আজ পশ্চিমবঙ্গ দিবসে চন্দনা বাউরি সম্বন্ধে দু’কথা না বললে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ভুল অনেক হয়েছে। স্যাবোট্যাজ করা হয়েছে। উপরন্তু ছিল কেরালার প্যাঁচ। সেই কেরালা যেখানে স্বয়ং শ্রীবিষ্ণুও শয্যারত অবস্থায় থাকেন এই ভয়ে যে দাঁড়িয়ে থাকলে কেরালার লোক এমন লেগ পুল করবে যে তাঁকেও টাল সামলানোর প্রয়াস করতে হবে।
কিন্তু সেই সঙ্গে চন্দনা বাউরির মত ধুলোয় পড়ে থাকা একটুকরো সোনার হিন্দু বাঙালীকে খুঁজে বেরও করেছে এই দলটিই। নিন্দার ভাগের সঙ্গে সঙ্গে এ কৃতিত্বও ভারতীয় জনতা পার্টির। ঠিক সেইরকম একজন জনপ্রতিনিধি চন্দনা যে জনগণের তিনি প্রকৃত প্রতিনিধি।
“মেজিয়া ব্লকে ক্ষতিগ্রস্ত সমস্ত বাড়ি ঘুরে দেখলাম এবং বিডিও’র সঙ্গে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস দিলাম। মানুষের জন্য বিজেপি সবসময় পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে।” আজ টুইট করেছেন চন্দনা।
হয়ত টুইটটি নিজে নিজে করেন নি, কিন্তু ভেঙ্গে পড়া মাটির ঘরের দেওয়ালে হাত দিয়ে দেওয়ালের ফাটলের দিকে চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বোঝার প্রয়াস করছেন যে মেয়ে, তিনি চন্দনাই। এবং ঐরকম একটি বাড়ির মেরামতি কিসে, কিভাবে কত তাড়াতাড়ি হতে পারে তা বোঝার ক্ষমতাও চন্দনা বাউরিরই আছে। নিজের সংসার সামলে অন্য বাড়িতেও ডোমেস্টিক হেল্পের কাজ করা মেয়েদের ক্ষমতা কতখানি তা বাকসর্বস্ব, বোদ্ধা বাঙালী বুঝি কল্পনাও করতে পারবেন না। মা দশভুজাকে দেখার তো চোখও লাগে।
চোখ কেন ঝাপসা হচ্ছে জানি না। আবেগপ্রবণ হওয়ার তো কারণ নেই! চন্দনার মত মেয়েদেরই তো জনপ্রতিনিধি হওয়া স্বাভাবিক কারণ মাটির একদম কাছটা সাদা চোখে দেখতে পাওয়ার ক্ষমতা রাখেন এই চন্দনারাই। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তাঁর আগমনে উচ্ছ্বাসের পরিবর্তে আবেগ আসার অর্থ হল, চন্দনাদের আগমন আজও ব্যতিক্রমী ঘটনা হয়েই রয়ে গিয়েছে আমাদের কাছে। তাই এই আবেগবিহ্বলতা। অজস্র ভুলের মধ্যে বেশ ক’টি মণিমুক্তা কুড়োনোর জন্যও অকুণ্ঠ ধন্যবাদ প্রাপ্য বিজেপির।
চন্দনা বাউরি ইতিমধ্যেই পথ দেখিয়েছেন বার বার। চন্দনাই প্রথম প্রত্যাখ্যান করেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা। ‘রাজ্যের মানুষ আক্রান্ত, আমি নিরাপত্তা নেব কিভাবে?’ চন্দনার পর ছাড়লেন অন্যরাও। এমনকি তাঁরাও, যাঁরা MP হওয়া যাবৎ ডাঁটের মাথায় নিরাপত্তা নিয়ে গাড়ি চড়ে ঘুরতেন এবং হাবেভাবে বহু লোককেই বুঝিয়ে দিতেন তাঁরা ‘কেউকেটা’। পোস্টারে নাম না থাকায় তেজ দেখিয়ে সভামঞ্চ থেকে নেমে চলে যাওয়া রূপোলী নেত্রীও নিরাপত্তা ছাড়তে বাধ্য হলেন। মাটির কাছাকাছি থাকলে অনেক বিষয়ই স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। চন্দনারা দেখতে পান। সত্যজিৎ রায়ের ‘সদানন্দের ক্ষুদে জগত’ গল্পটা পড়া আছে? তারপর ছাড়লেন বিপুল অঙ্কের মাসমাইনে। ওঁর যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু রেখে বাকিটা জনকল্যানে, সেবায়। ‘অত টাকা নিয়ে আমি কি করব? আমার তো অত লাগবে না—বললেন চন্দনা।’ এ মাটি আজও স্বর্ণপ্রসূ। গর্বের পশ্চিমবঙ্গ।
চন্দনাকে কথা দিলাম। যদি কোনোদিন সুযোগ হয় ভারতের সংসদে সাংসদ হিসেবে বা রাজ্যের বিধানসভায় বিধায়ক হিসেবে পৌঁছনোর, তাহলে সনাতন ভারতীয়ত্বের পথে খরচটুকু বাদ দিয়ে বাকি মাসমাইনে আমিও দেব জনকল্যানে। চন্দনার দেখানো পথে। আমার অনুপ্রেরণা এই তিনিই। brutal honesty’র বড় প্রয়োজন এখন পশ্চিমবঙ্গের।