বাঙালি ভারতের নবজাগরণের কান্ডারি ছিল। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠে’ ভারতবর্ষ ‘বন্দেমাতরম’ পেয়েছে, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এঁকেছেন ‘ভারতমাতা’, স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রীঅরবিন্দ পুনর্স্থাপিত করেছেন ভারতাত্মাকে, রবীন্দ্রনাথ দিয়েছেন জাতীয় সংগীত। সেই বাঙালি আজ অন্তর্জলী যাত্রার পথে।
বাঙালি হিন্দুর কাছে ২০২১ এর নির্বাচন সাধারণ কোন খেলা ছিলো না, ছিল জীবন মরনের লড়াই। খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ, কালিয়াচকের থানা জ্বালিয়ে দেওয়া, দেগঙ্গা, ধূলাগড় বসিরহাটের দাঙ্গার পরে বাঙালি হিন্দুদের অস্তিত্বটাই বিপন্ন মনে হয়েছে।
১৯৪১ সালের আদমশুমারীতে ব্রিটিশ বেঙ্গলের হিন্দুর সংখ্যা ছিল ৪২%। এর সঙ্গে কোচবিহারের মতো দেশীয় রাজ্যগুলির জনসংখ্যা যোগ করলে প্রায় ৪৬ শতাংশ বাঙালি হিন্দু ছিলেন। ২০১১ সালের পশ্চিমবঙ্গের আর বাংলাদেশের জনসংখ্যা মোট ২৩ কোটি ৪৫ লক্ষ মানুষের মাত্র ৩১.০৯% হিন্দু। ২০২১ সালের আদমশুমারীর জন্য অপেক্ষা করার আগেই বলা যায় যে এই সংখ্যা ৩০ শতাংশের অনেক নিচে নেমে যাবে। বিগত মাত্র ৭০ বছরে কিভাবে একটা সাংস্কৃতিকভাবে উন্নত, সম্পন্ন জাতির জনসংখ্যার ১৬/১৭ শতাংশের হ্রাস হয়ে গেল তার অনুভব এরাজ্যের মানুষের গত মাসাধিক কালে হয়েছে।
বাঙালি হিন্দুর এমনই একটা বিপদের সময় আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য এসেছিলেন। আরও ২৫০ পরে রাজা রামমোহন এসেছিলেন বাংলার নবজাগরণের সূচনা করে। যদি বিগত ৭০ বছরে যে হারে হিন্দুদের সংখ্যা কমেছে তা অব্যাহত থাকে, তবে আজ থেকে ২৫০ বছর পরে বাঙালি হিন্দুর সংখ্যা ৬ শতাংশের মতো হবে। আর আজ থেকে ৫০০ বছর পরে মাত্র ১.২১% হয়ে যাবে। বাঙালি হিন্দুর বিলুপ্তির এই হিসেব কোন জ্যোতিষীর হিসেব হয়, সাধারণ গুনোত্তর প্রগতিতে প্রাপ্ত হিসেব। সমাজবিজ্ঞানীদের হাতে যেসব “কারেকশন ফ্যাক্টর ” থাকে, তাতে একটু আধটু এদিক ওদিক হতে পারে, কিন্তু মূল অঙ্কটা মোটামুটি একই থাকবে।
এই বিপন্নতার অনুভব গ্রামের মানুষ তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে করেছেন। শহর কলকাতা আর তার সংলগ্ন মানুষ, তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা করেন নি। কিন্তু মানুষের মতামতে স্পষ্ট যে তারা বাঙালি হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য চিন্তিত। ৭৭টি আসনে বিজেপি জয়লাভ করেছে। নন্দীগ্রামের মতো যেখানেই প্রার্থীরা হিম্মতের সঙ্গে পুনঃগননা করাতে পেরেছেন, সবকটিতেই ভারতীয় জনতা পার্টির জয় হয়েছে।
১৯৫২ সালে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম বিধানসভার মুখ্যমন্ত্রী হলেন ড. বিধানচন্দ্র রায়। বিরোধী দলনেতা জ্যোতিবসুর সঙ্গে ২৮ জন বিধায়ক ছিলেন। ১৯৭৭ সালে মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবসুর বিধানসভাতে বিরোধী দলনেতা জনতা দলের প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের সঙ্গে ছিলেন ২৯জন বিধায়ক। সেবছর কংগ্রেসের ২০ জন বিধায়ককে যুক্ত করলেও সংখ্যাটা ৪৯ হত।
