বাড়ি নয় যেন হত্যাপুরী! কালিয়াচকের পুরনো ষোলো মাইল এলাকার সেই অদ্ভুতদর্শন নির্মাণই এখন ভাবিয়ে তুলেছে তদন্তকারীদের। যে মৃত্যুপুরী থেকে বৃহস্পতিবার উদ্ধার হয়েছে ৪ জনের পচাগলা দেহ।
মহম্মদ আসিফ এবং তার পরিবারের মূল বাড়ির ঠিক পাশেই তৈরি করা হয়েছিল আরও একটি বাড়ি। ওই নির্মাণটি নিয়ে ভাবনার যথেষ্ট কারণও রয়েছে তদন্তকারীদের। বাড়িটির উচ্চতা প্রায় ৭০ ফুট। লম্বায় আনুমানিক ৫০ ফুট এবং চওড়া প্রায় ৪০ ফুট। অথচ গুদামের মতো আয়তনের ওই বাড়ির কোনও ছাদ নেই। রয়েছে একটি বারান্দা। তবে ওই বারান্দায় পৌঁছনোর কোনও সিঁড়ি নজরে আসেনি। বাড়িতে বাইরে থেকে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি মাত্র দরজা। এ ছাড়া কোনও জানালা বা ভেন্টিলেটর দেখতে পাওয়া যায়নি ওই বাড়িতে। বাড়ির চার পাশে প্রচুর সিসি ক্যামেরা ছিল। এ তো গেল বাইরের অবস্থা।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই গুদামের ভিতরে চৌবাচ্চার আকারের কয়েকটি গর্ত খোঁড়া হয়েছিল। সেখান থেকেই উদ্ধার হয় আসিফের আসিফের ঠাকুমা, বাবা, মা এবং বোনের পচাগলা দেহ। ওই গর্তগুলি ছাড়া ওই বাড়ির বাকি অংশ ফাঁকা বলেই পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই বাড়িটির মাথার উপর ছাদ না থাকায় বৃষ্টি এবং নানা কারণে গর্তগুলি বুজে গিয়েছিল। শনিবার সেই মাটি খুঁড়েই দেহগুলি উদ্ধার করেন পুলিশকর্মীরা।
গুদামের আকারের ওই বাড়িটি মূল বাড়ির পাশে হলেও, তাদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের জন্য কোনও দরজা ছিল না। তবে পুলিশ দু’টি বাড়ির মধ্যে একটি সুড়ঙ্গ আবিষ্কার করেছে। তদন্তকারীদের ধারণা, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ বাড়ির সকলকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর পর, ওই সুড়ঙ্গ পথেই তাঁদের পাশের বাড়িটিতে নিয়ে গিয়েছিল আসিফ। যাতে বাইরের কেউ তাকে দেখতে না পায়। সেখানে পরিবারের সকলকে হাত-পা বেঁধে, মুখে লিউকোপ্লাস্ট আটকে ওই গর্তে ফেলে দেয় সে। গর্তে সে সময় জল ছিল বলে আসিফ পুলিশ জানিয়েছে। যদিও আসিফের দাদা আরিফের দাবি সে ওই মৃত্যুপুরী থেকে বার হয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল।
পুলিশ মনে করছে, কম্পিউটারে দক্ষ আসিফ এক সময় বিটকয়েনের মাধ্যমে বিপুল টাকা আয় করেছিল। কম বয়সে বেশ ভাল পরিমাণ অর্থ উপায় করে ফেলায় আসিফ তার বাবা এবং মায়ের আস্থা অর্জন করে নিয়েছিল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের ধারণা, বাবা এবং মায়ের আস্থা অর্জন করেই তাঁদের থেকে টাকা নিয়ে গুদামের আকারের ওই বাড়িটি নির্মাণ করছিল আসিফ। বাড়িটি অন্য কাজে ব্যবহার করাই তার উদ্দেশ্য ছিল মনে করছেন তাঁরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘গুদামের মতো দেখতে ওই বাড়িটির নির্মাণ চলছে। যে ভাবে নির্মাণ হচ্ছে তাতে কিছু একটা রহস্য আছে। ওই বাড়িটা মানুষ থাকার জন্য বানানো হয়নি। ওর (মহম্মদ আসিফ) নিশ্চয় অন্য কোনও পরিকল্পনা ছিল।’’ কী সেই পরিকল্পনা? তা জানতে আসিফকে জেরা চালাচ্ছে পুলিশ। তবে পাড়ায় এমন কাণ্ডে হতবাক স্থানীয় বাসিন্দারা।