কলকাতা, ২২ জুন (হি স)। কেরলে সংখ্যালঘুদের মধ্যে স্কলারশিপ বণ্টনের হার নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলে দিল কেরালা হাইকোর্ট। কেরলে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের নির্দেশকে দমন করার ক্ষেত্রেও পদক্ষেপ নিয়েছে কেরালা হাইকোর্ট। পশ্চিমবঙ্গেও আইনি সুবিচারের লক্ষ্যেএকই পথে হাঁটতে চলেছে একটি সংগঠন।
কেরালায় মুসলিম এবং ল্যাটিন ক্যাথলিক ও ধর্মান্তরিত খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য ৮০: ২০ হারে স্কলারশিপ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই হারকে ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে। অতি সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি মণিকুমার ও বিচারপতি সাজি পি চালির নেতৃত্বে ডিভিশন বেঞ্চ উভয় সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারাই যাতে সমানভাবে স্কলারশিপের সুবিধা পান সেব্যাপারে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুসারে কল্যাণ পর্ষদের নির্দেশ আইনসঙ্গত নয়। এ ব্যাপারে একটি স্বচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া দরকার যাতে দুই সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের সুবিধা পাওয়ার মধ্যে একটা সমতা থাকে। জানিয়েছে কেরল হাইকোর্ট।
নবগঠিত ‘স্বাভিমান জাগরণ’-এর রাঢ় বঙ্গের মুখ্য সংগঠক তথা জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সংঘের প্রাক্তন রাজ্য কার্যকরী সদস্য ডঃ রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রতিবেদককে বলেন, “হিন্দু জাগরণ মঞ্চের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এটি এখন বিচারাধীন। আসলে সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে পরোক্ষে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট প্রাপ্তিটাই এখানে মুখ্য, বাকি সব গৌণ্য। হিন্দু সমাজ থেকে ইসলাম ও খ্রিস্টান ধর্মে পরিবর্তন হওয়ার উৎসাহ এক্ষেত্রে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ এই রাজ্যে যেখানে একজন স্নাতক পর্যায়ের প্রথম বর্ষে পাঠরত তফসিলি বর্ণের হিন্দু পড়ুয়ার তুলনায় সংখ্যালঘু পড়ুয়া প্রায় তিনগুণ অর্থ সংবিধান বহির্ভূত ভাবে লাভ করে, সেখানে সামাজিক সাম্যের সাংবিধানিক লক্ষ্য পূরণ হবে কি করে?“
দেশের মুসলমানদের আর্থসামাজিক ও শিক্ষা পরিস্থিতির নিরিখে বাড়তি সুযোগ দেওয়ার বিতর্কটি নতুন নয়। এ নিয়ে বিচারপতি রাজেন্দ্র সাচারের নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্ট ২০০৬ সালের ১৭ নভেম্বর পেশ করা হয়। তা লোকসভা ও রাজ্যসভায় পেশ করা হয় ৩০ নভেম্বর, ২০০৬। ওই রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১,৩৪,৯৭২ জন কর্মীর তথ্য দিয়েছিল। তাতেই ২.১ শতাংশ মুসলিমের হার উঠে এসেছে। এই তথ্যে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি মুসলিমের চাকরি করার হার স্বরাষ্ট্র দফতরে, ৭.১ শতাংশ। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য, মহিলা ও শিশু কল্যাণ বিভাগে এক শতাংশ ও অন্যান্য বিভাগে ২.৪ শতাংশ। যদিও সাচার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে শিক্ষা দফতর ও পরিবহণ দফতর কোনও তথ্য সরবরাহ করেনি।
সাচার কমিটির পর মূল্যায়ন নিয়ে এক পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠিত হয় জেএনইউ-এর সেন্টার ফর স্টাডি অফ রিজিওনাল ডেভেলপমেন্টের অধ্যাপক অমিতাভ কুণ্ডুর নেতৃত্বে। ওই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, সিএসও-র ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল, গেটস ফাউন্ডশন (দিল্লি)-এর ড. আমিরউল্লাহ খান, পুণের পি এনামদার, আইওএসের ড. মনজুর আলম, জেনএনইউয়ের অধ্যাপক পি এম কুলকার্নি, গুজরাতের ইরমার ডিরেক্টর জিমোল উন্নি, পিএমওর জাতীয় পরামর্শ পরিষদের সদস্য ফারাহ নাকভি, অধ্যাপক আবদুল সাবান, কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলের সম্পাদক আলি আহমেদ।
সাচার রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে মুসলিমদের উপস্থিতি ছিল ২.১ শতাংশ। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘ব্যুরো অফ অ্যাপ্লায়েড ইকোনমিকস অ্যান্ড স্ট্যাটিকস’ যে ‘স্টাফ সেন্সাস রিপোর্ট: ২০১৪-১৫’ প্রকাশ করে, তাতে দেখা যাচ্ছে ২০১৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে মুসলিমদের অংশিদারিত্বের হার ৫.৭৩ শতাংশ।
সাচার কমিটির পর কুণ্ডু কমিটির রিপোর্ট বের হলেও তাতে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের নিয়োগ সম্পর্কে তেমন তথ্য ছিল না। যদিও আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি পাওয়া যায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা স্ন্যাপ ও গাইডেন্স গিল্ড প্রকাশিত এক সমীক্ষা রিপোর্ট (স্ট্যাটাস অফ মুসলিমস অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল, প্রিলিমিনারি পাবলিক রিপোর্ট ২০১৪)। নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেনের সংস্থা প্রতীচী ট্রাস্টের সহযোগিতায় হয় এটি। ৭৭ পাতার রিপোর্টে মুসলিমদের আর্থ সামাজিক ও শিক্ষার হাল তুলে ধরলেও তাতে রাজ্যের সরকারি চাকরিতে মুসলিমদের উপস্থিতি নিয়ে কোনও তথ্য ছিল না।
রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার রাজ্যে আসার পর মুসলিমদের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি বা ওবিসি হিসেবে অন্তর্ভুক্তির কাজে খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। এর পাশাপাশি মূলত মুসলিমদের জন্য ওবিসি-এ তালিকাভুক্তদের জন্য সরকারি চাকরিতে ও শিক্ষায় ১০ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
(চলবে)
হিন্দুস্থান সমাচার/ অশোক
অশোক সেনগুপ্ত
http://bengali.hindusthansamachar.in/NewsDetail?q=70CFB2BD696F54CC97A99F26ABBD63D0