২০০১ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখ্যমন্ত্রীত্বে গঠিত বিধানসভাতে বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলেন ৬০ জন বিধায়ক। ২০০৬ সালে তা অর্ধেক হয়ে হয়েছিলেন ৩০ জন। তাই এবারের বিরোধী নেতা ভারতীয় জনতা পার্টির শুভেন্দু অধিকারী এরাজ্যের ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংখ্যা নিয়ে বিধানসভার বিরোধী নেতা হয়েছেন। রাজ্যের মানুষ ভোট দিয়ে তার সঙ্গে ৭৭ জন বিধায়কে বিধানসভাতে পাঠিয়েছেন। যা এরাজ্যের সর্বকালের রেকর্ড।
কিন্তু গনতান্ত্রিক ভারতবর্ষে কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হল গত মাসে। এত রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা ভারতের আর কোথাও নেই। গতবছর বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জোট জিতেছে, কতজন মানুষ নির্বাচনোত্তর হিংসাতে মারা গেছেন? একজনও নয়। গত মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জোট হেরে গেল। সেখানেও একজন মানুষ মারা যান নি। দেশের মধ্যে আমরাই সবথেকে সংস্কৃতিবান। তাই আমাদের বিদ্দ্বজন, সাংবাদিক, বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের বা উচ্চ শিক্ষিত দেশের গর্ব যেসব উচ্চপদস্থ যেসব সরকারি আধিকারিক, কারোর লজ্জা হয় না।
সম্প্রতি বিচারের শুনানির গুরুদায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন সুপ্রিমকোর্টের মহামান্য বিচারপতি ইন্দিরা ব্যানার্জি। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ফল যেদিন ঘোষণা হল, সেদিন সন্ধ্যায় শহর কলকাতার কাঁকুড়গাছিতে লোহার রড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারা হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মী, তরতাজা যুবক অভিরূপ সরকারকে। সেই মামলার শুনানি থেকেই সরে এলেন বিচারপতি।
মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে রাজ্যে নির্বাচন পরবর্তী হিংসার ঘটনার সত্যাসত্য বিচার করে বিস্তৃত রিপোর্ট তৈরী করতে বলেছেন।
আজকের পৃথিবীতে গনতন্ত্রের চারটি স্তম্ভ বহু চর্চিত হয়। রাজনীতি, বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন আর সংবাদ মাধ্যম। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে দেখা গেল, যে বিচার ব্যবস্থা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে গনতন্ত্রের বাকি স্তম্ভ গুলির কোন শক্ত ভিত নেই।
একমাত্র বিচারব্যাবস্থায় অনুভূত হয়েছে যে বাঙালির অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। তাই কলকাতা হাইকোর্ট থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সর্বত্র তাই আলোড়ন উঠেছে।
সবথেকে লজ্জাজনক ভূমিকা নিয়েছে বাংলার সংবাদ মাধ্যম। সম্প্রতি এক সাংবাদিক সসম্মেলনে পালটা প্রশ্ন করা হয়েছে সাংবাদিকদের। “আপনারা কি হিংসা দেখেছেন?”। সকলে চুপ করে ছিলেন। ২ মে তারিখের পর থেকে ৩২ জন রাজনৈতিক কর্মী খুন হয়েছেন, এত মানুষ ঘর ছাড়া, এত মহিলার সম্ভ্রম নষ্ট হয়েছে, ত্রান শিবিরগুলিতে করোনার আবহে এত মহিলা, শিশু নরকের জীবনযাপন করছেন। এসব কলকাতার সাংবাদিকরা কিছুই দেখেন নি। কারণ তাদের কেবল এরাজ্যের উন্নয়ন আর ভিনরাজ্যের দুর্নাম করার জন্যই নিয়োগ করা হয়েছে! ভাবতে লজ্জা লাগে এই কলকাতা “হিন্দু প্যাট্রিয়ট” কাগজের সম্পাদক হরিশ মুখোপাধ্যায়ের শহর!
