এই মহাবিশ্বে আমরা কি একা? বহুদিন ধরে এই প্রশ্ন জেগেছে বিশ্ববাসীর মনে। এখনও এই প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া সম্ভব হয়নি। বিজ্ঞানীরা ছায়াপথে (galaxy) প্রাণ থাকতে পারে এমন অঞ্চলের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সম্প্রতি তাঁরা এমন একটি আবিষ্কার করেছেন যা তোলপাড় ফেলে দিয়েছে বৈজ্ঞানিক মহলে। গ্রহ নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন (Planet Hunters) দুটি এক্সোপ্ল্যানেটের (exoplanets) সন্ধান পেয়েছে যেগুলি সূর্যের মতো একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে।
নতুন এই গবেষণা রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির (Royal Astronomical Society) নোটিসে প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রজেক্টে নেতৃত্ব দিচ্ছে নাসা (NASA)। এক ডজনের বেশি বিজ্ঞানী এই প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ওই নক্ষত্রের নাম HD 152843 । পৃথিবী সেটি থেকে প্রায় ৩৫২ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। এর ভর সূর্যের ভরের সমান। তবে সূর্যের চেয়ে এটি প্রায় ১.৫ গুণ বড় এবং উজ্জ্বল। এই বিশাল নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে দুটি গ্রহ। সৌরজগতের সঙ্গে তুলনা করলে এরা বুধের কক্ষপথের মতো দূরত্বেই পরিক্রমা করছে। প্ল্যানেট বি (Planet b) পৃথিবীর চেয়ে ৩.৪ গুণ বড়। এর আকার অনেকটা নেপচুনের মতো। ১২ দিনে এটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে। অন্যদিকে প্ল্যানেট সি-র (Planet c) দূরত্ব একটু বেশি। এটি ১৯ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে HD 152843 কে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবী থেকে এটি ৫.৮ গুণ বড়।
ট্রানজিট এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্য়াটেলাইট বা TESS এর সাহায্যে এক মাস ধরে নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা পর্যবেক্ষণ করার পর এই আবিষ্কারের কথা সামনে আনা হয়। পর্যবেক্ষণের সময় নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা বিভিন্ন রকম হয়। যতবারই স্যাটেলাইটের ফিল্ডে গ্রহগুলি আসে তখনই এর সম্পর্কে জানা যায়। এর ফলে অনুমান করা হচ্ছে যে নক্ষত্রকে একটি মাত্র গ্রহই প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু প্রকল্পের বিজ্ঞানীদের বেশিরভাগের মতে নক্ষত্রের চারদিকে অন্তত দুটি গ্রহ প্রদক্ষিণ করছে। এদিকে, দুটি গ্রহের উপস্থিতি এবং তথ্যের যথার্থতা নিশ্চিত করতে বিজ্ঞানীরা উত্তর গোলার্ধে স্পেনের হাই অ্যাকিউরেসি রেডিয়াল ভেলোসিটি প্ল্যানেট সার্চার (HARPS-N) বসিয়েছে। এছাড়া লোয়েল অবজারভেটরিতে (Lowell Observatory) এক্সট্রিম প্রিসিশন স্পেকট্রোমিটারের (Extreme Precision Spectrometer) বসানো হয়েছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরটের ছাত্রী নোরা আইসনার বলেছেন, “আমরা পৃথিবীর মতো গ্রহের অনুসন্ধানের দিকে ধীরে ধীরে পা বাড়াচ্ছি। আমরা যা জানতে পারছি তার সীমানা ক্রমশ বাড়ছে।” বিজ্ঞানীরা এই দুটি গ্রহের ভর নিশ্চিত করতে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন।