলোক স্পেশাল কমিশনারকে ফোন করে জানান ব্যাপারটা । বিকেল গড়াতে কসবা থানা বোঝে জল অনেক দূর গড়িয়ে গেছে । তখন সুওমোটো কেস করে দেবাঞ্জন দেবকে এরেস্ট করে থানা । বড় বাবুর বোধোদয় হয় । ততক্ষনে ২০০ জনের শরীরে ঢুকে গেছে ” টিকা ” । শোনা যাচ্ছে এই কারবার চলছিল অনেকদিন ধরেই ।

সাংসদ মিমি চক্রবর্তী নিজেও নাকি ভ্যাকসিন নিয়েছেন ওই শিবিরে । চ্যানেলগুলোতে দেখা গেল সেই দৃশ্য । এবং তারপর সারা দিন ধরে মিমি কি বলছেন সেটাই প্রচার হতে থাকল । মিমি বললেন আমার সন্দেহ হওয়ায় আমি ক্যাম্প বন্ধ করাই । ওদিকে এই মিমিই একদিন আগে ক্যাম্পে দাঁড়িয়ে বলে এসেছেন – সবার যাতে বিশ্বাস হয় তাই আমিও নিচ্ছি এখানে ভ্যাকসিন ।

কে ঠিক বলছেন – মিমি না ভদ্রলোক তাতে যাচ্ছিনা । দুটো বক্তব্য পাশাপাশি শুনে বারবার মনে হয়েছে – কেউ একজন ঠিক বলেছেন, কেউ একজন বানিয়ে গল্প বলেছেন । কিন্তু সমগ্র ঘটনায় কতগুলো প্রশ্ন বারবার মনে আসছে ।

১. কসবা কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ন স্থান । সেখানে পুর প্রতিনিধি জানল না অথচ নীল সাদা বেলুন দিয়ে সাজিয়ে ২৫০ জনের ভুয়ো ক্যাম্প হল কি ভাবে ?

২. ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে কসবা থানা । সেই থানার বড় বাবু ( ভদ্রলোকের কথা অনুযায়ী) কি ভাবে বলে দিলেন যে ক্যাম্পটি পুরসভার ?

৩. মিমি চক্রবর্তী গেলেন ক্যাম্পে অথচ সেখানকার পুর প্রতিনিধি জানবেন না হয় ? যাঁদের এ রাজ্যের রাজনীতি সম্বন্ধে সামান্য জ্ঞান আছে তারাও জানেন এটা অসম্ভব ।

৪. একজন সাংসদ কতটা নিশ্চিত ছিলেন না হলে তিনি নিজেই ক্যাম্পে ভ্যাকসিন নিলেন । সাংসদকে যে কেউ ডাকলে চলে যাবেন এটা হয় ? পূর্ব পরিচিতি বা রাজনৈতিক যোগ না থাকলে কেউ এতটা বিশ্বাস রাখতে পারেন যা মিমি করে দেখালেন ।

৫. শোনা যাচ্ছে এই ভুয়ো ব্যক্তি এর আগে সোনারপুরেও ক্যাম্প করেছেন । যদি রাজনৈতিক প্রশাসনিক ভরসা না থাকে আজকের দিনে সেটা সম্ভব ?

৬. একটি চ্যানেল সম্প্রচার করছে – টিকার ভায়ালে নাকি লেখা ছিল না ম্যানুফ্যাকচারিং ডেট, না একসপায়ারি ডেট । যদি সত্যি তাই হয় ?
ঈশ্বর করুন এ সংবাদ যেন সত্য না হয় । ভুল হয় । আর এদিকে কলকাতার মহামহিম ববি হাকিম প্রেসকে বলেছেন – ঘোর অন্যায় । তদন্ত হবে ।

মনে পড়ছে প্রেসিডেন্সি জেলে যাওয়ার সময় চোখের জল ফেলে ববি হাকিম বলেছিলেন – কলকাতার মানুষকে বাঁচাতে পারলাম না ।

বাঁচানোর এই বুঝি নমুনা ? ভুয়ো ক্যাম্পে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে এখন বলছেন তদন্ত হবে ? এই কীর্তি হচ্ছে কেন এ শহরে বলুন সেটা । পুলিশ কি করছিল ? পুরসভা কি করছিল ? দায়িত্বশীল পুর প্রতিনিধিরা কি করছিল ? যদি বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে এই ভ্যাকসিন তা ধরার দায়িত্ব কার ?

এখন তদন্ত হয়তো হবে, মিডিয়ার নজর যতদিন থাকবে । দেবাঞ্জন হয়তো জেলে যাবেন । তারপর কোন এক সকালে বেরিয়েও আসবে ।

কিন্তু যে প্রশ্নের উত্তরটা অধরাই থেকে যাবে যে, এই দেবাঞ্জনরা এই শহরে বসে অনেক মানুষের ক্ষতি করার এই শক্তি আর সাহসটা কোথা থেকে পান ?

কাদের আশীর্বাদ না থাকলে খোদ কলকাতা শহরে নিজের বাড়িতে টানা তিন বছর ধরে ভুয়ো আইএএস নেমপ্লেট লাগিয়ে রাখা যায় ?

ভুয়ো শিবিরের খবর পেয়েও থানার ওসিরা কিভাবে নির্বিকার থাকতে পারেন ? সটান গিয়ে ক্যাম্প বন্ধ করতে পারেন না কেন ?

আশীর্বাদের এই লম্বা হাত কতটা লম্বা, কলকাতার মানুষ বারবার টের পাচ্ছে ।

কখনো ভাগাড়ের মৃত পশুর মাংস খেয়ে, কখনো ভুয়ো ক্যাম্পের ভ্যাকসিন দেহের মধ্যে নিয়ে বেঁচে আছে কলকাতা একদিন লন্ডন হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ।

ভালো থেকো কলকাতা, এটাই তোমার পাওনা । জয় বাংলা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.