সবচেয়ে বেশী উপদ্রুত অঞ্চলগুলির মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার লোকসভার উদাহরণ দেওয়া সবথেকে উপযুক্ত হবে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই হিন্দুদের উপর লাগাতার অত্যাচার হচ্ছে এখানে। ডায়মন্ড হারবার, ফলতা, সাতগাছিয়া, বিষ্ণুপুর, মহেশতলা, বজবজ আর মেটিয়াবুরুজ এই সাতটি বিধানসভা নিয়ে ডায়মন্ড হারবার লোকসভা। এই সবকটি বিধানসভাই রক্তস্নাত। গত লোকসভা নির্বাচনে গ্রামের পর গ্রাম থেকে হিন্দুদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই বর্বরোচিত ঘটনার বিবরণ জাতীয় সংবাদমাধ্যমে এসেছে কিন্তু কলকাতার বাংলা খবরে আসেনি। কোনও নৃসংশতা, কোনও অপরাধই এগিয়ে থাকা সংবাদ মাধ্যমের প্রভুভক্তি টলাতে পারেনি। লোকসভা ভোটের পরে শাসকদলের এক নেতার কর্মীসভার রাজনৈতিক বিশ্লেষণের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। সেখানে তিনি বলেছেন, “কেন হিন্দুদের ভোট দিতে দেওয়া হল?” এইসব ভয়ানক অপরাধের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে ধীরে ধীরে এলাকাটি মমধ্যযুগীয় বর্বরতা প্রত্যক্ষ করেছে। একের পর এক হত্যা হয়েছে কোন বিচার হয়নি। অপরাধী অবাধে ঘুরে বেরিয়েছে। কেউ অভিযোগ করলে পালটা মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে প্রতিবাদীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এই ডায়মন্ড হারবারের কথা প্রশাসনের কারো অজানা নয়। বাঙালির অন্তর্জলি যাত্রার সময় এনারা ঠিক কি ভুমিকা নিয়েছিলেন সেটাও একদিন লেখা হবে। কারণ সত্য স্বপ্রকাশ। সত্যকে সকলের কাছ থেকে চিরকাল লুকিয়ে রাখতে কেউ পারেনি আর পারবেও না। বাঙালির উপর নীপিরনের কথা ইংরেজ চাপা দিতে পারেনি, পূর্বপাকিস্তানের খান সেনারাও পারেনি, আজকের ঘটনাও একদিন সবিস্তারে প্রকাশিত হবে।
গত ৭মে ফলতা বিধানসভার চককৃষ্ণ রামপুর গ্রামের এক প্রন্তিক চাষি সুকুমার মন্ডল আত্মহত্যা করলেন। সুকুমার বিজেপির নেতা ছিলেন। পার্শ্ববর্তী বেনিয়াবাটি এবং চককৃষ্ণ রামপুর নিয়ে 201 ও 202 নম্বর বুথ। ৬ মে বৃহস্পতিবার শাসকদলের চল্লিশ- পঞ্চাশ জনের হার্মাদবাহিনী বাড়িতে বাড়িতে হুমকি দিতে বের হয়। এই বুথে তাদের প্রাপ্ত ভোট কম হওয়ায় অনুমানের ভিত্তিতে হুমকি চলছিল। মৃত সুকুমার মণ্ডল খুব গরীব । সেদিন তাকে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়। তার স্ত্রী ও মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে বলে শাসিয়ে যায় ওই গুণ্ডা বাহিনী। মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে ওই গরীব প্রান্তিক চাষী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
গত ২ মে তারিখের পর থেকে ফলতা সহ প্রায় সবকটি বিধানসভাতেই অমানুষিক অত্যাচার শুরু হয়।
ফলতা বিধানসভার ফলতা অঞ্চলের পাচলোকী গ্রামের… বছর চল্লিশের যুবক অরিন্দম পুরকাইত । পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা আর ছেলের সংসার, এক বোন, তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অরিন্দমের নেতৃত্বে গত বিধানসভা নির্বাচনে পাঢলোকি গ্রামে বিজেপি এগিয়ে থেকেছে। ভোটের পরে শাসকদল আশ্রিত সাম্প্রদায়িক দুষ্কৃতিরা অরিন্দমকে তুলে নিয়ে যায় এবং প্রচন্ড শারীরিক নির্যাতন করে। এরপর থেকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে ১৫ মে রাতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে অরিন্দম।
২৯ মে তারিখে একান্ত প্রয়োজনে সকাল ৮টার সময় ডায়মন্ড হারবার বিধানসভার সাধুরহাট বাজারে আসেন রামনগর থানার নালা গ্রামের বছর তিরিশের বিজেপি কর্মী রাজু সামন্ত। শাসকদলের সমর্থকদের গণপিটুনিতে ঘটনাস্থলে ওই যুবকের মৃত্যু হয়। এই নিদারুণ ঘটনার প্রতিবাদ করতে পরের দিন, ৩০ মে আশেপাশের চার পাঁচটি গ্রামের সাধারন গ্রামবাসী একত্রিত হন। কিন্তু প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণ ছিল। কারোকে মারধর করা হয়নি, সরকারি বা বেসরকারি কোন সম্পত্তির কোন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু সেদিনই বিকেল থেকে ওই গ্রামবাসীদের গ্রেপ্তার করা শুরু হয়। মোট ২৭ জন গ্রামবাসীকে জামিন অযোগ্য ধারাতে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই গ্রেপ্তার হওয়া প্রায় সকলেই তপশিলি জাতিভুক্ত মানুষ।
