সর্বজন পরিচিত বিশ্ববরেণ্য পাথারকান্দির মণিপুরি মৃদঙ্গবাদক তথা নৃত্যগুরু লক্ষণ সিনহার জীবনাবসান ঘটেছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। আজ রবিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় নয়াডহরে তাঁর নিজস্ব বাসভবনে অন্তিম নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। বেশ কিছুদিন থেকে বিশ্ববরেণ্য এই নৃত্যগুরু তথা প্রখ্যাত মৃদঙ্গবাদক লক্ষণ সিনহা বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তাঁর মৃত্যু সংবাদে পাথারকান্দি সহ গোটা বরাক উপত্যকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রয়াত নৃত্য গুরুকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে নয়াডহরে তাঁর বাড়িতে কোভিড প্রটোকল মেনে বহুজন উপস্থিত হয়েছিলেন।
বিশিষ্ট এই শিল্পী একসময় ভারত থেকে বিভিন্ন নৃত্যের কলা নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রতিনিধিত্ব করে বেশ সুনাম অর্জন করেন। তাঁর বহুমুখী নৃত্যকলার জন্য তৎকালীন দিল্লি বোম্বাইয়ের অনেক চিত্র পরিচালক তাঁদের ছায়াছবিতে নৃত্যকলার জন্য পরামর্শ নিতেন। দিল্লির সঙস অ্যান্ড ড্রামা ডিভিশনের আমন্ত্রণে বেশ কিছুদিন নৃত্য পরিচালকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পী লক্ষণ সিনহা। সম্পূর্ণ মণিপুরি আঙ্গিকে “ময়ূর” নৃত্যের প্রবর্তক ছিলেন নৃত্যগুরু লক্ষণ সিনহা।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর সঙ্গে এই নৃত্যশিল্পী লক্ষণ সিনহার ঘরোয়া সু-সম্পর্ক ছিল। এমন-কি লালবাহাদুর শাস্ত্রীর আমন্ত্রণে সে সময় দিল্লিতে সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাক পেতেন তিনি। লালবাহাদুর শাস্ত্রী যখন ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী, তখন পাথারকান্দির এই মণিপুরি মৃদঙ্গ বাদক তথা নৃত্যগুরু লক্ষণ সিনহা সারা ভারতবর্ষে তাঁর শিল্পকলা প্রদর্শন করে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। ওই সময় তিনি বিদেশেও মৃদঙ্গ বাজিয়ে এবং মণিপুরি নৃত্য পরিবেশন করে সুনাম কেড়েছিলেন। ভারতের বিশিষ্ট ভারতরত্ন গায়িকা লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গেও বহুবার একই মঞ্চে তাঁর কলা প্রদর্শন করেছেন লক্ষণ সিনহা।
আজ তাঁর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল, প্রাক্তন বিধায়ক মণিলাল গোয়ালা, কংগ্রেস নেতা শচীন সাহু, বিজেপির স্থানীয় নেতা-কার্যকর্তা, চতুরঙ্গ-এর মতো বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল এক শোকবার্তায় বলেন, প্রতিভাবান এই শিল্পীর মৃত্যুতে পাথারকান্দির সুস্থ সাংস্কৃতিক জগত প্ৰকৃত এক অভিভাবককে হারাল। যা কোনওদিনই পূরণ হওয়ার নয়। লক্ষণ সিনহার নির্দেশিত পথে এগিয়ে যেতে তিনি যুবপ্রজন্মেসর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
2021-06-28