আদালতে বার বার মুখ পোড়ে রাজ্য সরকারের । কততম সেটা নিয়ে গবেষণা চলতে পারে ।
আমার আপনার পয়সায় আদালতে মামলা লড়া এবং নিয়ম করে হারা এটা যেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রাকটিস করে ফেলেছে । যেমন হারাটাও অভ্যাস করে ফেলেছে ।
কলকাতায় লড়াই গুলোর খরচ কত ? লোকে বলেন এক একদিনে এক একটা মামলা লড়তে চার পাঁচ লাখের শ্রাদ্ধ । সব মিলিয়ে । সুপ্রিম কোর্ট হলে এক একজন খ্যাতনামা আইনজীবির এপিয়ারেন্স ফি লাখ দশেক । তার বাইরে অন্য খরচ ।
রাজ্য শুধু দিল্লির খ্যাতনামা উকিলদের পেছনে কত টাকা খরচ করেছে গত দশ বছরে ? RTI করুন । উত্তর পাবেন না ।
আর কলকাতায় খরচ ? তারও উত্তরও পাবেন না । খেয়াল করে দেখুন রাজ্যের বহু নেতা মন্ত্রীর আইনি লড়াই লড়েন অভিষেক মনু সিংভি কিম্বা কপিল সিব্বলের মত কংগ্রেসের খ্যাতনামা আইনজীবীরা । শুধু এঁদের জন্য রাজ্য কোষাগারের কত টাকা গেছে ? প্রশ্ন করতে পারবেন কেউ ? কোন সাংবাদিক ? করলেই মালিক চাকরি খাবেন নিশ্চিত ।
আজ আরও একটা ঘটনা দেখলাম আমরা । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুব তৃণমূলের একদা সাধারণ সম্পাদক পালিয়ে বেড়ানো গরু/ কয়লা পাচারকারী বিনয় মিশ্রর হয়ে কলকাতা হাইকোর্টে প্লিড করছেন সেই অভিষেক মনু সিংভী । লড়তে কে তাঁকে এই দায়িত্ব দিলেন ? সেটা বলার অপেক্ষা রাখে কি ?
শুধু প্রশ্ন একটাই – নারদ কাণ্ডে সিবিআই আটকাতে তাঁকে, নারদ কাণ্ডে জামিন মঞ্জুর করতে তাঁকে, বিনয় মিশ্রর হয়ে আইনি লড়াই লড়তে তাঁকে কাজে লাগানো কার ইচ্ছেতে হয় বলতে পারেন ?
প্রশ্নটা সহজ, উত্তরটাও জানা । তবুও প্রশ্নটা করতে হয় কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই টাকাটা যাচ্ছে আমার আপনার ।
হতে পারেন তিনি ভারত বিখ্যাত আইনজীবী । কিন্তু তিনি তো রাজ্যসভার সদস্যও বটে । এবং এই বাংলারই । সর্ব ভারতীয় একটা দলেরও নেতা । বাংলার সব চোর ছ্যাঁচোরকে বাঁচানোর দায়িত্ব কি তাঁকেই নিতে হবে । রাজনীতির মঞ্চে থাকলে কিছু কিছু বিষয় যে না বলতে হয় শেখাতে হবে তাঁকে ?
উত্তর নেই । কে-ই বা দেবেন !
শুধু আজ বেশ মজা লাগছিল দেখে কোন একটা টি ভির ঘণ্টা খানেকের টক শো তে সঞ্চালক তৃণমূল প্রতিনিধিকে যখন বলছিলেন – রাজ্য সরকারের গরিমা কি রক্ষা হত না যদি সন্ত্রাস বন্ধে রাজ্য যথা সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিত । তাহলে এ ভাবে হাইকোর্টের ধমক খেতে হত না ।
গণতন্ত্রের তৃতীয় স্তম্ভের বকুনি খেল রাজ্য সরকার । সেটাই ছিল সঞ্চালকের প্রশ্নের প্রেক্ষাপট ।
কিন্তু গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বাংলা সংবাদ মাধ্যম গত সাত সপ্তাহ ধরে এই সন্ত্রাসের ভয়াবহ ছবি কি ভাবে সেন্সর করেছে, আড়াল করেছে এবং কেন করেছে সে নিয়ে যদি পাল্টা প্রশ্ন করা হত ঘণ্টা খানেকের পরিসরে তাঁর গরিমা কি বাড়তো ? কি উত্তর দিতেন তিনি ? আদালত যেটা শিখিয়ে দিল আজ সেটাতো শুধু রাজ্য সরকারকে নয় । সংবাদ মাধ্যমকেও । হত দরিদ্র ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘর ছাড়া সর্বহারা মানুষগুলোর কথা যদি সম্প্রচার হত লাগামহীন এই সন্ত্রাস কিছুটা হলেও বন্ধ হত । যদি বোধ থাকত তারা বুঝতেন ।
আত্মমর্যাদাহীন জ্ঞানপাপীদের অবশ্য বোধ থাকে । কিন্তু “অবোধ” সাজেন এরা সময়ে সময়ে, শুধুই বৈষয়িক কারণে ।
এটাই আসল সত্য, নির্মম সত্য ।।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)