সোনারপুরে ভিড়ে ঠাসা ট্রেন থেকে পড়েই গেলেন দুই যাত্রী! ট্রেন বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ

ভিড়ে ঠাসাঠাসি ট্রেন। ওঠা কার্যত অসম্ভব। কিন্তু অন্য উপায়ই বা কী! তাই মরিয়া হয়ে সেই ট্রেনেই উঠতে গিয়ে পড়ে গেলেন দুজন মহিলা! আজ, বুধবার সকাল সকাল সোনারপুর স্টেশন চত্বরে এই নিয়েই উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। স্টাফ স্পেশ্যাল ট্রেন আটকে, রেল লাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন নিত্যযাত্রীরা।

লকডাউনে বন্ধ পরিবহন। বন্ধ লোকাল ট্রেন। কেবল চলছে কয়েকটি স্টাফ স্পেশ্যাল। কিন্তু তাতে সকলের ওঠার অধিকার নেই। রেলকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং ব্যাংক কর্মীদের জন্যই ট্রেনের কামরাগুলো বরাদ্দ। কিন্তু অফিসকাছারি তো খুলে গেছে, খুলেছে সকলেরই কর্মস্থল। কাজে না বেরোলে পেট চালানো দায়। এদিকে পৌঁছনোরও উপায় নেই। ফলে সাধারণ মানুষ পড়েছে বিপাকে, জীবিকাস্থলে পৌঁছতে হবে তাঁদেরও!
আজ, বুধবার সকালে এভাবেই কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য ভিড় ট্রেনে উঠতে গিয়ে দুজন যাত্রী পড়ে যাওয়ার পরে ক্ষেপে ওঠে জনতা। জানা গেছে, সকাল ৭টায় সোনারপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল আপ ক্যানিং লোকাল স্টাফ স্পেশ্যাল ট্রেন। সেই ট্রেনে এতই ভিড় হয়ে গেছিল যে গাদাগাদি করে দরজার বাইরে ঝুলছিলেন অনেক যাত্রী। এর পরে ট্রেন ছাড়তেই পড়ে যান দুই মহিলা। শোরগোল উঠতে ট্রেন আবার দাঁড়িয়ে পড়ে।

এর পরই বিক্ষুব্ধ জনতা অবরোধ শুরু করে। লোকাল ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর দাবিতে জনরোষের মুখে পড়ে রেল দফতর। কিন্তু রাজ্য সরকারের নির্দেশ অমান্য করে এখনই ট্রেন চালু করা সম্ভব নয়। অনুমতি পেলেই চাকা ঘুরবে রেলের, এমনটাই জানিয়েছিল রেল মন্ত্রক।

দুই মহিলা পড়ে যাওয়ার পরে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আরপিএফ, জিআরপি বাহিনী। অবরোধকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু সেই কথায় কর্ণপাত না করেই যাত্রীরা অবরোধ চালিয়ে যান। এরফলে, শিয়ালদা দক্ষিণ শাখার বজবজ ছাড়া সমস্ত শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। প্রায় চার ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

উল্লেখ্য, লোকাল ট্রেন চালু করতে চেয়ে কিছুদিন আগেই রাজ্যকে চিঠি দিয়েছিলেন পূর্ব রেল ও দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছিল, লোকাল ট্রেন চালু করার ব্যাপারে কী ভাবছে সরকার? পাশাপাশি চিঠিতে লেখা হয়েছে, স্টাফ স্পেশাল ট্রেনে বাড়ছে ভিড়। করোনা আবহে ভিড় কমাতে আরও ট্রেন চালানো প্রয়োজন।

পূর্ব রেল সূত্রে জানানো হয়, লকডাউনের আগে শিয়ালদা ডিভিশনে প্রতিদিন ৮৮২টি লোকাল ট্রেন চলত। এখন চলছে ১৮০টি। ফলে অফিস টাইমে ট্রেনে ভিড় বাড়ছে। উপেক্ষিত হচ্ছে করোনা বিধি।

গত বছর, ২৩ মার্চ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত, দীর্ঘ ৯ মাস বন্ধ ছিল ট্রেন পরিষেবা। সংক্রমণ কমার পর গত ১১ নভেম্বরে ফের চালু হয় লোকাল ট্রেন। কিন্তু, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠায় ৫ মে থেকে ফের বন্ধ করে দেওয়া হয় লোকাল ট্রেন।
তারপর থেকেই দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। জীবিকা বজায় রাখতে গিয়ে চরম অসুবিধেয় পড়ছেন সাধারণ মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.