মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে বসে আজ একটা ভীষণ দামী কথা বলেছেন – কারও চোখে ন্যাবা হলে আমি কি করব । বাংলায় সন্ত্রাস নিয়ে হৈ চৈ প্রসঙ্গে কথাটা বলেছেন । মুখ্যমন্ত্রীর কথার মানে করলে যা দাঁড়ায় তা হল যারা সন্ত্রাস দেখছেন তাঁদের চোখে জন্ডিস হয়েছে ।
ঠিকই তো, তাঁর সাধের নন্দীগ্রামে বিরোধী রাজনীতি করার জন্য আত্মীয়কে দাহ করতে গিয়েও দুটি হাত ভাঙা অবস্থায় বাড়ি ফিরেছেন তরুণ । বাংলা সংবাদ মাধ্যমের অনুপ্রাণিত অনুগত টিম সে ছবি পেয়েও দেখায়নি । যাঁরা দেখিয়েছেন ধরে নিতেই হবে তাঁদের চোখে ন্যাবা হয়েছে । অতএব তিনি ঠিকই বলেছেন ।
যাঁরা খবর পেয়েও ছাপেননি উত্তর ২৪ পরগণার মধবকাঠি, যোগেশগঞ্জে দীপিকা পারুইদের কাহিনী তাঁদের এখনও ন্যাবা হয়নি ।
শুধু বি জে পি করার অপরাধে তাঁদের চোখের সামনে বাড়ির জমি থেকে কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সমস্ত দামী গাছ । ফেরত নেওয়া হয়েছে আমফানের পাওয়া ২০ হাজার টাকা । পুলিশে জানানোর অপরাধে ১৮,৬০০ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে । শেষে প্রতি সপ্তাহে ২০ হাজার টাকার জরিমানা মেটানোর দাবী না মানতে পেরে ১০ ই মে বাড়ি জমি সব ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে নিরুদ্দেশে, সপরিবারে । হেমনগর কোস্টাল থানা সামান্য সাহায্যের মুখ টুকুও দেখায়নি পরিবারটিকে । সেই সংবাদ অনেক বড় চ্যানেলের ‘আত্মমর্যাদা বোধ সম্পন্ন সাংবাদিক’রা পেয়েও প্রচার করেননি । তার কারণ তাঁদের এখনও ন্যাবা হয়নি । ধরে নিলাম ।
ন্যাবা হয়নি তাঁদেরও যাঁরা হিঙ্গেলগঞ্জের পরিতোষ মৃধা কিমবা দুলদুলি অঞ্চলের মনোতোষ পাত্র দের রোমহর্ষক নৃশংস অত্যাচারের খবর পেয়েও চেপে গেছেন । খালের ধারে ঘর তৈরি করে যেখানে গনধোলাই হয় প্রতি রাতে নিয়ম করে । সংবাদ পেয়েও সে পথে যাননি সাংবাদিকরা । কারণ তাঁদের এখনো ন্যাবা অর্থাৎ জন্ডিস হয়নি বলে ।
ঘাটালে শঙ্কর দলুইয়ের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক কুমারেশ চানক বেধড়ক মার খান । সাংবাদিক মার খাওয়ার খবরও বাংলার সংবাদ মাধ্যম চেপে যায় । কারণ সেই জন্ডিস না হওয়া ।
এমন হাজার হাজার ঘটনা হারিয়ে যায় এই বাংলায় রোগ না হওয়ার কারণে ।
এই নতুন করে বোধোদয়ের মধ্যে আজ আরও দুটো খবর ।
১. যুবরাজকে চড় মারা সেই দেবাশিস আচার্য অজ্ঞাত কারণে মারা গেলেন । দেবাশিস তৃণমূল থেকে বি জে পি তে গিয়েছিলেন কিছুকাল আগে ।
খুন কি না জানা যেত জন্ডিস আক্রান্ত সংবাদ মাধ্যম থাকলে ।
২. গুসকরা আউশগ্রামের বি ডি ও অরিন্দম মুখোপাধ্যায় প্রকাশ্যে প্রণাম ঠুকেছেন অনুব্রত মন্ডলকে ।
ভাবেননি জন্ডিস আক্রান্ত এক রিপোর্টার বসে আছে তা ভাইরাল করার জন্য ।
জন্ডিস থাকা না থাকার তফাতটা আজ এভাবেই নতুন করে বুঝলাম মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ও ব্যাখ্যায় । ধন্যবাদ মুখ্যমন্ত্রী । আপনি এভাবেই আমাদের শিক্ষিত করে যান ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)