রাজনৈতিক কারণ চরিতার্থ করতে এই হাজতে আটকে রাখার প্রক্রিয়া বহুদিন যাবদ এই লোকসভা এলাকায় চলছে। গত ১১মে ডায়মন্ডহারবার জেল হেপাজতে মৃত্যু হল স্বপন মন্ডলের। একনিষ্ঠ বিজেপি কর্মী স্বপন মন্ডলকে গত ৩রা এপ্রিল ফলতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
৩মে মগরাহাটের সৌরভ বর আর ১৬ মে বিষ্ণুপুরের গৌর দাস একইভাবে নৃশংসতার বলি হয়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে কেবল ডায়মন্ড হারবার লোকসভাতেই এতজন মানুষের প্রান গেছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগণা, উত্তর ২৪ পরগনা, বীরভূম, মেদিনীপুর বা কোচবিহারের এক একটি বিধানসভা ধরে ধরে এমন অত্যাচারের বর্ননা দেওয়া যায়।
৫ মে যখন মন্ত্রীসভা শপথ নিচ্ছে তখন দাউদাউ করে জ্বলছে দক্ষিণের ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা, বসিরহাট, হিঙ্গলগঞ্জ থেকে উত্তরের চোপড়া, দিনহাটা। সর্বত্র একই চেহারা। ভাঙড়, গোসাবার মতো বহু জায়গায় বুলডোজার দিয়ে গ্রামের পর গ্রাম গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর হিন্দুদের ১ থেকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দিয়ে ঘরে ফিরতে হয়েছে। অনেকটা “জিজিয়া কর” আদায়ের মতো। যারা জরিমানা দিতে পারেনি তাদের বাড়ির মেয়ে বউদের কয়েক ঘন্টার জন্য নিয়ে গিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অসম্ভব লজ্জার কথা শত শত মানুষ বলতে পারেন নি। কিন্তু অনেক সাহসী হিন্দু এফআইআর করেছেন, ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়েছেন। এই সাহস বাঙালি হিন্দুর অন্তর্জলী যাত্রার পথে একমাত্র আশার আলো।
মানিকতলা বিধানসভার অভিরূপ সরকার। বছর পঁয়ত্রিশের ছেলেটি কলকাতা পৌরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
একদম তরতাজা প্রানবন্ত ছেলে। রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরের, বেড়ালকে খুব ভালোবাসত। বস্তির বাড়ির মধ্যেই একটা ছোট্ট এনজিও করেছিল। এবার নির্বাচনে বিজেপির প্রর্থী ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক কল্যাণ চৌবের সমর্থনে খুব খেটেছিল অভিজিৎ। ২ তারিখে ফল প্রকাশ তখনও সম্পূর্ণ হয়নি। তার বাড়ি আক্রান্ত হল। তার এনজিও ঘরে রাখা কুকুরের ছোট্ট বাচ্চাগুলোকে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে আক্রমণকারীরা। সেই মর্মান্তিক কাহিনীই সে ফেসবুক লাইফ করে জানাচ্ছিল। কিন্তু আরও মর্মান্তিক পরিনাম যে তার জন্য অপেক্ষা করছে, তা সে স্বপ্নেও ভাবেনি।
একদিক থেকে দেখতে গেলে অভিরূপ তো মুক্তি পেয়ে গেছে। কারণ পশ্চিমবঙ্গেও দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসছে পূর্ববঙ্গের বাস্তব। আজকের ক্ষমতার চিটেগুড়ে লুটোপুটি খাচ্ছেন যেসব রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী, সংবাদমাধ্যমের সুবোধ বুদ্ধিজীবীরা, যেইসব মহান প্রতিভাবান শিল্পীরা ‘অন্য কোথাও যাবো না’ বলেছিলেন, কলকাতার যেসব উচ্চশিক্ষিত মানুষ আরবান নকশালদের ফাঁদে পরে #NovoteforBJP বলেছিলেন তাঁরা তো এরাজ্যে বেঁচে থাকবেন। তারা পূর্ববাংলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি নিজেদের চোখে দেখবেন। রাজশাহীর ইলা মিত্রের ঘটনা, চট্টগ্রামের নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপালকৃষ্ণ মুহুরীর হত্যার মতো ঘটনা নিজেদের চোখে দেখবেন। বাড়ির দালানের থামে পুরুষদের বেঁধে এক এক করে মেয়েদের চোখের সামনে গনধর্ষিতা হতে দেখে পূর্ববঙ্গ থেকে হিন্দুরা এপারে পালিয়ে এসেছেন। ছটফটে অভিরূপকে আর এইসব মর্মান্তিক দৃশ্য দেখতে হবে না। ও অবলা পশুদের সেবা করত, মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াত, তাই ভগবান পশুপতিনাথ ওকে এসবের আগেই নিজের কাছে ডেকে নিয়ে গেছেন।
জিষ্ণু বসু