দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে কৃষকদের আত্মহত্যা করার মত বেদনাদায়ক, লজ্জাজনক ঘটনা আজও একবিংশ শতাব্দীর ভারতবর্ষের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘটে। প্রশ্ন জাগে, কৃষকদের ঘাড়ে এই দেনা চাপার কারণ কী? আসল কথা হল, সবুজ বিপ্লব- খাদ্য স্বনির্ভরতার ঢক্কানিনাদে চাপা পড়ে গেছে কিছু জরুরি প্রশ্ন তাই প্রদীপের নিচে জমেছে নিকষ কালো আঁধার।
কৃষিক্ষেত্রে উন্নত সার, উচ্চফলনশীল বীজের খরচ চাষিভাইদেরকেই যে শুধু বহন করতে হয় তাই নয় এই সমস্ত অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বাজার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করে পাঞ্জাব-হরিয়ানা-পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষকরূপী ধনী জোতদারের দল। সবুজ বিপ্লবের গুড় পুরোটা এরাই খেয়ে আসছে বিগত দুই প্রজন্ম ধরে। তাই কায়েমি স্বার্থে আঘাত করা নতুন কৃষি বিলের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন ও বিক্ষোভ জারি রয়েছে।
তাতে কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের গতি রুদ্ধ করা যায়নি। আত্মনির্ভর ভারতের পথেই বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক শাখা ন্যানো টেকনোলজির সফল প্রয়োগে ভারতীয় কৃষক সার সমবায় সমিতি সংক্ষেপে IFFCO নিয়ে এসেছে বোতলবন্দি তরল ন্যানো ইউরিয়া (Nano Urea)। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাটের কালোলে অবস্থিত ন্যানো বায়োটেকনোলজি রিসার্চ সেন্টারে এই বিশেষ সারের উৎপাদন করা হয়েছে।
কী গুণ আছে এই ন্যানো ইউরিয়ার যা সাধারণ ইউরিয়ায় নেই? সর্বপ্রথমেই এই প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, সাধারণ ইউরিয়া যেখানে ফসলকে প্রয়োজনের মাত্র ৩০%-৪০% নাইট্রোজেন সরবরাহ করতে পারে ন্যানো ইউরিয়া সেখানে ৮০% নাইট্রোজেন সরবরাহ করতে সক্ষম। দ্বিতীয়ত, একটি ৫০০ মিলি ন্যানো ইউরিয়ার বোতলে ৪০০০০ মিলিগ্রাম/লিটার নাইট্রোজেন থাকে যা প্রায় একটি বড় ব্যাগভর্তি সাধারণ ইউরিয়ার সমান। অর্থাৎ সাধারণ ইউরিয়ার ব্যবহার প্রায় ৫০% শতাংশ কমিয়ে বিপুল পরিমাণ কৃষকের খরচ বাঁচাতে পারে ন্যানো ইউরিয়া। ইতিমধ্যেই ১১০০০ কৃষকের জমিতে ৯৪ রকম শস্যের উপর এর পরীক্ষামূলক সফল প্রয়োগ হয়েছে।
সাধারণ ইউরিয়া সারের জন্য ভারত আজও বিদেশ থেকে আমদানির উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। এই সাফল্যের পর অনেকে বলেছেন, ৭০ বছর ধরে মৌরসিপাট্টা চালানো শাসককূল খাদ্য স্বনির্ভরতার ফাঁপা বুলি দিয়েই খালাস হয়েছিলেন। চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের স্বনির্ভরতাটুকুর গুরুত্বও তাঁরা উপলব্ধি করতে পারেননি যা আজ করে দেখাচ্ছেন গুজরাতের অখ্যাত রেল স্টেশনের এক চা-ওয়ালা।